রাজনীতির মাঠে কবরীর সঙ্গে আলাপের বাইরে আলাপ!

চিত্রনায়িকা কবরী তখন পর্দা থেকে নেমে রাজনীতির মাঠে তুমুল ব্যস্ত। সময়টা ২০১১ সাল। সারাদিন সংবাদ সম্মেলন, ভক্তকুল আর প্রতিপক্ষ সামলে- সময় কই গল্প করার! হোক সেটা সাংবাদিক বা স্বজন।

আক্ষরিক অর্থে এমন দম ফেলতে না পারা সময়ে কবরীর কাছ থেকে তার রাজনৈতিক অফিসে কিছুটা সময় পাওয়া গেল! যেখানে তিনি কথায় কথায় রাজনীতির ভেতর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে শিল্পী জীবনের চৌরাস্তায় এসে দাঁড়ালেন! আলাদা করলেন পর্দার ‘মিষ্টি মেয়ে’ আর রাজনীতির ‘অগ্নি কন্যা’র খেতাব।

রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ এবং বিভিন্ন স্তরে নিজেদের অবস্থান করে নেওয়ার জন্য যে লড়াই- সেটি তুলে ধরেছেন অকপটে। রাজনীতি করতে এসে ‘মিষ্টি মেয়ে’ তেতো হয়ে যাচ্ছে কিনা- এমন প্রশ্নে তিনি মিষ্টি করেই হাসলেন। বলেছিলেন, ‘মেয়ে মানুষ সবসময় মিষ্টি হলে বিপদ। তাকে তখন কেউ সিরিয়াসলি নিতে চায় না।’

সেটা কী রকম?

‘ধরো আমি মিষ্টি মেয়ে হিসেবে একটা পরিচিতি পেয়েছি। কিন্তু যখন আমি রাজনৈতিক ময়দানে, তখন আমার সেই পরিচয়টা ক্ষতির কারণ হতে পারে।’

হয়েছে কি?

মাঠে হয়নি, কাছাকাছি মানুষদের কাছে হয়েছে। আমি যাদের সাথে কাজ করছি বা করবো, তাদের মনে আমার সম্পর্কে একটা ধারণা তৈরি হয়েছে বছরের পর বছর ধরে। ফলে তাদের বোঝাতে হচ্ছে, সেলুলয়েডে যা দেখা যায় সেটা সত্যি না। বুঝাতে পারলাম? তাই ‘মিষ্টি মেয়ে’ পরিচয়ের একটু ঝামেলাও আছে।

আর নারীর লড়াইয়ের কথা বলছিলেন। আপনাকে কী ধরনের লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে আসতে হয়েছে বা এখনও লড়াইটা কার সঙ্গে করতে হচ্ছে?

নারীর লড়াইটা তো চলেই। আমাকে যেসব পরিস্থিতির মধ্যদিয়ে যেতে হয়েছে সেসবের কয়টা ফেস করেছেন আমার সাথের পুরুষ শিল্পীরা? করেননি। কিংবা যখন আমি রাজনীতি করতে এসেছি এবং আমার প্রতিপক্ষ আমাকে যেভাবে ঘায়েল করতে চেয়েছে, অন্যকোনও প্রতিপক্ষকে তারা সেভাবে ঘায়েল করতে চেয়েছে বা পেরেছে কি? নারীর জন্য পথটা কঠিনই। সেটা যে পথই হোক।

তাহলে ‘মিষ্টি মেয়ে’ বিশেষণে আপনি আপত্তি করেন না কেন?

এটা আমার একটা অর্জন। মানুষ আমাকে এভাবে বলতে ভালোবাসে। শোবিজের শিল্পী তার পরিচিতি তৈরি হলে সেটা নিয়ে আপত্তি জানাবে না, এটা আমরা শিখেছি। স্টার সবকিছুতে কথা বলবে না, কিন্তু কিছু কিছুতে বলবে। আমারও ভালো লাগে। কিন্তু মিষ্টি মেয়ে হলে এটা এটা করতে হবে, এই এই করা যাবে না- সেই জিনিসটা থেকে আমাদেরকে বের হতে হবে। মিষ্টি মেয়ে-ও যে সময়ে অসময়ে তেতো হতে পারে- সেটি সবার মাথায় রাখতে হবে।

যে মেয়েরা সাংবাদিকতা করে তাদের আমার অন্যরকম ভালো লাগে। কিন্তু সময় বদলে যেতে শুরু করেছে। মানুষের জন্য মানুষের চোখে সম্মান কমে আসছে। সেটা ভাল লক্ষণ না উল্লেখ করে চটকরে সেই চেনা কাঁধ বাঁকিয়ে ঠোঁটের কোনে হালকা হাসি মেখে কবরী সেদিন বললেন, ‘আমার সাথে ছবি তুলে নিয়ে যেও কিন্তু!’কবরীর মুখোমুখি উদিসা ইসলাম

সেই ছবি একবছর পর কবরীই ফোন কল করে চেয়েছিলেন। প্রায় ধমকের সুরে বলেছিলেন- ছবি প্রিন্ট করে দেওয়ার কথা ছিল। দিলে না তো আমায়! আর সাক্ষাতকার যে নিলা, ছাপলা না?

জবাবে, এই প্রতিবেদক ছিলো নিরুত্তর! উত্তর যেটুকু দরকার সেটুকু বুঝে নিলেন রাজনীতি মাঠের ‘অগ্নিকন্যা’ সারাহ বেগম কবরী। পরে সাক্ষাতকারটি ছাপা হয়েছে বটে, তবে এই আলাপগুলো ছিলো লেখার বাইরে- আলাপের বাইরের আলাপ হিসেবে। সেটিও আজ প্রকাশ না করার লোভ সামলানো গেলো না; জানি না তিনি পড়বেন কি না!

টানা ১২ দিন করোনাভাইরাসের সঙ্গে যুদ্ধ করে হেরে গেছেন কিংবদন্তি অভিনেত্রী সারাহ বেগম কবরী (৭০)। শুক্রবার দিবাগত রাত (১৭ এপ্রিল) ১২টা ২০মিনিটে রাজধানীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।

লেখক: প্রধান প্রতিবেদক, বাংলা ট্রিবিউন