কান চলচ্চিত্র উৎসবের ৭০তম আসরে সিনেফন্ডেশন আয়োজিত লা’এতেলিয়ারের কার্যক্রমে আয়োজকদের আমন্ত্রণে এসেছেন বাংলাদেশি নির্মাতা কামার আহমাদ সাইমন। সিনেমার এই বৈশ্বিক আসরে তার আমন্ত্রণ পাওয়া বাংলাদেশের জন্য গৌরবের। কানসৈকতে ভিলেজ ইন্টারন্যাশনালের ২২৭ নম্বর প্যাভিলিয়নে আমন্ত্রিত নির্মাতারা বসে বিভিন্ন দেশের ফিল্ম প্রফেশনালদের সঙ্গে গত কয়েকদিন ধরে চিন্তাভাবনার আদান-প্রদান করছেন। এখানেই এক ফাঁকে বাংলা ট্রিবিউনের কাছে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন কামার আহমাদ সাইমন-
কানসৈকতে কামার আহমান সাইমন
বাংলা ট্রিবিউন: কানে আপনার এই নিয়ে দ্বিতীয়বার অংশগ্রহণ, এবার কানের আনুষ্ঠানিক নিমন্ত্রণ পেয়েই এসেছেন...
কামার আহমাদ সাইমন: হ্যাঁ, প্রথমবার এসেছিলাম ২০১৪ সালে ‘শিকলবাহা’র চিত্রনাট্যের ‘ল্য ফ্যাব্রিক সিনেমা দু মুন্দে’র ১০ জন উদীয়মান নির্মাতার একজন হয়ে। আর এইবার কানের আনুষ্ঠানিক আয়োজন লা’এতেলিয়ারের ১৫ জন গুরুত্বপূর্ণ নতুন পরিচালকের একজন হয়ে। আমার নির্মিতব্য ‘ডে আফটার টুমরো’র চিত্রনাট্যের জন্য।
বাংলা ট্রিবিউন: কান উৎসবের সিনেফন্ডেশনের লা’এতেলিয়ার কার্যক্রমে নিজে থেকে অংশ নেওয়া যায় না। ‘ডে আফটার টুমরো’র চিত্রনাট্য আয়োজকরা পেলেন কোথায়?
কামার আহমাদ সাইমন: গত বছর লোকার্নো চলচ্চিত্র উৎসবের ‘ওপেন ডোর্স হাব’-এ প্রতিযোগিতায় ছিল ‘ডে আফটার টুমরো’র চিত্রনাট্য। সেখানে নতুন নির্মাতার খোঁজে গিয়েছিলেন লা’এতেলিয়ারের পরিচালক। ওর কাজই হলো সারা দুনিয়ার ফেস্টিভ্যাল ঘুরে ঘুরে গুরুত্বপূর্ণ নির্মাতা আর তাদের সম্ভাবনাময় চিত্রনাট্য খুঁজে বের করা।
বাংলা ট্রিবিউন: ২০০২ সালে তারেক মাসুদের ‘মাটির ময়না’ ডিরেক্টর’স ফোর্টনাইটে নির্বাচিত হয়ে ফিপরেস্কি পুরস্কার জিতেছিল। গত ১৫ বছরে এ উৎসবে অফিসিয়াল অর্জন বলতে এটাই ছিল সবেধন নীলমণি। এ বছর আয়োজকরা আপনাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এটা তো বাংলাদেশের জন্য বিরাট গৌরবের। কেমন লাগছে?
কামার আহমাদ সাইমন: ভীষণ চাপ বোধ করছি। আমি আসলে শুধু কাজটাতে মনোযোগ রাখতে চাই, আর বাকি সব ভুলে যেতে চাই। প্রকৃত শিল্পীর জন্য যে কোনও অর্জনই কিন্তু ক্ষতিকর, অর্জন মানেই ক্ষয় আর হারিয়ে যাওয়ার ভয়!
কামার আহমাদ সাইমন: এটা খুব মজার অভিজ্ঞতা ছিল। কারণ এতদিন জগতসেরা সব নির্মাতাদের ছবি দেখেছি কানের অফিসিয়াল ফটোকলে। কিন্তু জায়গাটা কোথায় জানা ছিল না। গিয়ে দেখি কানের মূল ভবনের ছাদে সবুজ মল, একপাশে ছোট্ট সামিয়ানার নিচে টেলিভিশন ইন্টারভিউয়ের ব্যবস্থা, অন্যদিকে ফটোকলের বিশাল ক্যানোপি। দেখেই খুব চেনা চেনা লাগলো... একদিন আগেই এখানে দুনিয়া কাঁপানো ৭০ জন জীবন্ত কিংবদন্তি পরিচালক ছবি তুলে গেছেন একসঙ্গে, সেই ক্যানোপিতে এবার আমাদের ১৫ জনের অফিসিয়াল ফটোকল... ব্যাপারটাই অন্যরকম।
বাংলা ট্রিবিউন: আপনি আয়োজকদের আমন্ত্রণে এসেছেন। এছাড়া বাংলাদেশ থেকে গত বছরের মতো এবারও নিজ উদ্যোগে অনেকে কানে এসেছেন। শর্ট ফিল্ম কর্নারেও আছে আমাদের দুটি ছবি। এগুলোকে ইতিবাচকভাবে দেখেন?
