টকটকে লালগালিচার সাত-সতেরো

18765128_10154653644871847_232316061_oপালে দো ফেস্টিভাল ভবনের দোতলার প্রেস রুমের ব্যালকনি থেকে দিনভর সামনের ও আশপাশের চিত্র ক্যামেরাবন্দি করা যায় অনায়াসে। তবে গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়েরের সামনে গান বাজলে তা বারণ! কারণ ওখানে গান বাজছে মানে লালগালিচার আয়োজন চলছে। কেবল এই সময়ে আয়োজকদের প্রতিনিধিদের কড়া নজর থাকে কেউ যেন ওপর থেকে ছবি তুলতে কিংবা ভিডিও করতে না পারে।

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের হৃদয়ছোঁয়া গল্পের ছবিগুলোর প্রদর্শনী, ছবি কেনাবেচার কার্যক্রম, আলোচনার বাইরে কান উৎসবের সবচেয়ে বড় জৌলুস হলো ‘রেড কার্পেট’ বা লালগালিচা। গত ১৭ মে উদ্বোধনী দিন থেকে শুরু করে ১১ দিনই তামাম দুনিয়ার নামি-দামি তারকাদের পা পড়েছে এখানে। রবিবার (২৮ মে) সমাপনী দিনেও অনেকে হাঁটবেন লালগালিচায়।
লালগালিচার অনুষ্ঠান শুরুর অন্তত চার-পাঁচ ঘণ্টা আগে থেকে সামনের সড়কের ব্যারিকেডে অবস্থান নেয় উৎসুক জনতা। গত দু’বার এখানে তারা অনায়াসে আসতে পেরেছেন। এবার নিরাপত্তা জোরদার হওয়ায় লাইন ধরে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে যেতে হচ্ছে তাদের। তবুও তাদের মধ্যে ক্লান্তি নেই। কারণ বিশ্বের সামনের সারির তারকাদের এত কাছে পাওয়ার এটাই যে তীর্থস্থান!  
18767120_10154653643726847_577095434_oতাই অনেকে ব্যারিকেডের সামনে স্টিলের মই রেখে জায়গা ধরে রাখেন। তাদের আশা, ওই মইয়ে উঠে ছবি তুললে স্বপ্নের তারকাদের কেউ কেউ ধরা পড়তেও পারে ক্যামেরায়। রূপালি পর্দার তারকাদের একনজর দেখার আশায় রোদ মাথায় নিয়েই দাঁড়িয়ে থাকে আমজনতা।
গত দু’বারের মতো এবারও উদ্বোধনী দিন থেকে দেখলাম নামি ব্র্যান্ডের চকচকে গাড়ি থেকে তারকারা নামলেই সড়কের ব্যারিকেডে দাঁড়িয়ে থাকা উৎসুক মানুষজন হৈচৈ শুরু করেন। তারকার নাম ধরে ডাকতে থাকেন। সেই ডাকে অনেকে সাড়া দেন। তখন পড়ে যায় অটোগ্রাফ আর সেলফি তোলার হিড়িক।

ওদিকে তারকারা লালগালিচায় পা রাখতেই অ্যাক্রেডিটেশন পাওয়া অপেক্ষমাণ আলোকচিত্রীদের ক্যামেরার শাটার পড়ে একের পর এক। দু'পাশে সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকা বিভিন্ন দেশের এই ছবিয়ালদের তখন ঘাম ছুটে যায়! লালগালিচায় আসার জন্য তাদেরকে সময়মতো প্রেস অডিও ভিজ্যুয়াল বিভাগে নাম নিবন্ধন করতে হয় রোজ। তার ওপর সময় মেলে খুব অল্প। তারকারা ঘুরেফিরে পোজ দেন। একবার এ-পাশে। এরপর অন্য পাশে। এরপর সিঁড়ি বেয়ে গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়েরে ওঠার পরও তারা ক্যামেরায় তাকান।
লালগালিচায় ঝলমলে পোশাক পরে হাজির হয়ে থাকেন তারকা-মহাতারকারা। তাই তাদের জন্য জায়গাটি ঝকঝকে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করা হয়। প্রতিবারের মতো এবারও ২২ গজের টকটকে লাল রঙা কার্পেটটি দিনে তিনবার পরিবর্তন করা হয়েছে।
্‌া্‌াা্

এখানে তারকাদের ছবি তুলতে না পারলেও হতাশ হওয়ার কারণ নেই। এসব মুহূর্ত পাওয়ার সুযোগও রেখেছেন আয়োজকরা। তবে এগুলো বেশ দামি। পালে দো ফেস্তিভাল ভবন থেকে বেরিয়ে ডান দিকে কিছুক্ষণ হেঁটে গেলে পাওয়া যায় দোকানটি। উদ্বোধনী দিন থেকে শুরু করে গত ১১ দিনের লালগালিচার ছবি এখানে সাজানো আছে তারিখ অনুযায়ী।
ছোট আকারের একেকটি ছবির জন্য নেওয়া হচ্ছে ২৫ ইউরো। বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় আড়াই হাজার টাকা। মাঝারি আকারের প্রতিটি ছবির মূল্য ৩০ ইউরো (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় তিন হাজার টাকা)। আর একটু বড় আকারের ছবি নিতে গুনতে হয় ৪০ ইউরো করে (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় চার হাজার টাকা)। চাইলে ইমেইল, সিডি কিংবা পেনড্রাইভেও এখান থেকে লালগালিচায় তোলা তারকাদের ছবি নেওয়া যায়। এজন্য প্রতিটি ছবির বেলায় লাগবে ৩০ ইউরো।
সাগরপাড়ে ফুটপাতেও কানের লালগালিচার ছবি বিক্রি করে কেউ কেউ। এখানে অবশ্য দাম নাগালের মধ্যে, প্রতিটি ৫ ইউরো। কারণ এগুলো ছবি থেকে তুলে তারপর প্রিন্ট করা। তাছাড়া আকারেও বেশ ছোট। তবুও কিনছেন অনেকে। দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো আর কি!
18765148_10154653511821847_828281046_o/জেএইচ/এমএম/