কক্ষে ঢুকে চেয়ারে ব্যাগ রেখে এসে বসলাম মঞ্চের সামনে, যেখানে ‘নিকোল কিডম্যান’ নাম লেখা। সকাল ১১টায় কান উৎসব পরিচালক থিয়েরি ফ্রেমো নিয়ে এলেন হলিউড নন্দিনীকে। তিনি ঢুকতেই বিভিন্ন দেশের সাংবাদিকরা সমস্বরে বলে উঠলেন, ‘হ্যালো নিকোল’। তার মুখ থেকে তখন শুনলাম ‘বো জো’। ফরাসি এই শব্দের বাংলা হলো ‘শুভ সকাল’।
পরনে ময়ূর অনুপ্রাণিত গাউন। ঠোঁটে ঝলমলে লাল লিপস্টিক। পোশাকের সঙ্গে মানানসই জলপাই রঙের হিল। বাঁ-হাতে মোটা ব্রেসলেট, অনামিকায় স্বামী কিথ আরবানের দেওয়া আংটি। ডানহাতে ঘড়ি। কানজোড়ায় নীল রঙা দৃষ্টিনন্দন দুল। সব মিলিয়ে ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি উচ্চতার এই স্বর্ণকেশী দেখে মুগ্ধতা যেন কাটে না।
কান উৎসবের প্রতিযোগিতা বিভাগে নির্বাচিত ‘দ্য কিলিং অব অ্যা স্যাক্রেড ডিয়ার’ ছবির সংবাদ সম্মেলনে পুরোটা সময় নিকোল কিডম্যানকে অপলক দেখছিলাম। ছবিটির গল্প প্রখ্যাত সার্জন স্টিফেন মারফিকে ঘিরে। এ চরিত্রে অভিনয় করেছেন কলিন ফেরেল। তবে কানে আসেননি তিনি। কাহিনিতে স্টিফেন এক তরুণকে দত্তক নেন। কিন্তু একসময় এই ছেলেটাই মারফির বিরুদ্ধে দাঁড়ায়। স্টিফেনের স্ত্রী আনা মারফির ভূমিকায় দেখা গেছে নিকোল কিডম্যানকে। তিনি পেশায় চক্ষু চিকিৎসক।
কান উৎসবের ৭০তম আসরের অন্যতম দিক হলো নিকোল কিডম্যানের তিনটি ছবি ও একটি টিভি সিরিজের প্রদর্শনী। ফলে বিশ্ব সিনেমার এই মহাযজ্ঞে বেশিরভাগ আলো থাকছে তাকে ঘিরেই। এ প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, ‘এমনটা হবে কখনও ভাবিনি।’
সঞ্চালক অঁরি বেহার সংবাদ সম্মেলনের ইতি ঘোষণা করতেই দৌড়ে গেলাম নিকোল কিডম্যানের কাছে। বাড়িয়ে দিলাম বাংলা ট্রিবিউনের নোটপ্যাড ও কলম। তিনি মুখে হাসি রেখে তাকিয়ে অটোগ্রাফ দিলেন। তখন বড়সড় জটলা বেঁধে গেছে। ধাক্কাধাক্কির মধ্যে সেলফিও তুললাম। পরে তাকিয়ে দেখলাম যা উঠেছে একেবারে মন্দ নয়!
সংবাদ সম্মেলন থেকে বের হতেই কানে এলো ‘নিকোল নিকোল’ সোরগোল! ঝাঁকে ঝাঁকে আলোকচিত্রী আর ক্যামেরাম্যান দাঁড়িয়ে কাছে ডাকছেন তাকে। কিন্তু নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে হনহন করে হেঁটে লিফটে ঢুকে গেলেন তিনি।
রবিবার (২১ মে) স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৮টায় গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়েরে প্রতিযোগিতা বিভাগে নির্বাচিত ছবিটির উদ্বোধনী প্রদর্শনী হয়। একই সময়ে সাল দুবুসিতেও দেখা গেছে এটি। দুপুর দেড়টা ও সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়ের এবং সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় অলিম্পিয়া ওয়ানে আরও তিনবার প্রদর্শিত হয় ‘দ্য কিলিং অব অ্যা স্যাক্রেড ডিয়ার’।
গ্রিসের নির্মাতা ইওরগোস লানটিমস এর আগে আরও দু’বার কানে এসেছিলেন নিজের ছবি নিয়ে। প্রতিবারই একটি করে পুরস্কার নিয়ে গেছেন ঘরে। ২০০৯ সালে ‘ডগটুথ’ ছবির জন্য আনসার্টেন রিগার্ড বিভাগে এবং দুই বছর আগে ‘দ্য লবস্টার’-এর সুবাদে জুরি প্রাইজ জেতেন তিনি।
এছাড়া স্বর্ণপাম জয়ী জেন ক্যাম্পিয়নের টিভি ড্রামা ‘টপ অব দ্য লেক’-এর দ্বিতীয় মৌসুমের একটি পর্বের প্রদর্শনীও হবে কানে।
/জেএইচ/এমএম/