তার সঙ্গে প্রথম দেখা হয় বীরভূম-শান্তিনিকেতনের একটি আউটডোর লোকেশনে। সেখানে উনার পোশাক-আশাকের গেটআপ দেখে আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম। তিনি খুব আদর করে কাছে ডেকে বললেন, ‘তুমি জানো, আমি যে গঙ্গাচরণ আর তুমি হচ্ছ গিয়ে অনঙ্গ বউ? আমরা একসঙ্গে কাজ করছি।’
আগেই বলেছি, আমি তখন নতুন আর সৌমিত্র দা তখন স্টার। কিন্তু সেটে উনি খুব সহযোগিতা করতেন। হয়তো আমার সংলাপ আছে, উনি আমার সাইডে চলে যেতেন। আবার আমার সংলাপটাই আস্তে আস্তে করে উচ্চারণ করতেন। মনে হতো আমাকে শিখিয়ে দিচ্ছেন। এতে এক্সপ্রেশন দিতে যে কী সুবিধা হতো তা বলে বোঝানোর নয়।
আমি ঈদের কথাটি বললাম। তখন তিনি বললেন, ‘আরে আমরা আছি না। তুমি কাজ করো।’
এরপর সন্ধ্যায় এলাহি কাণ্ড হলো। বাজি আনা হলো, সেমাই-লাচ্ছা এলো। শুটিং সেটে পুরো ঈদের আমেজ তৈরি করলেন। আমরা অন্যরকম সন্ধ্যা কাটালাম। তিনি বললেন, ‘কি মন ভালো হয়েছে?’
উনার এই যে সুন্দর-সুন্দর ব্যবহার আমাকে আরও মুগ্ধ করে তুলতো।
দেখলাম, উনি এত আপন করে নিয়েছেন, মোটেও আমার খারাপ লাগেনি।
সৌমিত্র দাদার অনেক গুণ ছিল। খুব সুন্দর করে বুঝিয়ে কথা বলাটা তার অন্যতম একটি। শুটিংয়ের ফাঁকে তিনি কবিতা আবৃত্তি করতেন। মাঝে মধ্যে শরীরচর্চাও করতেন। সবসময় ব্যস্ত থাকতেন, যেন সাধনা করতেন।
দাদা আমাকে নিয়ে অনেক ইন্টারভিউতে ভালো ভালো কথা বলতেন। এ কথাগুলো এখন খুব মনে পড়ছে। এত বড় একজন শিল্পী চলে গেলেন- মেনে নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে। উনি আসলে আমাদের সবার অভিভাবক ছিলেন, বটবৃক্ষ। তার সুশীতল ছায়ায় আমরা ছিলাম। এই নরম স্নেহ খুব মিস করবো। আমাদের ছায়াবৃক্ষ সৌমিত্র দাদা ভালো থাকুন।