তবে রোজ রাতে ঠিকই ভাত পেয়েছি। সারাদিন উৎসবের নানান আয়োজন আর লেখা নিয়ে ছুটোছুটির পর এই খাবার ছিল স্বস্তির।
সেন্ট রাফায়েলে লু কাশ্মির রেস্তোরাঁয় ডিনার করেছি রোজ। এখানকার ডিরেক্টর প্রবাসী বাংলাদেশি মাহবুবুর রহমান। ‘কানের ডায়েরি-এক’ পড়ে থাকলে তার সঙ্গে পরিচয় হয়ে গেছে পাঠকদের। এই রেস্তোরাঁয় নানান স্বাদের খাবার পাওয়া যায়, বেশিরভাগই পশ্চিমা পদ। তবে আমার কথা ভেবে রোজ রাতে লু কাশ্মিরে বিশেষভাবে রান্না করা হয়েছে ভাত। চমক হিসেবে তিন-চারদিন বিরিয়ানিও এসেছে টেবিলে।
ডিনার শেষে রোজ রাতে আবার লিখে পরদিন ভোরে ভোরে ঘুম থেকে উঠে ছুটতাম কানে। ১৭ থেকে ২৮ মে প্রতিদিনই ছিল এক চিত্র। উৎসব শেষে রাজ্যের সব ক্লান্তি যেন ভর করলো শরীরে। তবুও ২৯ মে দেরি করলাম না বিছানা ছাড়তে। কারণ মোনাকো-মন্টে কার্লো যাবো। মোনাকোর রাজা প্রিন্স অ্যালবার্টের বাড়ি দেখবো। সঙ্গী মাহবুব। সেন্ট রাফায়েল থেকে ট্রেনে চড়ে সেখানে যেতে লাগে পৌনে ১ ঘণ্টার একটু বেশি।
একপাশে করসিকা। যেখানে রণবীর কাপুর ও দীপিকা পাড়ুকোনের ‘তামাশা’ ছবির শুটিং হয়েছে। আরেক পাশে ইতালির সীমান্ত শহর ভান্তিমিল। এখানকার সৌন্দর্য দেখে আনমনা হয়েই কেটে গেলো অনেকটা সময়। প্রকৃতি তার ঐশ্বর্য যেন দু’হাত ভরে দিয়েছে ফরাসি সমুদ্র উপকূলকে!
বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটকরা উপভোগ করতে আসেন এখানকার সুন্দর। দূরের সৌন্দর্য কাছে নিয়ে আসার জন্য আছে দূরবীণ। সাজিয়ে রাখা গোল গোল পাথরের স্থাপনা ও ছোট্ট কামানের সামনে ছবি তুলতে ভোলেন না পর্যটকরা। ওদিকে প্রিন্স অ্যালবার্টের বাড়ির সামনে টহল দিচ্ছেন একজন নিরাপত্তা কর্মী।
বাবার মতো প্রিন্স অ্যালবার্টও বিয়ে করেছেন বিখ্যাত একজন নারীকে। তার স্ত্রী প্রিন্সেস শার্লেন হলেন একসময়ের অলিম্পিক সাঁতারু। ক’দিন আগে তারা সাত মিনিট ব্যাপ্তির একটি ভিডিওচিত্রে অংশ নেন। মোনাকোর গ্রাঁ প্রিঁ’র ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে তৈরি হয়েছে এটি। জানা গেলো, ২৫ থেকে ২৮ মে ফর্মুলা ওয়ানের উন্মাদনায় মেতেছিল এই শহরবাসী।
প্রিন্স অ্যালবার্টের বাড়ি থেকে নেমে ফেরার পথে চোখে পড়লো ফর্মুলা ওয়ানের কিংবদন্তি মাইকেল শুমাখারের একটি ভাস্কর্য। অনেকে এর সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন। স্টেশনের দিকে যেতে যেতে দেখলাম ক্যাসিনোর সামনে দামি দামি গাড়ি। কাছেই একটি গোলচক্করে বিখ্যাত সব প্রতিষ্ঠানের শো-রুম। আলেক্সান্ডার ম্যাককুইন আর শানেল ঘুরে দেখলাম। জিনিসপত্রের দাম দেখলে মাথা ঘুরে যায়! আদতে মোনাকো-মন্টে কার্লো ব্যয়বহুল শহর। দুপুরে খেতে গিয়েও বুঝতে বাকি রইলো না এটা।
৩০ মে বিকালে সেন্ট রাফায়েল স্টেশনে দাঁড়িয়ে মোনাকো-মন্টে কার্লো আর অন্তিবের সুন্দর চোখের সামনে আসছিল বারবার। এর মধ্যে এলো ট্রেন। এখানকার ট্রেনগুলোর জানালা সবসময় বন্ধ থাকে। কামরাগুলো সবই শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত। স্টেশনে থামার আগ পর্যন্ত চাইলেও ট্রেনের দরজা খোলা যায় না। সবই নিয়ন্ত্রণ করেন চালক। ট্রেনে চড়ে বুলুরিস, লু থায়া, থেক সুহ-মেহ, আগে, মান্দালিউ লা ন্যাপোল ও কান লা-বক্কা স্টেশন পেরিয়ে কানে আসার পথে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখলাম। আকাশছোঁয়া পাহাড় আর মায়াবী সাগরের রূপ যেন বেঁধে রাখতে চায়!
/জেএইচ/এমএম/