ঠান্ডা হাওয়ার কারণে প্রেস রুমের ব্যালকনিতে ল্যাপটপ নিয়ে বেশিক্ষণ বসা গেলো না। তাই ভেতরে ঢুকে ডেস্কটপের শরণাপন্ন হতে হলো। কিছুক্ষণ কাজ করার পর পাশ থেকে একজন জানতে চাইলেন, ‘আর ইউ ফ্রম বাংলাদেশ?’ মাথা নেড়ে বললাম, ইয়েস। ভদ্রলোক শ্বেতাঙ্গ। তাই তাকে প্রশ্ন করলাম, ‘ডু ইউ নো অ্যাবাউট বাংলাদেশ?’ এরপর চমকানোর মতো বেশ কিছু তথ্য দিলেন। বাংলা ভাষায় বেশ কিছু কথা বলে অবাকও করলেন।
প্রেস রুমে বসে কাজ করতে থাকা এই লোকটার নাম ডেভিড স্যান্ডারসন। লন্ডনের দ্য টাইমস পত্রিকার সাংবাদিক। কান উৎসবে অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে এসেছেন। চমকানোর মতো কথাটা হলো, তার স্ত্রী সোফিয়া করিম একজন বাংলাদেশি! এটা শুনে তার সম্পর্কে আগ্রহ জন্মালো। কাজের ফাঁকে আমরা আড্ডা দিলাম বেশ কিছুক্ষণ।
বাংলাদেশের মেয়েকে বিয়ে করেছেন, নিশ্চয়ই বাংলা বলতে পারেন? ডেভিড বাংলাতেই উত্তর দিলেন, ‘একটু একটু।’ বলেই হেসে ফেললেন। তাকে আরও হাসাতে বাংলায় বললাম, আপনি তো বাংলাদেশের জামাই! তার ভ্রু কুঁচকানো দেখে বুঝলাম, বাক্যটা বোঝেননি। ইংরেজিতে বলতে হলো, ‘ইউ আর অ্যা ব্রাইডগ্রুম অব বাংলাদেশ!’ শুনে হো হো করে হাসলেন তিনি।
যুক্তরাজ্যে ডেভিড ও সোফিয়ার ঘর আলো করেছে দুই সন্তান করিম ও লায়লা। ছেলেমেয়ের নাম জেনেও অবাক হলাম। যুক্তরাজ্যে জন্ম, অথচ তাদের ডাকনাম অন্য অনেক বাংলাদেশির মতো। বললাম, ‘ইউর চিলড্রেনস নেম আর ভেরি বিউটিফুল।’ একথা শুনে তার মুখ থেকে বেরিয়ে এলো, ‘থ্যাঙ্ক ইউ।’
এবার বাংলা শেখার পাঁয়তারা করলেন ডেভিড। ‘থ্যাঙ্ক ইউ’ কথাটার বাংলা কী হবে জানার আগ্রহ তার। চমকপ্রদ ব্যাপার হলো, করিম ও লায়লা বাংলা বলতে পারে। এর কারণও শোনালেন ডেভিড, ‘লায়লা অনর্গল বাংলা বলতে পারে। ওদের আম্মা ও নানা-নানি বাংলায় কথা বলে। তারা বাংলা বলতে পছন্দ করে, কারণ সোফি বাংলাদেশের মেয়ে।’
আড্ডার পর ভাবলাম, ডেভিডের একটা ভিডিও নিয়ে রাখি। কাজে লাগতে পারে। আমার অনুরোধ শুনে না করলেন না। ‘বিদেশি’ কিংবা ‘একটু’র মতো বাংলা শব্দ বলতে পারবেন? উত্তরে রসিকতার সুরে বললেন, ‘আপনি কি অনেক কষ্ট দিলা!’ এরপর মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় তাকিয়ে তিনি বাংলাতেই বলতে লাগলেন, ‘আমার নাম ডেভিড। আমার স্ত্রী সোফি।’ করিম ও লায়লা যে তাদের সন্তান তা বোঝাতে বাংলা শব্দ খুঁজছিলেন। বিড়বিড় করে ‘বাবি, বাবি’ বলে পরে পেয়েও গেলেন, ‘বাবু!’
ভালোই আড্ডা হলো। ইমেইল ঠিকানা বিনিময়ের পর আমরা যার যার কাজে ডুব দিলাম। আধঘণ্টা পর ডেভিড প্রেস রুম থেকে চলে যাওয়ার সময় নিজ থেকে হাত মিলিয়ে বিদায় নিলেন, ‘আই উইল সি বাংলাদেশি শর্ট ফিল্ম। নাইস টু মিট ইউ। টেক কেয়ার।’
ভিডিওতে বাংলাদেশের জামাই: