আমি যা নই তাই বলা হচ্ছে: মোশাররফ করিম

মোশাররফ করিম। দীর্ঘ অভিনয়জীবনে যার জনপ্রিয়তা আকাশছুঁই। অথচ উপস্থাপনায় পা রেখেই পড়লেন তুমুল সমালোচনার মুখে! অথচ সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই ‘জাগো বাংলাদেশ’ নামের অনুষ্ঠানটি শুরু করেন তিনি। যার মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করার আহ্বান জানাতে গিয়ে উল্টো নিজেই এখন সমস্যার মুখে পতিত। ১৭ মার্চ অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে তার একটি বক্তব্যের জের ধরে সমালোচনার মুখে পড়েন এই তারকা। এরপর ২৩ মার্চ নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দুঃখ প্রকাশও করেন। তাতেও থামছেন না সমালোচকরা।
মোশাররফ করিমএবার বাংলা ট্রিবিউনের কাছে বিষয়টির সবিস্তার করলেন তিনি। জানালেন, পুরো বিষয়টি নিয়ে তিনি নিজেও বিব্রত ও ব্যথিত অনাকাঙ্ক্ষিত চলমান ‘বিতর্কে’ জড়িয়ে।
বাংলা ট্রিবিউন: আপনি জনপ্রিয় অভিনেতা। তাই ভক্তদের কাছে আপনার প্রতিটি কথাই মূল্যবান। এবার একটি বক্তব্যকে ঘিরে ভক্তরা আপনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
মোশাররফ করিম: এটা নিয়ে আর কথা বলা কি ঠিক হবে? আমি ফেসবুকে দুঃখ প্রকাশ করে বিষয়টি লিখেছি।
বাংলা ট্রিবিউন: আমরা ফেসবুকের সে স্ট্যাটাসটি নিয়েই বিস্তারিত কথা বলতে চাই।
মোশাররফ করিম: আমি কোনোভাবেই পোশাকের শালীনতার বিরুদ্ধে নই। কেন আমি অশালীন পোশাকের কথা বলব?
আমার অনেক ভক্ত-দর্শক আমাকে পছন্দ করেন। তারা যেটা মনে করছেন, আমি পর্দার বিরুদ্ধে কথা বলতে চাচ্ছি বা অশালীন পোশাককে তুলে ধরছি- তা নয়। মোটেই না। আমার ইনটেনশন এটা ছিল না।
পোশাকের শালীনতার প্রয়োজন আছে। আপনারা (ভক্তরা) ভুল বুঝবেন না।
বাংলা ট্রিবিউন: অনুষ্ঠানটি রেকর্ড হওয়ার পর সম্পাদনার টেবিলসহ অনেক হাত ঘুরে এটি পর্দায় এসেছে। সেসময় কি মনে হয়নি, এই বক্তব্যটুকু আপনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে? বা প্রচার হওয়ার আগে চূড়ান্ত পর্ব কি আপনি দেখেছিলেন?
মোশাররফ করিম: না। সম্পাদনার টেবিলে আমি ছিলাম না বা আমি দেখিওনি। দেখতে পারিনি। আমার কাছে মনে হয়, বাংলাদেশের জনসাধারণ আমাকে ভালোবাসে। তাদেরকে আমি শ্রদ্ধা করি। এবং বলতে চাই, অনেকে যেমনটি ভাবছেন, আমার ব্যক্তিগত দর্শন তা নয়। আমি যে এটাও বলব, আমি সে মানসিকতারও নই।
অনুষ্ঠানের ওই কথাটি কেউ কেউ হয়তো বুঝতে পারেনি বা আমি বোঝাতে পারিনি। যে কারণে অনেকেই হয়তো কষ্ট পেয়েছেন। এর জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত।
সবই তো নয়, যারা যারা এটা মনে করেছেন, তাদের বলছি, আমি সেরকম মানুষ নই। আমি কখনও বলতে চাই না, আমি পোশাকের শালীনতার বিপক্ষে।
বাংলা ট্রিবিউন: অনেকের তো তির্যক মন্তব্যও এসেছে। বলেছেন, এগুলো আপনার পূর্ব পরিকল্পিত। আগে সেলিব্রেটি হয়েছেন, এখন নিজের পূর্ব পরিকল্পিত বিষয় সামনে আনছেন।
মোশাররফ করিম: আমি খুবই দুঃখিত। (কিছুক্ষণ থেমে...) খুব দুঃখজনক বিষয় এটি।
বাংলা ট্রিবিউন: অনুষ্ঠান নিয়ে কী কোনও চাপ এসেছে? এটা কী চলবে নাকি বন্ধ হয়ে যাবে?
মোশাররফ করিম: অনুষ্ঠান নিয়ে আমাদের কোনও চাপ নেই। এটা হবে। প্রথম পর্বে মেয়েদের বিষয়ে গুরুতর একটি সমস্যা নিয়ে কথা বলেছি। সামাজিক আরও সমস্যাগুলো আমরা তুলে ধরব। মোট ১৩টি পর্ব হবে। পর্বগুলো মধ্যে আছে- অটিজম, বাল্যবিবাহ, সড়ক দুর্ঘটনা, মেয়েদের ঋতুকালীন সমস্যা, যানজট, বৃহন্নলা, পরিবেশ দূষণ ইত্যাদি।
বাংলা ট্রিবিউন: আপনি তো অভিনেতা। এবারই প্রথম উপস্থাপনায় টিভি পর্দায় এলেন। অনুষ্ঠানটিতে যুক্ত হতে আগ্রহী হয়েছিলেন কী ভেবে?
মোশাররফ করিম: আমি তো কখনোই এমন কাজ (উপস্থাপনা) করিনি। আমার কাছে যখন প্রস্তাব এসেছে, ভেবেছি এ কাজটি করলে সমাজের জন্য বেটার হবে। সেই ভাবনা থেকেই কাজটি শুরু করা।
অথচ অনুষ্ঠানটির প্রথম পর্বেই অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটে গেল! আমি আবারও বলছি, কোনোভাবেই আমি পোশাকের শালীনতার বিপক্ষে নই।
বাংলা ট্রিবিউন: আপনি যখন এভাবে বলছেন, তখন অনেকেই কিন্তু এটাও বলছেন- মোশাররফ করিমের এভাবে দুঃখ প্রকাশ করাটা ঠিক হয়নি!
মোশাররফ করিম: দেখুন, আমি বলেছি, যারা বুঝতে পারেননি বা যাদের আমি বোঝাতে পারিনি- ঐ জায়গা থেকে আমি দুঃখ প্রকাশ করেছি।
বাংলা ট্রিবিউন: নানা দিক থেকে নানা কথা চলছে! এগুলো তো সবই আপনার কানে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে সামগ্রিক পরিস্থিতি কেমন?
মোশাররফ করিম: আমি যা নই, তাই বলা হচ্ছে। ভুল বোঝাবুঝিতে যারা কষ্ট পাচ্ছেন, তাদের এমন কথাতেও আমি ব্যথিত হচ্ছি, কষ্ট পাচ্ছি। আমি কেমন মানুষ, তা আমার আশেপাশে যারা থাকেন তারা হয়তো জানেন। নিজের কথা নিজে বলতে সবসময়ই আমি চরম বিব্রত বোধ করি। বলব, পুরো অনুষ্ঠানটি দেখুন। তারপর বুঝুন, আমি আসলে কী বোঝাতে চেয়েছি। এটা শুধুই ভুল বোঝাবুঝি।
বাংলা ট্রিবিউন: এমন একটি বিব্রতকর পরিস্থিতির পর অনুষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা কোনও উদ্যোগ নিয়েছে?

মোশাররফ করিম: আগামীকাল (২৫ মার্চ) একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে অনুষ্ঠান নির্মাতারা পুরো বিষয় নিয়ে কথা বলবেন।
‘জাগো বাংলাদেশ’ অনুষ্ঠানের পরিচালক আরিফ এ আহনাফের বক্তব্য:
‘যারা পুরো অনুষ্ঠান দেখেননি, তারা আংশিক দেখে ভুল বুঝছেন। আমরা শুধু বলেছি, নারীরা নির্যাতিত হলে শুধু পোশাককে দোষ দেওয়া ঠিক না। এ ক্ষেত্রে দায়ী মানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গি। মানুষের মনকে আগে ঠিক করা প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানটি সাজানোই হয়েছে এভাবে।  যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়া কিছু মেয়ের কাপড় আমরা সংগ্রহও করেছি। যেগুলো আমরা অনুষ্ঠান মঞ্চেও রেখেছিলাম। এ পোষাকগুলো শালীন। কিন্তু তারপরও মেয়েগুলো যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। আমরা তো সেখানে কোনও অশালীন পোশাক রাখিনি। কারণ আমাদের উদ্দেশ্যই হলো মানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের কথা বলা।’
চ্যানেল ২৪-এর ‘জাগো বাংলাদেশ’ নামের অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে ধর্ষণ ও মানসিকতা নিয়ে মোশাররফ করিম বলেছিলেন, ‘একটা মেয়ে তার পছন্দ মতো পোশাক পরবে না? পোশাক পরলেই যদি সমস্যা হয়, তাহলে ওই সাত বছরের মেয়েটির ক্ষেত্রে কী যুক্তি দেব আমরা। যিনি বোরকা পরেছিলেন তার ক্ষেত্রেই বা কী যুক্তি দেব।’
তার এই বক্তব্যে উঠে আসে বোরকা পরলেও ধর্ষণ হয়, ছোট পোশাক পরলেও ধর্ষণ হয়। আবার যে বাচ্চা সেও ধর্ষণের শিকার। তাহলে আমরা শুধু পোশাকের দোষ কেন দেব! দোষ মানসিকতার।
দেশব্যাপী জনপ্রিয় অভিনেতার এমন মন্তব্যের পর সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে আসতে থাকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

‘জাগো বাংলাদেশ’ এর আলোচিত পর্বটি দেখা যাবে এখানে:


সেই সমালোচনার জবাবে নিজের ফেসবুক পেজে এই অভিনেতা লেখেন, ‘চ্যানেল ২৪-এ আমার উপস্থাপিত একটি অনুষ্ঠানের একটি অংশে আমার কথায় অনেকে আহত হয়েছেন। আমি অত্যন্ত দুঃখিত। আমি যা বলতে চেয়েছি তা হয়ত পরিষ্কার হয়নি। আমি পোশাকের শালীনতায় বিশ্বাসী। এবং তার প্রয়োজন আছে। এই কথাটি সেখানে প্রকাশ পায়নি। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা আমার অভিপ্রায় না। এ ভুল অনিচ্ছাকৃত। আমি অত্যন্ত দুঃখিত। দয়া করে সবাই ক্ষমা করবেন।’