অফিসিয়াল সিলেকশনের ছবিগুলোর কলাকুশলী ছাড়াও কান উৎসব কর্তৃপক্ষ অনেক তারকাকে আমন্ত্রণ জানান। বিভিন্ন অফিসিয়াল পার্টনার প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিরাও দাওয়াত পান। এছাড়া লালগালিচার জৌলুস বাড়াতে বিভিন্ন দেশের নামিদামি তারকা ও মডেলদের আনা হয়। যাদের সব ব্যয় আয়োজকদের।
অ্যাক্রেডিটেশন পেয়ে কানসৈকতে ভিড় করেন বিভিন্ন দেশের সাংবাদিকরা। তাদের জন্য এবার প্রেস বিভাগ পুনর্বিন্যাস করা হয়। এখন হেড অব প্রেস অফিস হিসেবে আছেন আইদা বেলুলিদ। তাকে দেখে মনেই হবে না এত বড় একটি দায়িত্ব পালন করছেন! বয়সে তরুণী। সংবাদকর্মীদের অ্যাক্রেডিটেশন, তাদের জন্য চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ও সংবাদ সম্মেলন আয়োজনের ভার তার কাঁধে। গত ২ জানুয়ারি থেকে নতুন পদে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। আলফনসো কুয়ারন, টেরেন্স ম্যালিক, ফাতি আকিন, সের্গেই লজনিৎসা ও নিকোলাস উইন্ডিং রেফনের ছবির প্রচারণার অভিজ্ঞতা আছে তার ঝুলিতে। মরক্বোর মারাকেশ ও ফ্রান্সের দ্যভিল, ব্যুন ও জেরার্দমার চলচ্চিত্র উৎসবে প্রচারণায় নিয়োজিত ছিলেন তিনি।
দিনভর পালে দে ফেস্তিভাল ভবনের বিভিন্ন থিয়েটারসহ কানসৈকতের কয়েকটি পাঁচতারকা হোটেল ও প্রেক্ষাগৃহগুলোতে এখন চলছে নতুন নতুন ছবির প্রদর্শনী। এছাড়া থাকে চলচ্চিত্র বিষয়ক নানান আয়োজন। ই-মেইলে সেসব তথ্য এসে ভরে যায়! এর মধ্যে বেছে বেছে অংশগ্রহণের পরিকল্পনা করি। কিন্তু সংবাদ সম্মেলন কিংবা লালগালিচায় কখন কোন তারকা চলে আসেন, সেদিকে সজাগ থাকতে হয় বলে বেশিরভাগ পার্টি মিস করতে হয়।
লেবানিজ নারী নির্মাতা নাদিন লাবাকি কানের সন্তানতুল্য! কানসৈকতেই তার সেলুলয়েড যাত্রা শুরু হয়েছিল। এ পর্যন্ত তিনটি ছবি পরিচালনা করেছেন তিনি। সবই প্রদর্শিত হয়েছে কানে। এর সুবাদে আন্তর্জাতিক খ্যাতি এসেছে তার মুঠোয়। ১৫ বছর আগে কান উৎসবের সিনেফঁদাসোতে অংশ নেন তিনি। এরপর ডিরেক্টরস ফোর্টনাইটে তার পরিচালিত প্রথম ছবি ‘ক্যারামেল’ প্রদর্শিত হয় ২০০৭ সালে। নারীর অবস্থা ও ধর্মীয় টানাপোড়েনকে ঘিরে তার বানানো ‘হোয়্যার ডু উই গো নাউ?’ ২০১১ সালে স্থান পায় আঁ সার্তে রিগারে।
হতবাক করার মতো ব্যাপার হলো, নাদিন লাবাকি ছবি বানানো শুরুর সময় লেবাননে কোনও চলচ্চিত্র শিল্পই ছিল না! তার ওপর তিনি নারী। এসব কারণে অনেক প্রতিবন্ধকতা পাড়ি দিতে হয়েছে তাকে। তবে তিনি বলেন, ‘আমার কখনও মনে হয়নি, মেয়ে হয়েছি বলে কিছু করতে পারবো না।’
উঠতি নারী ফিল্মমেকার বা যারা এই পথে পা ফেলতে চায় তাদের উদ্দেশ্যে নাদিন লাবাকির বার্তা, ‘মনের ভেতর কী অনুভব করছো তার ওপর নির্ভর করবে সফল হবে কিনা। আর পর্দায় কোন প্রতিফলন দেখাতে চাও সেটা নির্ধারণ করাও জরুরি।’
‘ওমেন ইন মোশন টক’ শীর্ষক আড্ডাটি আয়োজন করে ফরাসি বিলাসবহুল পণ্যের ব্র্যান্ড কেরিং। কানে অ্যাক্রেডিটেশন পাওয়া সাংবাদিকদের মধ্যে বাছাইকরা কয়েকজনকে ই-মেইল পাঠানো হয়। এর উত্তরে নিজের আগ্রহ দেখালে তারা ইনভাইটেশন পাঠান। নাদিন লাবাকির দু’চার কথা শোনার সুযোগ পেতে ই-মেইল পাওয়া মাত্র দেরি করিনি। মধ্যপ্রাচ্যের এই নারী নির্মাতা বাংলাদেশ সম্পর্কে জানেন। পরিচয় দিতেই বুঝে ফেললাম তা। এরপর তিনি পাশে দাঁড়িয়ে ছবিও তুললেন।
নাদিন লাবাকির মতোই বাংলাদেশ নিয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখালেন ভারতের সেন্ট্রাল বোর্ড অব ফিল্ম সার্টিফিকেশনের চেয়ারম্যান প্রসূন জোশি। ভারতীয় প্যাভিলিয়নে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা। তবে সেন্সর বোর্ডের প্রধান নয়, গীতিকার হিসেবে তিনি বেশি পরিচিত। হিন্দি ছবিতে অসংখ্য জনপ্রিয় গান আছে তার।
ভারতীয় প্যাভিলিয়ন থেকে বেরিয়ে লালগালিচা উপভোগ করছিলাম হেঁটে হেঁটে। যেদিকে তাকাই শুধু মানুষ আর মানুষ! তারকারা একেকজন পায়চারি করে সিঁড়িতে দাঁড়ালেই উৎসুক মানুষের মধ্যে হৈ-হুল্লোড় শুরু হয়ে যায়। দূর থেকে দেখেও কত না শান্তি তাদের!