কানের ডায়েরি- চার

দেখা নয়, লেখালেখিরও তীর্থস্থান কান!

জনি হকের কানের ডায়েরি...প্রতিদিন সকালে পালে দো ফেস্টিভাল ভবনের সামনে এলেই চোখে পড়ে সাইকেলে চড়ে তরুণীরা ম্যাগাজিন বিলি করছেন। সবই কান চলচ্চিত্র উৎসবকে ঘিরে বিশেষ সংস্করণ। ৭০তম আসরেও হলিউড রিপোর্টার, ভ্যারাইটি, গ্রাজিয়া, স্ক্রিনসহ বিখ্যাত সংবাদ সংস্থাগুলো বিভিন্ন প্রকাশনা বের করছে।

এত এত ম্যাগাজিন। তার ওপর বেশিরভাগই কম করে হলেও ১০০ পাতার! গ্লসি পেপারের। সব তো আর সঙ্গে রাখা যায় না। এমনিতেই ল্যাপটপ, প্রতিদিনের প্রদর্শনীর সময়সূচি, মোবাইল-চার্জারসহ ব্যাগের ওজন কম না।
উৎসবের মূলকেন্দ্রে ঢুকে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে গেলে মার্শে দ্যু ফিল্ম। ওখানেই শর্ট ফিল্ম কর্নার। এসকেলেটরের উপর উঠলে প্রেস রুম একদিকে। উল্টো পাশে বিনামূল্যে কফি পানের জায়গা। দোতলা থেকে তিনতলায় এসকেলেটরেও যাওয়া যায়। আছে সিঁড়িও। দোতলা থেকে তিনতলা পর্যন্ত এদিক-ওদিক সবখানে বিছানো আছে লালগালিচা। গত দু’বার এসে এটা দেখিনি।
18685573_10154646159781847_469560369_nআরও একটা নতুন যুক্ত হয়েছে এবার। ভবনের চতুর্থ তলায় উৎসবের উদ্বোধনী দিনে চালু হয়েছে সাংবাদিকদের ছাদ। দোতলায় ওয়াইফাই জোনের মতো এখানেও ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করার সুব্যবস্থা আছে। সঙ্গে সৌজন্য হিসেবে দেওয়া হচ্ছে চিপস, অরেঞ্জ জুস, পানি, বাদাম, বিস্কুট। কফি তো আছেই। বিশাল জায়গা। ছায়ায় বসেও কাজ করা যায়। আবার খোলা আকাশের নিচে গিয়ে সাগরপাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করা যাচ্ছে। যেদিক তাকাই চোখে পড়ে দামি দামি ইয়ট আর স্পিডবোট। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা অবধি খোলা থাকে এই সাজানো ছাদ।

ফলে কানে এসে শুধু সিনেমা কিংবা সমুদ্র শহরের রূপ দেখাই নয়, লেখালেখি কিংবা সাংবাদিকতার জন্যেও তীর্থস্থান এটি। 
18685606_10154646155311847_663269467_nএবার এসে দেখলাম, সংবাদ সম্মেলন কক্ষের চেয়ারগুলোও বদলেছে। নতুনগুলো আরও বেশি আরামদায়ক। সাংবাদিকরা যেন বিশাল পরিসরের এ উৎসবের গুরুত্বপূর্ণ কোনও কিছু থেকে বাদ না পড়েন, সেজন্য তিনতলায় তাদের জন্য আছে প্রেস লকার। সেখানে প্রতিদিনই দুই-তিনবার করে কোনও না কোনও প্রকাশনা কিংবা উৎসবের আপডেট জমা হয়। লকার থেকে সেগুলো না নিলে নতুন আপডেট আর দেওয়া হয় না।

ছাদ থেকে বের হয়ে সোজা হাঁটলে বিখ্যাত ব্যক্তিদের সোনালি স্থিরচিত্র চোখে পড়ে। এই জায়গার নাম দেওয়া হয়েছে ‘টোয়েন্টি ফোর ফ্রেমস’। উৎসবের তিন কাণ্ডারী পিয়েরে লেসকিউ, গিলেস ইয়াকব ও থিয়েরি ফ্রেমোর চোখে গত ৬৯ বছরের মাইলফলক মুহূর্তগুলোর ছবির প্রদর্শনী হচ্ছে এখানে।

18741283_10154646155286847_1843814164_nবিভিন্ন দেশ থেকে যেসব আলোকচিত্রী সাংবাদিক এসেছেন, তাদের জন্য এ বছর চালু হয়েছে বিশেষ পুরস্কার। ৭০তম আসরের সবচেয়ে ঘটনাবহুল ও অন্যরকম মুহূর্ত যিনি বন্দি করবেন ক্যামেরায়, তাকে সমাপনী আয়োজনে দেওয়া হবে পুরস্কারটি।

উৎসবের ম্যানেজার ফেব্রিস অ্যালার্ডের সঙ্গে কুশল বিনিময়ের সময় জানতে পেরেছি, বিভিন্ন দেশের সাংবাদিকরাই কান উৎসবের বৈশ্বিক স্বীকৃতি পাওয়ার ক্ষেত্রে অন্যতম চাবিকাঠি। আয়োজকদের অ্যাক্রেডিটেশন (ব্যাজ বা পরিচয়পত্র) পেয়েছেন এবার মোট ৪৫ হাজার মানুষ। এর মধ্যে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের সংবাদকর্মীই আছেন সাড়ে চার হাজার।18741176_10154646155241847_73158396_n

সাংবাদিক ছাড়াও কানের ফিল্ম বাজারে প্রতিবারের মতো এবারও অংশ নিচ্ছেন ১২ হাজার ব্যক্তি। পালে দো ফেস্টিভাল ভবনের অভ্যন্তরে এবং সাগরপাড়ের কিছু অংশে এই বাজার বসেছে। উৎসব চলাকালে দক্ষিণ ফ্রান্সের শহর কানে জনসংখ্যা ৭৪ হাজার থেকে বেড়ে দাঁড়ায় দুই লাখে। তাই কান এখন সরগরম!

ছবি: আহামেদ ফরিদ

চলবে...
/জেএইচ/এমএম/