রাজনৈতিক চাপকে উপেক্ষা করে ক্যামেরায় চোখ রেখে চলেছেন ইরানি পরিচালক মোহাম্মদ রাজুলফ। সেন্সর ছাড়পত্র না পাওয়ার ঝুঁকি, গ্রেফতার ও কারাভোগের অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও সেলুলয়েডে গল্প বলা থামাননি তিনি। এবার সিনেমার বৈশ্বিক আসর কান উৎসবের পুরস্কার উঠলো তার হাতে।
এ পুরস্কার ইরানে ছবি বানানোর ক্ষেত্রে তার সহজ হবে বলে আশাবাদী মোহাম্মদ রাজুলফ। তিনি বলেছেন, ‘ইরানকে আমি ভালোবাসি। কিন্তু মাঝে মধ্যে দেশটা হয়ে ওঠে মদ্যপ বাবার মতো। মাঝে মধ্যে সে আমাকে আঘাত করে।’
২০১০ সালে ইরানের আরেক খ্যাতিমান পরিচালক জাফর পানাহির সঙ্গে কারাদণ্ড দেওয়া হয় মোহাম্মদ রাজুলফকে। কারণ তার ছবিতে সোজাসাপ্টা গল্প বলার পরিবর্তে ইরানি সমাজ ব্যবস্থার নানাবিধ সমস্যা উঠে এসেছিল।
মোহাম্মদ রাজুলফকে কারাগারে পাঠিয়ে ইরান সরকার আশা করেছিল, এবার হয়তো তিনি কাজ থামাবেন। নয়তো অন্তত দেশটির ইসলামি শাসন ব্যবস্থার অবিচারের চিত্র গুরুত্ব দিয়ে উপস্থাপন করবেন না। কিন্তু ফল হয়েছে উল্টো! পর্দায় বারবারই রাজনৈতিক ও নৈতিক দুর্নীতির কথা বলেছেন তিনি।
৪৫ বছর বয়সী এই নির্মাতা বলেন, ‘নিরাপত্তা সংস্থার সঙ্গে আমার বিরোধের সময় ভেবেছি, বরাবরই চেয়েছিলাম এমন কিছু না হোক। কিন্তু সেটাই ঘটেছে। তবুও আমি সিনেমা বানাতে চাই। নিজের কাছে পরিষ্কার থাকতে চাই।’
যোগ করে রাজুলফ আরও বলেন, ‘রাজনৈতিক চাপ নিরসনে আন্তর্জাতিক সমর্থন আমার মতো ইরানি নির্মাতাদের জন্য সহায়ক হয়েছে।’
২০০৫ সালে মোহাম্মদ রাজুলফের প্রথম আলোচিত ছবি ‘আয়রন আইল্যান্ড’-এ দেখা গেছে, মরচে ধরা পণ্যবাহী জাহাজে অমায়িক এক শাসকের জন্য একটি পরিবার কাজ করে বেঁচে থাকে। ২০০৯ সালে ‘দ্য হোয়াইট মিডৌস’ ছবিতে তিনি দেখিয়েছেন, লবণাক্ত দ্বীপে বসবাসকারী মানুষের অশ্রু সংগ্রহ করা একজন মানুষের গল্প।
‘অ্যা ম্যান অব ইন্টেগ্রিটি’র শুটিংয়ের জন্যও অনুমতি পাননি মোহাম্মদ রাজুলফ। তবে এতে ইরানের রাজনৈতিক প্রভাব ব্যাপকভাবে থাকবে না এমন মুচলেকা দিয়ে কাজটি করতে পেরেছেন তিনি। ছবিটিতে এমন একজন সৎ মানুষের কথা বলা হয়েছে, যিনি নিজের সমস্যা সমাধানের জন্যও ঘুষের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন।
সমালোচকরা মনে করেন, ছবিটিতে ইরানের সমকালীন সমাজ ব্যবস্থার দুর্নীতি ও অবিচারের চিত্র দারুণভাবে ফুটে উঠেছে। তবে এর বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে সর্বজনীন।
এক বছর কারাভোগের পর জামিনে ছাড়া পান মোহাম্মদ রাজুলফ। তবে এখনও তার কাজে বিচার বিভাগীয় হস্তক্ষেপের ঝুঁকি সরে যায়নি। তবুও তিনি হাল ছাড়েননি। তার আশা, একদিন নিজের মাতৃভূমি ইরানেও তার ছবিগুলোর প্রদর্শনী হবে।