মেহজাবীনের অভিযোগ, অলিকের ব্যাখ্যা

এসএ হক অলিক ও মেহজাবীন

রাত ১১টার পর শুটিং নয়—গত বছর এমন একটি নিয়ম করেছিল টিভি নাটক নির্মাতাদের সংগঠন ডিরেক্টরস গিল্ড। সে সময়টাতে শুটিং স্পটগুলোতেও মানা হতো নিয়ম।
প্রথমদিকে বেশ তোড়জোড়ও ছিল। কিন্তু জুন মাসে ঈদ আয়োজনের আগ দিয়ে বিষয়টিতে অস্থিরতা দেখা দেয়। সেই যে শুরু এরপর এখনও অনেক শুটিং স্পটে এভাবেই চলছে শুটিং। এবার গুরুতর এ বিষয়টির প্রকাশ্যে প্রতিবাদ এবং প্রতিকারের অনুরোধ জানিয়েছেন অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরী। গত ৬ নভেম্বর নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে বাংলা ও ইংরেজিতে বড় একটি লেখা লেখেন এ শিল্পী।

বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়েকজন তারকার সঙ্গে কথাও হয় বাংলা ট্রিবিউনের। তারাও এটি স্বীকার করেন, মানা হচ্ছে না শুটিং নিয়ম। তারা জানান, অনেক পরিচালক-প্রযোজকের কারণেই মধ্যরাত অবধি কাজ চালিয়ে যেতে হয়। আর এতে জুনিয়র শিল্পীদের অবস্থা আরও শোচনীয়।

এদিকে গত জুনে বিষয়টি নিয়ে ডিরেক্টরস গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক এস এ হক অলিক বলেছিলেন, ‌‘যখন নিয়ম তৈরি করি, তখনই বলাই ছিল ঈদের সময় এটা শিথিল করা হবে। তবে ঈদের পর থেকে আবার আগের নিয়মে সবকিছু চলবে।’

বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি ফেসবুকে অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরী বড় একটি বিবৃতি দিয়েছেন। তার ভাষ্য, ‘আমরা যারা অভিনয় ও পরিচালনার সঙ্গে জড়িত তারা যেন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা অবধি শুটিং করার যে নিয়মটা আছে, সেটা মেনটেইন করি। এছাড়া যদি আমাকে সকাল ৬টায় দরকার হয়, তাহলে বিকাল ৬টার মধ্যে আমাকে ছেড়ে দিতে হবে। আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, অনেক রাত পর্যন্ত কাজ করাটা মানসিক ও শারীরিক দুইভাবেই হ্যাম্পার করে আমাদের। এবং পরের দিন যে শিডিউলটি আমি অলরেডি লক করে রাখি এবং নিজের শতভাগ দেওয়ার কথা দিয়েছি, সেটি আগের দিনের ‘লেটনাইট’-এর জন্য নানাভাবে হ্যাম্পার হয়। এতে করে আমার সাথে কাজ করা অন্য ডিরেক্টর, টিম বা কো-আর্টিস্টও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কাজটি শতভাগ হচ্ছে না একই সঙ্গে। আমরা বেস্ট আউটপুট দিতে পারছি না।’

প্রসঙ্গটি নিয়ে এ অভিনেত্রীর সঙ্গে কথা হয় বাংলা ট্রিবিউনের। তিনি বলেন, ‘সময়সূচি শতভাগ মানা হচ্ছে না, এটা ঠিক। অনেক জায়গায় আমি মূল আর্টিস্ট বলে আমাকে টাইমলি ছেড়ে দেয়। কিন্তু অন্য শিল্পীদের নিয়ে কাজ চালিয়ে যাওয়ারও ঘটনা ঘটে। কিন্তু পুরো বিষয়টিই তো একটা টিম ওয়ার্ক! এটা হওয়াটা আরও দুঃখজনক!’

তার এই মতের সঙ্গে সহমত অনেকেই প্রকাশ করেছেন। এরমধ্যে অভিনয়শিল্পী জোভান, শেহতাজসহ আরও কয়েকজন জানান, তারাও চান বিষয়টি মানা হোক।

মূলত দুটি শিফটে কাজ হয় শুটিংবাড়িগুলোতে। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা একটা শিফট এবং বিকাল ৫টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত আরেকটা। তবে যদি কেউ রাত ১১টার পরে শুটিং করেন, তার জন্য আলাদা শিফট নির্ধারিত হয়।

জানা যায়, অনেকেই সকালের সিডিউলসহ রাত অবধি টানা শুটিং করেন।

বিষয়টি নিয়ে এস এ হক অলিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কোন পরিচালক এভাবে কাজ করছেন তা আমাদের সাংগঠনিকভাবে জানালে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি। আর এই বিষয়টি স্বচ্ছ করার জন্যই আমরা ত্রিপক্ষীয় চুক্তি (ডিরেক্টরস গিল্ড, অভিনয় শিল্পী সংঘ ও প্রোগ্রাম প্রডিউসার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ) স্বাক্ষরের ব্যবস্থা করেছি। এটি করলে নাটকের কোনও পক্ষ (শিল্পী, পরিচালক, প্রযোজক) যদি অনিয়ম করে তার ব্যবস্থা নেবো।’

নিয়ম মানছে কিনা, তার দেখার জন্য কোনও কি মনিটরিং টিম আছে—এমন প্রশ্নে এই নির্মাতা বলেন, ‘না, এটা নেই। এটা সম্ভবও নয়। কারণ, আমাদের সাড়ে ৫শ পরিচালক কাজ করেন। এটা করতে পারলে আমাদেরই ভালো হতো। তবে মেহজাবীন যে বিবৃতি দিয়েছে, তার সত্যতা অবশ্যই আছে। কিছু ঘটেছে বলেই তিনি এমন মন্তব্য করেছেন। তিনি যদি সুনির্দিষ্টভাবে আমাদের জানান, আমরা অবশ্যই এগুলোর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবো।’