কামার আহমাদ সাইমন: অবশ্যই ইতিবাচকভাবে দেখি। এর প্রভাব নিশ্চয়ই পড়বে দেশের তরুণ চলচ্চিত্র প্রেমিকদের মধ্যে। শুধু ভয় হয়, আমরা যাতে দেখতে এসেই হারিয়ে না যাই। মনে রাখতে হবে, এটা শুধু দেখা বা দেখানোর জায়গা না। এটা কাজের জায়গা, বিশ্ব চলচ্চিত্রের তীর্থভূমি কান। এখানে সারা দুনিয়ার চলচ্চিত্র বোদ্ধারা আপনাকে দেখছে, আপনার কাজের বিচারে আপনার দেশকে বিচার করছে। এখানে বিনা অর্জনে অতি উদযাপন নিজেদেরই ছোট করবে।
কামার আহমাদ সাইমন: নদী ছাড়া কি বাংলাদেশ হয়? আমি ভাই সহজ গল্পের নির্মাতা। যদিও ‘সহজ কথা যায় না বলা সহজে’। কিন্তু আমি কসমেটিক সিটিস্কেপের কন্ট্রাইভড গল্প বুঝি না। আর আমি যা বুঝি না, আমি তা বানাই না।
বাংলা ট্রিবিউন: উৎসবের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে আপনার নির্বাচিত চিত্রনাট্য ‘ডে আফটার টুমরো’র বিবরণ দেখলাম। এখানে এ ছবিটিকে আপনি নিজের নন-ফিকশন জল ট্রিলজি বলছেন।
কামার আহমাদ সাইমন: ‘শুনতে কি পাও!’ ছিল এই ‘জল-ত্রয়ী’ বা ‘ওয়াটার-ট্রিলজি’র প্রথম কাজ। দ্বিতীয়টা ‘ডে আফটার টুমরো’। ‘শুনতে কি পাও!’ ফিকশন নাকি ডকুমেন্টারি এটা নিয়েও ব্যাপক বিতর্ক হয়েছিল। আমি কিন্তু বিতর্কটা খুব উপভোগ করি। নির্মাতা হিসেবে আমি স্বাধীন, আমার গল্প বলার জন্য যে কোনও কায়দা ব্যবহার করতে পিছপা হই না। দর্শক ছাড়া আমার আর কোনও দায় নাই।
বাংলা ট্রিবিউন: ‘শুনতে কি পাও!’ নিয়ে কান উৎসবে অংশ নিলে আরও বড় সাফল্য পেতেন বলে মনে হয়?
কামার আহমাদ সাইমন: এই কথাটা প্রায়ই শুনতে হয়, বিশেষ করে কানে এলে। কিন্তু আমি এইভাবে ঠিক দেখি না ব্যাপারটা। সফলতার চাইতে স্বার্থকতা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে আপনি যদি একজন সৎ এবং স্বাধীন নির্মাতা হন, কান-বার্লিন-লোকার্নো সবই আপনার কাছে এক। নির্মাতা হিসেবে এই তিনটাতেই আনুষ্ঠানিক নিমন্ত্রণ পেয়েছি, এই অল্প সময়ের চলচ্চিত্র যাত্রায় এর চেয়ে বেশি চাওয়াটা অন্যায় হবে।
বাংলা ট্রিবিউন: আমরা কি আশা করতে পারি, ‘ডে আফটার টুমরো’ আগামী বছর কান উৎসবে নির্বাচিত হবে?
কামার আহমাদ সাইমন: 'ডে আফটার টুমরো’র শুটিং শুরু হতেই আগামী বছর হয়ে যাবে! তাছাড়া কাজটাও বেশ জটিল আর সময়সাপেক্ষ, আমারও কোনও তাড়া নেই! পৌঁছানোর চাইতে নির্মাণের যাত্রাটা অনেক বেশি আনন্দের। আমি সেটা তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করতে চাই।
/জেএইচ/এমএম/