বৃহস্পতিবার (১৮ মে) উৎসবের দ্বিতীয় দিন গেলাম কানসৈকতের দিকে। এদিন আমাদের পাশের দেশ ভারতের প্যাভিলিয়নের উদ্বোধন হয়। একই সারিতে অনেক দেশের প্যাভিলিয়ন দেখি। সবই সরকারি উদ্যোগে। বাংলাদেশের তথ্য, সংস্কৃতি আর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের কবে যে ‘কান’ নিয়ে চোখ খুলবেন কে জানে!
মার্শে দ্যু ফিল্মেও বাংলাদেশের কোনও স্টল নেই। তবে বাংলাদেশি ঠিকই পেলাম। কফি পান আর আড্ডাস্থলে এগোতেই দেখলাম ‘গেরিলা’র কারিগর নাসিরউদ্দীন ইউসুফ বসে আছেন। তিনি জানালেন লন্ডন থেকে এসেছেন। বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা বললেন এই নির্মাতা।
আড্ডার মধ্যে তরুণ নির্মাতাদের খবর নিয়ে হাজির হলেন ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ইনিশিয়েটিভ অব বাংলাদেশের (আইএফআইবি) সভাপতি সামিয়া জামান। কুশল বিনিময়ের পরই জানালেন, বাংলাদেশ থেকে আসা তরুণ দুই নির্মাতা আবিদ মল্লিক ও লুবনা শারমিন এখন প্রডিউচার্স ওয়ার্কশপে আছেন। ‘ঢাকা টু কান’ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এসেছেন তারা। বাংলাদেশের উদীয়মান চলচ্চিত্রকারদের সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে কান উৎসবের ৭০তম আসরে চালু হয়েছে এই প্রকল্প। তিন দিনের এই কার্যক্রমে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ চলচ্চিত্র পরিচালক, চলচ্চিত্র নির্বাহী ও চলচ্চিত্র শিল্পের প্রভাববিস্তারকারী ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠকের সুযোগ পাচ্ছেন আবিদ ও লুবনা।
এসব তথ্য বলার পরই সামিয়া জামান জানতে চাইলেন, ‘কাল আসছো তো?’ মুখ থেকে বেরিয়ে এলো, অবশ্যই! শুক্রবার (১৯ মে) বিকাল ৫টায় (বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা) ‘ঢাকা টু কান: অ্যা সেলিব্রেশন অব ট্যালেন্ট’ শীর্ষক পার্টির আয়োজন করছে ইন্টারন্যাশনাল ইমার্জিং ফিল্ম ট্যালেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইইএফটিএ)। কানের সাগরপাড়ের রেস্তোরাঁ প্লাজ রয়েলে অনুষ্ঠানটি হতে যাচ্ছে। এখানে অংশ নেবেন বাংলাদেশি নির্মাতারা।
এছাড়াও উৎসবে বাংলাদেশ থেকে এসেছেন স্টার সিনেপ্লেক্সের চেয়ারম্যান মাহবুব রহমান। আলোকচিত্রী হয়ে বিভিন্ন দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করছেন প্যারিস প্রবাসী নির্মাতা আহামেদ ফরিদ।
সাংবাদিক ইকবাল হোসাইন চৌধুরী এবার আছেন নির্মাতা হিসেবেও। কানের শর্ট ফিল্ম কর্নারে দেখানো হবে তার ‘ঢাকা ২.০’। একই কর্নারে থাকছে বাংলাদেশের আরেক ছবি জসিম আহমেদের ‘দাগ’। তিনিও আছেন কানে।
এদিকে আয়োজকদের আমন্ত্রণে এসে পৌঁছেছেন ‘শুনতে কি পাও’খ্যাত নির্মাতা কামার আহমাদ সাইমন। তার সঙ্গী হয়েছেন প্রযোজক সারা আফরীন। কামারের ‘ডে আফটার টুমরো’ নামের একটি চিত্রনাট্য নির্বাচিত হয়েছে কানের সিনেফন্ডেশন বিভাগের এল’অ্যাটেলিয়ার কার্যক্রমের ১৩তম আসরে।
এবার বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১৪টি দেশের ১৫টি চিত্রনাট্য নির্বাচিত হয়েছে এল’অ্যাটেলিয়ারে। এর মধ্যে ভিয়েতনামের আছে দুটি। কামার আহমাদ সাইমনের ‘ডে আফটার টুমরো’সহ এসব চিত্রনাট্যকে বিশেষভাবে সম্ভাবনাময় ও আশাব্যঞ্জক মনে করছেন আয়োজকরা।
এল’অ্যাটেলিয়ারের আমন্ত্রণ পাওয়ার সুবাদে নিজের নতুন ছবিটির চিত্রায়ন শুরু ও শেষ করার জন্য প্রযোজক ও কার্যকরী অংশীদার পাবেন বলে আশা করছেন ‘শুনতে কি পাও’খ্যাত কামার আহমাদ সাইমন। কারণ এতে অংশগ্রহণকারী নির্মাতারা তাদের ছবির কাজ যেন দ্রুততার সঙ্গে শেষ করতে পারেন, সেজন্য আন্তর্জাতিক সহ-প্রযোজনার বাজার নিশ্চিত করা হয়।
আয়োজকরা বলছেন, নির্বাচিত চিত্রনাট্যগুলোর নির্মাতাদের ছবিতে যেন বিভিন্ন দেশের সংশ্লিষ্টরা বিনিয়োগে আগ্রহী হন সেজন্য শুক্রবার (১৯ মে) শুরু হয়ে ২৫ মে পর্যন্ত হবে অধিবেশন।
২০০২ সালে তারেক মাসুদের ‘মাটির ময়না’র ফিপরেস্কি পুরস্কার জয় ছাড়া কানে বাংলাদেশের অর্জন তেমন নেই। গত বছর অবশ্য তৌকীর আহমেদের ‘অজ্ঞাতনামা’ এবং অমিতাভ রেজার ‘আয়নাবাজি’ অংশ নিয়েছিল মার্শে দ্যু ফিল্ম বিভাগে। এ উপলক্ষে ছবি দুটির সংশ্লিষ্টরা এসেছিলেন।
গতবারের মতো এবারও ফরাসিদের রাজত্বে বাংলা ভাষায় কথা বলার মতো অনেক মানুষ পেয়েছি। সব মিলিয়ে দক্ষিণ ফ্রান্সের সাগরপাড়ের শহরে বসে এবার বাংলাদেশি চলচ্চিত্র নিয়ে লেখার মতো উপলক্ষ্য কমবেশি মিলছে। শুধু লাল-সবুজ পতাকাটাই নেই!