ল্যঁ কানের কাছাকাছি রুই দো ফ্লতের অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বেরিয়ে হেঁটে কিছুদূর এগোলে মূল সড়ক। সিগন্যালে মানুষ আকৃতির সবুজ বাতি জ্বললে জেব্রা ক্রসিং দিয়ে রাস্তা পার হতে হয়। আর লাল বাতি জ্বললে অপেক্ষা করা নিয়ম। অলিগলির জেব্রা ক্রসিংয়ে কেউ দাঁড়িয়ে থাকলে সিগন্যালে লাল বাতি থাকা সত্ত্বেও বেশিরভাগ চালক গাড়ি থামিয়ে হাত নেড়ে মানুষকে পার হওয়ার ইশারা দেন। তবে মূল সড়কে সেটা চোখে পড়ে না।
গার দো কান রেলস্টেশন থেকে তিন-চার মিনিট হাঁটা দূরত্বে মূল সড়কে সিগন্যালে পড়লে রোজ মেরিলিন মনরোকে দেখি। কান রিভিয়েরা হোটেলের এই দেয়ালচিত্র সম্মোহনী। সাগরপাড়ের শহরটির সবখানেই রূপালি পর্দার কিংবদন্তিদের সম্মান জানানো হয়।
কান উৎসবের ৭২তম আসরের প্রতিদিনের সূচি হলিউডের স্বর্ণযুগের শুটিংয়ের স্থিরচিত্র দিয়ে সাজানো হয়েছে। আলফ্রেড হিচককসহ কিংবদন্তি নির্মাতারা সেই সময়ে কীভাবে ক্যামেরার নেপথ্যে কাজ করতেন তার একঝলক দেখা গেছে। ২৩ মে বিকালে পরের দুই দিনের সূচি একসঙ্গে সাজানো হয়েছে। কারণ ২৫ মে শুধু সমাপনী আয়োজন ও লাস্ট স্ক্রিনিং।
পালে দে ফেস্তিভাল ভবনে নিরাপত্তার আনুষ্ঠানিকতা শেষে মূল ফটক দিয়ে ঢুকে সোজাসুজি মার্শে দ্যু ফিল্মের সিঁড়ি। বাঁ-দিকে ইনভাইটেশনের জন্য অনুরোধ করার প্রটোকল। ডান দিকে ওপর ওঠার এসকেলেটর। দু'দিকেই কান উৎসবে দিনভর অফিসিয়াল সিলেকশন ও প্যারালাল বিভাগে যেসব ছবি দেখানো হবে তার সূচি সাজানো থাকে। যার ইচ্ছে সেখান থেকে নিতে পারে।
ভিডিওটিতে দেখুন ভূমধ্যসাগরের তীরের এ শহরটি:
দোতলায় প্রেস রুমে, তিনতলায় ইনফরমেশন ডেস্কে, প্রেস অফিসের ফটকের একপাশে, সংবাদ সম্মেলনে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করার লবিতে সূচি দেওয়া থাকে। কেউ যেন কিছু মিস না করেন!
শেষ দুই দিন পুরস্কার বিতরণী নিয়ে দৌড়ের ওপর থাকতে হবে। তাই কাজের একফাঁকে ঘুরে নেওয়া জুতসই মনে হলো। কানের চারদিকে সাগরপাড়। চোখের সামনে নয়নাভিরাম ভূমধ্যসাগর এখান থেকে সবচেয়ে ভালো দেখা যায়। দক্ষিণ ফরাসি উপকূলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য প্রাচুর্যময়। এই শহরে পাম গাছের কমতি নেই।
আরমানি ক্যাফের সামনে একজোড়া মোরগ-মুরগির মূর্তি। আশেপাশে হাঁটলে বিভিন্ন প্রাণীর রঙ-বেরঙের ভাস্কর্য চোখে পড়ে। সিংহ, বাঘ, ডাইনোসর, হরিণের বর্ণিল মূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে মানুষ মনের আনন্দে ছবি তোলে। লাল-সাদা রঙের মানুষের মূর্তিও আছে।
হোটেল মিরামারের সামনে রৌপ্য রঙের তিনটি লজেন্স আকৃতির ভাস্কর্যে চোখ আটকে গেলো। পর্যটন গন্তব্য হওয়ায় কানে হোটেলের অভাব নেই! এখানে তারকারা সাধারণত মার্টিনেজ, কার্লটন, জেডব্লিউ ম্যারিয়ট, হোটেল ম্যাজেস্টিক ব্যারিয়ের, লে গ্র্যান্ড হোটেল ও হোটেল মিরামারে ওঠেন।
এর মধ্যে সবচেয়ে দামি মার্টিনেজ। এখানকার পেন্টহাউস স্যুটের প্রতি রাতের ভাড়া ৫৩ হাজার ২০০ মার্কিন ডলার। অর্থাৎ প্রায় ৪৫ লাখ টাকা! স্বাভাবিকভাবেই এসব হোটেলের সামনে উৎসুক মানুষের জটলা থাকে দিনভর। স্বপ্নের তারকারা গাড়িতে ওঠার আগে একনজর যদি তাকায় তো জীবন ধন্য!