মোবাইল কোম্পানির কাছে রহমান বয়াতির পাওনা ১৬ কোটি টাকা!

একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রয়াত বাউল আব্দুর রহমান বয়াতি বিভিন্ন মোবাইল ফোন কোম্পানির কাছ থেকে প্রায় ১৬ কোটি টাকা পাওনা আছেন! বিনা অনুমতিতে এই বাউলের অসংখ্য গান দীর্ঘদিন ধরে বাণিজ্যিক ব্যবহারের কারণেই এই টাকার অংক উঠে এসেছে। এমনটাই জানালেন বাউল পরিবারের সদস্যরা।
রবিবার (৪ মার্চ) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের কনফারেন্স রুমে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ পাওনা টাকা দ্রুত নিষ্পত্তির আহ্বান জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আব্দুর রহমান বয়াতির মেজো ছেলে মো. আলম বয়াতি বলেন, ‌‘আমরা পরিবারের পক্ষ থেকে সকল মোবাইল ফোন কোম্পানি, এফএম রেডিও এবং সিডি-ভিসিডি বাজারজাতকরণ কোম্পানির প্রতি আবেদন জানাচ্ছি, আব্দুর রহমান বয়াতির গান যাতে করে আর পাইরেসি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন মোবাইল ফোন কোম্পানির কাছ থেকে পাওনা ১৬ কোটি টাকা দ্রুত প্রদানের দাবি জানাচ্ছি।’
অতি সম্প্রতি কণ্ঠশিল্পী ফরিদা পারভীন এ ব্যাপারে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন বলেও জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও জানান, ২০১৫ সালের ১৮ অক্টোবর একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে কণ্ঠশিল্পী ফরিদা পারভীন জানান, শুধু মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো থেকে আব্দুর রহমান বয়াতি ১৬ কোটি টাকা পাওনা আছেন। কণ্ঠশিল্পী সুজিত মোস্তফাও এর সত্যতা স্বীকার করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে আলম বয়াতি আরও জানান, এখন থেকে আব্দুর রহমান বয়াতি বাউল ফাউন্ডেশন কিংবা পরিবারের সম্মতি ছাড়া তার গান ডাউনলোড, আপলোড কিংবা রিমিক্স করা যাবে না। শুধু তাই নয়, এফএম রেডিও, টিভি চ্যানেলে প্রচার করতে কিংবা সিডি-ভিসিডি করে বাজারজাত করতে ফাউন্ডেশনের অনুমতি নিতে হবে। অন্যথায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এর পাশাপাশি তিনি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘আমার বাবাকে একুশে পদকে ভূষিত এবং তার চিকিৎসা ব্যয়ে ঋণ নেওয়া ৪ লাখ টাকা পরিশোধ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই। আমরা আশা করছি তিনি (প্রধানমন্ত্রী) আমাদের জন্য এবার একটি মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দেবেন।’
সংবাদ সম্মেলনে আব্দুর রহমান বয়াতির বড় ছেলে মো. মহিউদ্দিন, ছোট ছেলে মো. আজিম হোসেন এবং ফাউন্ডেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক আলী আশরাফ আখন্দ উপস্থিত ছিলেন।
আব্দুর রহমান বয়াতি ছিলেন বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত লোকসংগীতশিল্পী। তিনি একাধারে অসংখ্য জনপ্রিয় লোকগানের শিল্পী, গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক। ১৯৩৯ সালে ব্রিটিশ ভারতের ঢাকার সূত্রাপুর থানার দয়াগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন এই বাউল কিংবদন্তি। জীবদ্দশায় তার প্রায় পাঁচশ একক গানের অ্যালবাম বের হয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে অসংখ্য মিশ্র অ্যালবামে গান। তার উল্লেখযোগ্য গানের মধ্যে রয়েছে- ‘মন আমার দেহঘড়ি’, ‘আমি ভুলি ভুলি’, ‘আমার মাটির ঘরে ইঁদুর ঢুকেছে’, ‘মরণেরই কথা কেন স্মরণ কর না’, ‘মা আমেনার কোলে ফুটল ফুল’, ‘ছেড়ে দে নৌকা মাঝি’ প্রভৃতি ।
১৯ আগস্ট ২০১৩ সালে রাজধানীর ধানমন্ডির সাতমসজিদ রোডে জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।