স্মরণে সৌমিত্র

‘এই নরম স্নেহ খুব মিস করবো’

125764843_2420078118138834_6121867549407959892_n১৯৭৩ সালে সত্যজিৎ রায়ের ‘অশনি সংকেত’ সিনেমায় কাজ করতে গেলাম, তখনই সৌমিত্র দাদার সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয়। তখন আমার বয়স বেশ কম, ১৫-১৬ বছর হবে।
তার সঙ্গে প্রথম দেখা হয় বীরভূম-শান্তিনিকেতনের একটি আউটডোর লোকেশনে। সেখানে উনার পোশাক-আশাকের গেটআপ দেখে আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম। তিনি খুব আদর করে কাছে ডেকে বললেন, ‘তুমি জানো, আমি যে গঙ্গাচরণ আর তুমি হচ্ছ গিয়ে অনঙ্গ বউ? আমরা একসঙ্গে কাজ করছি।’
125206124_656164488375589_4692734449587315317_nআমার মনে আছে, পানিতে আমি একটি দৃশ্য ভুল করে ফেললাম। বুঝতে পেরে, আলতো করে জিভটা কামড় দিলাম। উনি দূর থেকে দেখে কাছে এসে বললেন, তুমি খুব সুন্দর এক্সপ্রেশন দাও। আমার খুব ভালো লেগেছে।
আগেই বলেছি, আমি তখন নতুন আর সৌমিত্র দা তখন স্টার। কিন্তু সেটে উনি খুব সহযোগিতা করতেন। হয়তো আমার সংলাপ আছে, উনি আমার সাইডে চলে যেতেন। আবার আমার সংলাপটাই আস্তে আস্তে করে উচ্চারণ করতেন। মনে হতো আমাকে শিখিয়ে দিচ্ছেন। এতে এক্সপ্রেশন দিতে যে কী সুবিধা হতো তা বলে বোঝানোর নয়।
124930671_974064119757526_5551398558421328752_nবীরভূমের গ্রামে আমাদের শুটিং হতো। শুট করতে করতে ঈদ চলে এলো। আমার তো ভীষণ মন খারাপ। এমনিতেই বয়স কম। তার ওপর দেশের বাইরে। বিষয়টি চোখ এড়ায়নি সৌমিত্র দার। কাছে এসে বললেন, ‘ববিতা মন খারাপ কেন?’
আমি ঈদের কথাটি বললাম। তখন তিনি বললেন, ‘আরে আমরা আছি না। তুমি কাজ করো।’
এরপর সন্ধ্যায় এলাহি কাণ্ড হলো। বাজি আনা হলো, সেমাই-লাচ্ছা এলো। শুটিং সেটে পুরো ঈদের আমেজ তৈরি করলেন। আমরা অন্যরকম সন্ধ্যা কাটালাম। তিনি বললেন, ‘কি মন ভালো হয়েছে?’


উনার এই যে সুন্দর-সুন্দর ব্যবহার আমাকে আরও মুগ্ধ করে তুলতো।
দেখলাম, উনি এত আপন করে নিয়েছেন, মোটেও আমার খারাপ লাগেনি।
সৌমিত্র দাদার অনেক গুণ ছিল। খুব সুন্দর করে বুঝিয়ে কথা বলাটা তার অন্যতম একটি। শুটিংয়ের ফাঁকে তিনি কবিতা আবৃত্তি করতেন। মাঝে মধ্যে শরীরচর্চাও করতেন। সবসময় ব্যস্ত থাকতেন, যেন সাধনা করতেন।
125201531_5310791702279630_8934119287240424203_nসৌমিত্র দাদা প্রায়ই ঢাকায় আসতেন। তিন চার বছর আগে একটা আয়োজন হলো, সেখানে আমাকেও ডাকা হলো। অনেক দিন পর দাদাকে কাছে পেয়ে একেবারে জড়িয়ে ধরেছিলাম। সে যে কী অনুভূতি বোঝাতে পারবো না।
দাদা আমাকে নিয়ে অনেক ইন্টারভিউতে ভালো ভালো কথা বলতেন। এ কথাগুলো এখন খুব মনে পড়ছে। এত বড় একজন শিল্পী চলে গেলেন- মেনে নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে। উনি আসলে আমাদের সবার অভিভাবক ছিলেন, বটবৃক্ষ। তার সুশীতল ছায়ায় আমরা ছিলাম। এই নরম স্নেহ খুব মিস করবো। আমাদের ছায়াবৃক্ষ সৌমিত্র দাদা ভালো থাকুন।