মেয়র ও বিচারকদের সঙ্গে ফরাসি খাবার




18718446_10154648275846847_15485587_nপালে দো ফেস্টিভাল ভবনের তিনতলায় প্রেস লকারে গত ২৪ মে একটি চিঠি পেলাম। তাতে লেখা, উৎসবে আমন্ত্রিত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাংবাদিকের সম্মানে মধ্যাহ্নভোজ অনুষ্ঠান আয়োজন করেছেন কান শহরের মেয়র ডেভিড লিসনার্ড। গত দু’বারও এই আমন্ত্রণ এসেছিল। নিয়ম অনুযায়ী লকারে আসা চিঠিটি প্রেস অফিসে জমা দিয়ে মিললো নিমন্ত্রণের কার্ড।
দক্ষিণ ফ্রান্সের শহর কানের ঐতিহ্যবাহী লে শুকে নামক জায়গায় মেয়রের কর্মস্থল পালে দো লা ক্যাস্তর। এখানেই শুক্রবার (২৬ মে) দুপুর ১টায় (বাংলাদেশ সময় বিকাল ৫টা) উৎসবের ৭০তম আসরের দশম দিনে দুপুরের খাবার খাওয়ার সুযোগ পেলাম তৃতীয়বারের মতো।


18716774_10154648286391847_676135472_nহোটেল দি ভিলের সামনে দাঁড়িয়ে ওপরে তাকালে চোখে পড়ে পালে দো লা ক্যাস্তরের আভিজাত্য। মূল সড়ক থেকে উঁচু পথে হেঁটে যেতে হয় সেখানে। হাঁটলে মনে হয় কেউ পেছন থেকে আটকে রাখছে! সেই পথ শেষ হলে আছে সিঁড়ি। মিনিট তিনেক ধরে ওঠার পর কানে ভেসে এলো বাদ্যযন্ত্রের সুর।
পালে দো লা ক্যাস্তরের ফটকের মুখে অতিথিদের জন্য প্লাস্টিকের গ্লাসে পরিবেশন করা হচ্ছে রেড ওয়াইন, অরেঞ্জ জুস ও পানি। যে যেটা খুশি নিচ্ছেন। অতিথিদের বরণ করে নিতে ফটকের ভেতরে দু’পাশে বাহারি সাজে দাঁড়িয়ে আছেন বয়স্ক মহিলারা। আরেকটু ভেতরে গিয়ে চোখে পড়লো সুর তুলছেন ব্যান্ড পার্টির সদস্যরা। ঢোল বাজাচ্ছে এক শিশু।
18718187_10154648283191847_1006199625_n
অন্যপাশে মেয়রের দেওয়া নিমন্ত্রণপত্র জমা নিয়ে অতিথিদের দেওয়া হচ্ছে অলিভ অয়েল। বোতলের বাইরে ৭০তম কান উৎসবের স্মারক। অলিভ অয়েল নিয়ে সোজা হেঁটে গেলাম। ততক্ষণে টেবিলে বসে খাবারের স্বাদ নিতে শুরু করেছেন অতিথিরা রেড ওয়াইন, পিঙ্ক ওয়াইন, পানি, বাগেল, বাটার আগে থেকেই পরিবেশন করে রাখা হয়েছে। বুফেতে পরিবেশন করা হয়েছে সামুদ্রিক মাছ, সবজি, ডিম ও মিষ্টান্ন।18762331_10154648275896847_1239430465_n

দেখতে দেখতে পৌঁছে গেলাম পালে দো লা ক্যাস্তরের একেবারে সামনে। সেখানে ব্যারিকেডের একপাশে জটলা বেঁধে দাঁড়িয়ে আছেন উৎসুক সাংবাদিকরা। একটি টেবিলের সামনে ব্যারিকেড দেওয়া। এখানে বসে খাবেন ৭০তম কান চলচ্চিত্র উৎসবের মূল প্রতিযোগিতা বিভাগের বিচারকরা। আমন্ত্রিত সাংবাদিকদের বাইরে একমাত্র তারাই পেয়েছেন এদিনের মধ্যাহ্নভোজের নেমন্তন্ন। তারা আসবেন আসবেন করে অপেক্ষা করছি।
18741158_10154648286146847_892039035_nএই ফাঁকের সাগরপাড়ের শহরটির সৌন্দর্য উপভোগ করে নিলাম। পালে দো লা ক্যাস্তর ছাড়া কানের আর কোথাও থেকে একসঙ্গে এতকিছু দেখার সুযোগ নেই। এখানে দাঁড়িয়ে শহরের প্রায় পুরোটাই দেখে ফেলা যায়!
নীল আকাশের নিচে একপাশে সাগরের নীল জলরাশি। তীরে অনেক ইয়ট আর স্পিডবোট। সাগরের অন্য পাশে উঁচু উঁচু পাহাড়। তার মধ্যেই ঘর-বাড়ি, রিসোর্ট, হোটেল। এই নয়নাভিরাম সৌন্দর্য দেখলেই মন জুড়িয়ে যায়।
18718582_10154648285831847_851787593_nএর মধ্যে স্প্যানিশ সিনেমার মাস্টার পেদ্রো আলমোদোভারের নেতৃত্বে এসে হাজির মার্কিন অভিনেতা উইল স্মিথ, মার্কিন অভিনেত্রী জেসিকা চ্যাস্টেইন, চীনা অভিনেত্রী ফ্যান বিংবিং, ইতালিয়ান পরিচালক পাওলো সরেন্তিনো, ফরাসি অভিনেত্রী-গায়িকা আনিয়েস জাউই, জার্মান নারী পরিচালক মারেন আদে, দক্ষিণ কোরীয় চলচ্চিত্রকার পার্ক চ্যান-উক ও অস্কারজয়ী ফরাসি সংগীত পরিচালক গ্যাব্রিয়েল জারেদ।
18718305_10154648276171847_520826889_nতাদের মধ্যে হলিউড তারকা উইল স্মিথকে নিয়েই উন্মাদনা দেখা গেলো বেশি। তিনিও পালে দো লা ক্যাস্তরে ঢুকে কয়েকজন সাংবাদিকের সঙ্গে হাত মেলালেন, অটোগ্রাফ দিলেন। এরপর ৯ বিচারক পেছনে সাগরকে রেখে একসঙ্গে দাঁড়ান ফটোসেশনে। তাদের বিচারেই চূড়ান্ত হবে উৎসবের সর্বোচ্চ পুরস্কার স্বর্ণপাম জিতবে কোন ছবি। তাদের সঙ্গে খেতে এসেছেন উৎসব পরিচালক থিয়েরি ফ্রেমো। খাওয়ার সময় ছবি তোলা বারণ। তাই সবাই একসঙ্গে খেতে বসলেন।
18716696_10154648297086847_1981489573_nপালে দো লা ক্যাস্তরের ওপরের অংশে রাখা বিশাল একটি ঘড়ি বেজে উঠলো দুপুর ২টায়। মধ্যাহ্নভোজও প্রায় শেষের দিকে। নিমন্ত্রণপত্রে কানের মেয়র উল্লেখ করেন, ‘ফরাসি রেসিপি দিয়ে বানানো খাবারের মাধ্যমে আমাদের এই শহরের অন্যরকম একটি দিক সম্পর্কে জানার সুযোগ হবে আপনাদের। বলাবাহুল্য উৎসবে অংশগ্রহণকারীদের অনেকেই এই স্বাদ পান না।’
আসলেই কথাটা সত্যি!
18741537_10154648280201847_1245350422_n/জেএইচ/এমএম/