ঈদ বিশেষ

‘২৫৭ টাকা নিয়ে ঢাকার ট্রেন ধরি’

তারকা! যাকে দেখে বিমোহিত হন দর্শক শ্রোতারা। কিন্তু তারকাকেও আলো দেন কেউ কেউ, জড়িয়ে থাকে অনেক স্যাক্রিফাইসের গল্প। ঈদের বিশেষ আয়োজনে আমরা সেই গল্প শুনতে চেয়েছি তারকাদের মুখ থেকে। বলেছেন—চিত্রনায়ক আরিফিন শুভ

আরিফিন শুভ

একটা সময় আমার আপন মামা আমাকে অনেক ব্যঙ্গ করতেন। বলতেন, পচা সাবানের অ্যাড করবি তুই?
১৭ বছর আগে র‌্যাম্প মডেল হবো বলে ঠিক করি। কিন্তু আমি কাউকেই চিনি না। উল্টো আমাকে ‘মডেলার’ বলে ব্যঙ্গ করা হতো এলাকায়। শুধু দুই বন্ধু আসিফ আর ইমতিয়াজ ছিল সবার চেয়ে আলাদা। তারা বলতো, ‘তুই পারবি’। তারা দুজনে মিলে একদিন ২৫৭ টাকা পকেটে দিলো। বললো, ‘যা, ঢাকায় যা। তুই পারবি।’
আমি বিশ্বাস করলাম, আমি পারবো। কী বোকার মতো সিদ্ধান্ত!
মনে মনে ভাবতে থাকলাম আমি পারবো। অন্ধের মতো বিশ্বাস করলাম আমি পারবো। কারণ, আসিফ আর ইমতিয়াজ বলেছে। শুধু তারা একটি কথা বলেছে, ‘তোর মধ্যে কিছু একটা আছে। তুই যা।’
তারা কিছু জানে না। ঢাকার সংগ্রাম, ইন্ডাস্ট্রি- কিছুই না। তবুও আমি তাদের কথায় ভরসা করে ২৫৭ টাকা নিয়ে ঢাকার ট্রেন ধরি।
কী এক ঘোরের মধ্যে সেটা ঘটেছিল। নইলে আজকের আরিফিন শুভ হয়ে ওঠা হতো না আমার।
আমার বাবা ইঞ্জিনিয়ার। মাও চাকরি করতেন। কিন্তু হঠাৎ তখন ঘর থেকে বের হয়ে এসেছিলাম। সবসময় চেয়েছিলাম নিজে কিছু করবো। কিন্তু আমি কিছু করবো এটা আমার ফ্যামিলি সাপোর্ট করেনি!
এরপর ঢাকার জীবন শুরু হলো। তখন খুব ছোট ছোট কাজ করেছি। একটা প্রোডাকশন হাউসে কাজ করেছি দেড় বছর। তাও চতুর্থ, পঞ্চম শ্রেণির সহকারী পরিচালক হিসেবে। নামমাত্র অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর হলেও কাজটা প্রোডাকশন বয়েরই ছিল। তারপর আমি গলা বেচেছি। অনেক বিজ্ঞাপনে আমার ভয়েস দিয়েছে। গানও গেয়েছি। এভাবেই আস্তে আস্তে এগুতে থাকি।
একটা থেকে আরেকটা কাজ কতটা ভালো করা যায় সেটার জন্য লড়াই করতে থাকি। সেভাবেই আমি আজকের আরিফিন শুভ হতে পেরেছি। আমি আমাকে বহুবার বহুভাবে স্যাক্রিফাইস করেছি।
তবে শুরুতে আমার দুই বন্ধু যদি না থাকতো, যদি না ওভাবে বলতো ‘তুই পারবি’, তাহলে হয়তো আমার আর কিছু হয়ে ওঠা হতো না।

অনুলিখন: ওয়ালিউল বিশ্বাস