অথচ অফিসে ফিরে কিছু একটা লিখবো ভেবে টেবিলে বসতেই চারপাশ ঝাপসা হয়ে আসছে।
বাচ্চু ভাইয়ের সাথে কবে, কোথায় আর কীভাবে পরিচয় আমার মনে নেই। মনে থাকার কথাও না, বা মনে করেও রাখিনি। তখন তো আর জানতাম না তিনি এমন করেই চলে যাবেন। আমরা মানুষের মৃত্যুর পর নানা কিছু বলে থাকি। তিনি ভালো মানুষ ছিলেন বা তিনি তার প্রাপ্য সম্মান পেলেন না! এমন কিছু! কিন্তু আইয়ুব বাচ্চু ভীষণ এক মহান জীবনই যাপন করে গেছেন। নাম, যশ, খ্যাতিতে। দ্যুতিময় সে জীবনে তিনি রেখে গেছেন আমাদের মতো সারা বাংলাদেশের সকল ভক্তকে। আর পরিবারকে। যাদের সকলকে তিনিই সম্মানিত করে গেলেন।
লিখতে লিখতেই খুব অস্পষ্টভাবে মনে পড়ে গেল, আমি সম্ভবত প্রথম বাচ্চু ভাইয়ের মগবাজারের বাসায় যাই। আমি তখন হয়তো কেবল ইউনিভার্সিটিতে পড়ি। ৯৬ সাল হবে হয়তো সময়টা। সেই হয়তো কাছে থেকে তাকে চেনা। কিন্তু আমার তো সেই কত আগে তাকে চেনা! তার গাওয়া ‘অলস দুপুরে উঠোনজুড়ে কৃষ্ণচূড়ার ছায়া’ শুনে হয়তো সত্যিই চলে যেতাম শৈশবে!
তাকে নিয়ে ছোট ছোট অনেক স্মৃতি জমা আছে আমার কাছে। যখন টিভিতে গাইতে আসতেন, তখন সারাক্ষণই ফোনে আমার একটা গানের অনুরোধ থাকত। কেবল একটা গান! ‘তুমি যেন কেমন হয়ে গেছো... কিছুটা অপরিচিত’। আমাকে মুখের ওপর বলতেন, ‘মোটেই আমি গাইব না।’ আমিও মন খারাপ করে বসে অনুষ্ঠান দেখতে থাকতাম টিভির সামনে। প্রায় শেষ-হওয়া সেই অনুষ্ঠানে হঠাৎ বলে ওঠেন আমার নাম। আমার অনুরোধ। গাইতেন তিনি সেই গানটি।
আমার খুব বিশেষ মনে হতো তখন নিজেকে! দারুণ সেই অভিজ্ঞতা। অসাধারণ অনুভূতি! গান শুনছি আর শেষ হতেই একটা টেক্সট করে ধন্যবাদ জানাই। তারপর আবার বলবেন, ‘এই শেষ! আর না!’ কিন্তু ততদিনে জেনে গেছি, এই আবদার আমি আবারও করব। এই আবদার তিনি আবারও রাখবেন।
আজ স্কয়ারের সামনে দাঁড়ানো অসংখ্য মানুষের উপস্থিতিই বলে দেয় আইয়ুব বাচ্চু আর ফিরবেন না। তারা তাকে দেখবেন না আর। আর তিনি ঘুমিয়ে মর্গের ঘরে! আর শত শত মানুষ দাঁড়িয়ে রাস্তায়।
তিনি চলে গেছেন মহাপ্রস্থানে। তিনি কি বুঝতে পারছেন, কত শত মানুষের মানুষ হয়ে ছিলেন তিনি? আছেন, থাকবেন! তিনি কি টের পান? জানি না...।
লেখক: অভিনেত্রী