বাংলা ট্রিবিউন থেকে ৭০তম কান উৎসব কাভার করতে এসে সাঁ রাফায়েলে প্রবাসী মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে ছিলাম। তিনি উপহারের (রে ব্যান রোদচশমা) সঙ্গে কিছু টিপস দিয়েছিলেন। সেটা এবার কাজে লাগালাম।
ট্রেনে প্রতিবার টিকিট কেটে যাতায়াত করলে খরচ বেশি। সপ্তাহের টিকিট একসঙ্গে কেটে ফেললে সস্তা। জুয়া-লা-পা’য় টিকিট বিক্রেতা ভদ্রমহিলাকে বললাম, এক সপ্তাহ কানে যাওয়া ও ফেরা যাবে এমন একটা প্যাকেজ চাই। তিনি পাসপোর্ট চাইলেন। আইডেন্টিটি পেজ দেখে তথ্য নিয়ে ফেরত দিলেন এক মিনিটের মধ্যে। ৬ মে থেকে ১২ মে পর্যন্ত টিকিট পেতে গুনতে হলো ৭ ইউরো ৯০ সেন্ট। এই সাতদিন যতবার খুশি যাতায়াত করতে পারবো। অথচ দিনে প্রতিবার যাওয়া-আসায় লেগে যেতো ৫ ইউরো!
তবে আবহাওয়া নিয়ে কোনও অভিজ্ঞতাই কাজে লাগেনি। এক্ষেত্রে কোনও অনুমানই ধোপে টেকে না। সোমবার (৭ মে) সকাল থেকে হালকা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। তাই ব্লেজার গায়ে চেপে রওনা হলাম কানে। ভেবেছিলাম কনকনে ঠান্ডায় কাঁপতে হবে। কিন্তু কোথায় কী! ট্রেনে ৮ মিনিটের মধ্যে সাগরপাড়ের শহরটিতে পৌঁছার পর থেকে রোদের তাপ যেন সময় গড়ানোর সঙ্গে বেড়ে চলছিল। এ কারণে ঘেমে একাকার হওয়ার দশা!
রোদ মাথায় নিয়েই প্রেস ব্যাজ সংগ্রহের জন্য অ্যাক্রেডিটেশন ফটকের লাইন দাঁড়াতে হলো। ব্যাজের সঙ্গে লাল রঙের একটি কার্ড এলো হাতে। তাতে ফরাসি ও ইংরেজিতে লেখা, ‘নো সেলফিস অ্যান্ড পিকচার্স অন দ্য রেড কার্পেট। থ্যাংকস!’ এতদিন জানতাম, সেলফি নিষিদ্ধ। এখন তো দেখছি মোবাইল ফোনে যেকোনও ধরনের ছবি তোলাই বারণ!
এই বার্তা মূলত মিটু হ্যাশট্যাগ ও টাইমস আপ আন্দোলনের সঙ্গে সংহতির প্রতীকী। প্রচারপত্রে উল্লেখ রয়েছে একটি নম্বরও। যৌন হয়রানি কিংবা এ ধরনের কর্মকাণ্ড দেখলে এই নম্বরে ফোন করে অভিযোগ জানানো যাবে। সাদা কাগজের ওপর বো-টাইয়ের ছবি। নিচে ডানদিকে হ্যাশট্যাগ দিয়ে লেখা—‘এমন কিছু ঘটতে দেবেন না।’ অথবা এভাবেও বলা যায়, ‘চোখ-কান খোলা রাখুন, সোচ্চার হোন।’
কানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজারও চলচ্চিত্র ক্রেতা, বিক্রেতা, সৃজনশীল মানুষ ও সংবাদকর্মী আসেন। তাদের অনেকেই ফরাসি ভাষা জানেন না। যদিও প্রচারপত্রের কোনও কিছুরই অনুবাদ নেই। সমাধান একটাই—গুগল! সার্চ ইঞ্জিনের ট্রান্সলেটরে চোখ রেখে হাঁটছি।
ব্যাগের ওজন কম নয়। কিন্তু সবই উৎসবের জন্য দরকারি। তাই ভার বইতে হচ্ছে। এমনিতে রোদ, তার ওপর ভারী ব্যাগ নিয়ে হাঁটতে গিয়ে গরম আরও বেশি লাগছে। পালে দো ফেস্টিভ্যাল ভবনের সামনের সড়কে এসে দেখি সাধারণ মানুষের জটলা। কান উৎসব উদ্বোধনের জন্য মুখিয়ে আছেন সবাই। তাই রোদে পুড়ে লালগালিচা বিছানোর প্রক্রিয়া উপভোগ করছেন তারা।
শুধু এলাম, দেখলাম, ঘুরলাম আর লিখলাম; ব্যাপারটা কিন্তু এমন নয় কানে। এখানে সারাক্ষণই চোখ-কান খোলা রাখতে হয়। প্রতিদিনই দরকারি সবকিছু বয়ে বেড়ানো লাগে। যত ওজনই হোক। আবার ফ্রান্সের সঙ্গে বাংলাদেশের চারঘণ্টা সময়ের ব্যবধানের কথাও রাখতে হয় মাথায়। তাছাড়া একটার পর একটা ইভেন্ট থাকেই। সবখানেই যেন জমজমাট আমেজ দেখা যায়, উৎসবের ডিজাইনটাও সেভাবেই সাজানো।