বিদেশি শিল্পী-কুশলী নিয়ে কাজ করতে যা মানতে হবে

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ও বিজ্ঞাপনে বিদেশি অভিনয়শিল্পী, কলাকুশলী, সংগীতশিল্পীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সরকারের দেওয়া সুনির্দিষ্ট নিয়মনীতি মানতে হবে। এমন নির্দেশনা দিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা প্রণয়ন করেছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, নীতিমালায় দেশীয় চলচ্চিত্র বিদেশে শুটিং এবং বিদেশে শুটিংয়ের সময় যন্ত্রপাতিসহ বাংলাদেশ ও বিদেশি অভিনয়শিল্পী ও কলাকুশলীদের অংশগ্রহণের বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে পূর্বানুমোদন গ্রহণ করতে হবে।

চলচ্চিত্রের গল্প ও চিত্রনাট্য অনুযায়ী বিদেশে শুটিংয়ের প্রয়োজন আছে কিনা, এতদসংক্রান্ত খরচের বিবরণী যথাযথ কিনা ইত্যাদি বিষয়ে খতিয়ে দেখতে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে (প্রশাসন ও চলচ্চিত্র) প্রধান করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠনের কথাও বলা হয়েছে।
জানা গেছে, উপ-সচিব (চলচ্চিত্র-১), তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় গত ১ জুন এ নীতিমালা প্রকাশিত করেছে। অতি জরুরি বলে নীতিমালাটি ওইদিনই বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রীর বরাবর পাঠানো হয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সদ্য সাবেক সচিব খাজা মিয়া স্বাক্ষরিত নীতিমালায় ২০২১ (সংশোধিত) বলা হয়েছে, দেশীয় চলচ্চিত্রে সরকারের পূর্বানুমতি সাপেক্ষে বিদেশি অভিনয়শিল্পী, কলাকুশলী, সংগীতজ্ঞ, সংগীতশিল্পী ও বিজ্ঞাপনে বিদেশি শিল্পী অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন। তারা সরকারের পূর্বানুমতি সাপেক্ষে বিদেশি অভিনয়শিল্পী, কলাকুশলী, সংগীতজ্ঞ ও সংগীত শিল্পী যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত চলচ্চিত্রে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।

দেশীয় পণ্যের বিজ্ঞাপন নির্মাণে সরকারের পূর্বানুমতিক্রমে বিদেশি শিল্পী অংশগ্রহণ করতে পারবেন। এ বিষয়ে অনুমোদনের জন্য বিজ্ঞাপন নির্মাতা কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সরাসরি এবং চলচ্চিত্র নির্মাণসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট প্রযোজক বা পরিচালক বা প্রতিষ্ঠানকে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে আবেদন দাখিল করতে হবে। এ ধরনের বিদেশি শিল্পীর অংশগ্রহণের মাধ্যমে বিজ্ঞাপনচিত্র তৈরির ক্ষেত্রে নির্মাণ প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিকে প্রতি বিদেশি শিল্পীর জন্য ২ (দুই) লক্ষ টাকা ফি (ভ্যাট ও আয়কর ব্যতীত) এবং নির্মিত বিজ্ঞাপন প্রচারের সময় টিভি চ্যানেল কর্তৃক এককালীন প্রতি বিজ্ঞাপনের জন্য ২০ (বিশ) হাজার টাকা ফি হিসেবে সরকারকে প্রদান করতে হবে, দেশীয় চলচ্চিত্র বিদেশে শুটিং এবং বিদেশে শুটিংয়ের সময় যন্ত্রপাতিসহ বাংলাদেশ ও বিদেশি অভিনয় শিল্পী ও কলাকুশলীদের অংশগ্রহণের বিষয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় থেকে পূর্বানুমোদন গ্রহণ করতে হবে। এ অনুমোদন প্রদানের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত কমিটি যাচাই-বাছাই করে সুপারিশ প্রদান করবে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট চলচ্চিত্রের গল্প ও চিত্রনাট্য অনুযায়ী বিদেশে শুটিংয়ের প্রয়োজন আছে কিনা, এতদসংক্রান্ত খরচের বিবরণী যথাযথ কিনা ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করবে।
কমিটির প্রধান হবেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন ও চলচ্চিত্র)। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (চলচ্চিত্র), স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ জননিরাপত্তা বিভাগের একজন উপযুক্ত প্রতিনিধি, বিএফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের একজন প্রতিনিধি, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির সভাপতি ও তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব (চলচ্চিত্র-১)।
নীতিমালয় বলা হয়েছে, বিনা পারিশ্রমিকে বিদেশি অভিনয়শিল্পী, কলাকুশলী, সংগীতজ্ঞ, সংগীতশিল্পী ও বিজ্ঞাপনে বিদেশি শিল্পীদের অভিনয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ করা যাবে না। শিল্পীদের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তিপত্রে পারিশ্রমিকের পরিমাণ ও পারিশ্রমিক পরিশোধের পদ্ধতি উল্লেখ থাকতে হবে। বিদেশি অভিনয়শিল্পী, কলাকুশলী, সংগীতজ্ঞ, সংগীতশিল্পী ও বিজ্ঞাপনে বিদেশি শিল্পীদের প্রাপ্ত সম্মানী দেশের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী আয়কর ও ভ্যাটের আওতাভুক্ত হবেন।

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের নিকট চিত্রনাট্য পেশ করার সময় বিদেশি অভিনেতা বা অভিনেত্রী বা কলাকুশলীদের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তিপত্রের নোটারাইজ কপিসহ প্রয়োজনীয় আনুষঙ্গিক কাগজপত্র পেশ করতে হবে। দাখিলকৃত প্রস্তাব পর্যালোচনার পর অনুমোদনযোগ্য বলে প্রতীয়মান হলে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন অভিনয়শিল্পী, কলাকুশলী, সংগীতজ্ঞ, সংগীতশিল্পীদের অংশগ্রহণের অনুমতি প্রদানের জন্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে সুপারিশসহ প্রেরণ করবে।
নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, বিজ্ঞাপনে বিদেশি শিল্পীদের অভিনয়ের অনুমতির জন্য বিদেশি শিল্পী বা কলাকুশলীদের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তিপত্রের নোটারাইজড কপি এবং প্রয়োজনীয় আনুষঙ্গিক কাগজপত্রসহ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে হবে।

অনুমোদনের জন্য সুপারিশকৃত বিদেশি অভিনয়শিল্পী, কলাকুশলী, সংগীতজ্ঞ, সংগীতশিল্পী ও বিজ্ঞাপনে বিদেশি শিল্পীদের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় থেকে ‘ওয়ার্কপারমিট’ গ্রহণ করতে হবে। সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে স্থানীয় চলচ্চিত্রে বিদেশি কণ্ঠশিল্পীর গাওয়া গান ব্যবহার করা যাবে। বিদেশি অভিনয়শিল্পী, কলাকুশলী, সংগীতজ্ঞ, সংগীতশিল্পী ও বিজ্ঞাপনে বিদেশি শিল্পী সরকার কর্তৃক অনুমোদিত সময় পর্যন্ত বাংলাদেশে অবস্থান করবেন। সরকারি অনুমোদন ব্যতীত তিনি বা তারা ভিন্ন কোনও ছবির কাজে বা বেসরকারি কোনও অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। অনিবার্য কারণবশত পূর্বানুমোদিত শিল্পীর পরিবর্তন প্রয়োজন হলে বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে সরাসরি এবং চলচ্চিত্রসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের মাধ্যমে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের পূর্বানুমোদন গ্রহণ করতে হবে।

বিদেশি অভিনয়শিল্পী, কলাকুশলী, সংগীতজ্ঞ, সংগীতশিল্পী ও বিজ্ঞাপনে বিদেশি শিল্পীদের এ দেশে আগমন, অবস্থান ও প্রত্যাবর্তনের দৈনিক শিডিউল পূর্বাহ্নেই প্রযোজক বা নির্মাতা প্রতিষ্ঠান লিখিতভাবে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় বা বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনকে অবহিত করবেন। শিডিউলের কোনও পরিবর্তন হলে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বা প্রযোজক লিখিতভাবে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় বা বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনকে অবহিত করবেন।

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে অবহিত করবে এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় প্রয়োজনবোধে জাতীয় নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহকে অবগত করবে। কোনও শর্ত লঙ্ঘন করা হলে সরকার সংশ্লিষ্ট চলচ্চিত্র বা বিজ্ঞাপন নির্মাণের বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে তা চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।
এ নীতিমালা যথাযথভাবে অনুসরণপূর্বক দেশীয় চলচ্চিত্রে বিদেশি অভিনয়শিল্পী, কলাকুশলী, সংগীতজ্ঞ, সংগীতশিল্পী ও বিজ্ঞাপনে বিদেশি শিল্পী অংশগ্রহণ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে তাদের কার্যক্রমে নিম্নলিখিত বিষয়সমূহ পরিলক্ষিত হলে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রদত্ত অনুমতি বাতিল করা হয়েছে মর্মে গণ্য হবে। যেমন-

নিরাপত্তা বা আইন শৃঙ্খলা বিষয়ে নীতিমালায় বলা হয়েছে:

বাংলাদেশ বা বাংলাদেশের জনগণ, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি রীতি নীতি এবং পোশাক-আশাকের প্রতি যদি কোনভাবে ঘৃণার উদ্রেক করে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা বা সংহতি নষ্ট হয় এমন মনোভাব ব্যক্ত করা হলে। দেশের শৃঙ্খলা এবং নিরাপত্তার স্বার্থে বিভিন্ন সময়ে সরকার কর্তৃক ঘোষিত যে কোনও নির্দেশ লঙ্ঘন করা হলে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কোনও বিদ্রোহ, নৈরাজ্য এবং হিংসাত্মক ঘটনার প্রদর্শন করা হলে। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার ক্ষতি করতে পারে এমন সামরিক বা অন্যান্য সরকারি গোপনীয় কিছু প্রকাশ করা হলে। আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ করে এবং আইন অমান্য করার পক্ষে প্ররোচিত করে এমন কিছু প্রদর্শিত হলে। প্রতিরক্ষা বাহিনী, পুলিশ বা অন্য কোনও বাহিনীর সদস্য যারা দেশের শৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিত তাদের উপহাস করা হলে অথবা তাদের প্রতি ঘৃণার উদ্রেক করে এমন কিছু করা হলে। তবে এসব বাহিনীর লোকদের নিয়ে যদি কোনও চরিত্র চিত্রায়ণ করা হয়, যা খারাপ জিনিসের দূষণমুক্ত করার উদ্দেশ্যে নিবেদিত তা অনুমোদনযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। প্রতিরক্ষা বাহিনী বা পুলিশ বাহিনীর লোকদের কুৎসিত পোশাকে প্রদর্শন করা হলে এবং দুর্বল ও অসম্পূর্ণ গল্পের মাধ্যমে যদি আইন শৃঙ্খলার অভাব, হিংসাত্মক কার্যকলাপ অপরাধ বা গোয়েন্দা তৎপরতা প্রদর্শন করা হয় এবং যা গড়পড়তা দর্শককে প্রভাবিত করার সম্ভাবনা থাকলে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রদত্ত অনুমতি বাতিল করা হয়েছে মর্মে গণ্য হবে।


আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নীতিমালায় বলা হয়েছে:

কোনও বিদেশি রাষ্ট্র যার সঙ্গে বাংলাদেশের কোনও বিষয়ে বিরোধ বিদ্যমান সেই রাষ্ট্রের পক্ষে কোনও প্রচারণা করা যা ওই বিরোধের বিষয়ের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে; অথবা কোনও বন্ধু দেশের বিরুদ্ধে কিছু প্রচার করা যা বাংলাদেশ ও সে দেশের সুসম্পর্ক নষ্ট করতে পারে; রাষ্ট্রনীতি লঙ্ঘন করলে অর্থাৎ এমন কিছু দেখানো হলে যা অন্যান্য দেশের সঙ্গে আমাদের দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নষ্ট করতে পারে অথবা বহির্বিশ্বের সংবেদনশীল মনোভাব ক্ষুণ্ণ করতে পারে; কোনও জনগোষ্ঠী বা জাতির ইতিহাসকে বিকৃত করে বা ইতিহাসকে সম্মানহানি করে এমন কিছু ঘটনা বা প্রসঙ্গে বিদ্বেষপরায়ণ মনোভাব নিয়ে প্রকাশ করা এবং স্বাধীনতার চেতনা ও মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ ঐতিহাসিক ঘটনার বিকৃত প্রকাশের মাধ্যমে বাংলাদেশ, দেশের আদর্শ ও জাতীয় বীর পুরুষদের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করা হলে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রদত্ত অনুমতি বাতিল করা হয়েছে মর্মে গণ্য হবে।

ধর্মের সংবেদনশীলতা সম্পর্কে নীতিমালায় বলা হয়েছে:
কোনও ধর্মকে উপহাস, অসম্মান বা আক্রান্ত করা হলে। ধর্মীয় সম্প্রদায়, বর্ণ বা বিভিন্ন ধর্ম মতের মানুষের মধ্যে বিদ্বেষের সৃষ্টি করা এবং বিবাদ বাধানোর প্ররোচনা দেওয়া হলে। বিতর্কিত সামাজিক বিষয়কে সমালোচনা বা সমর্থন করার জন্য ধর্মকে ব্যবহার করা হলে। ধর্মমত প্রচারের কার্যকলাপকে উপহাস বা ব্যাখ্যা করা যা সে ধর্মের বিশ্বাসীদের অনুভূতিকে আহত করলে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রদত্ত অনুমতি বাতিল করা হয়েছে মর্মে গণ্য হবে।

নৈতিকতাহীন বা অশ্লীলতা সম্পর্কে নীতিমালায় বলা হয়েছে:
নৈতিকতা বিবর্জিত ক্রিয়াকলাপকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখা এবং গুরুত্ব কম দেওয়া। নৈতিকতা বিবর্জিত জীবনকে অতিমাত্রায় গুরুত্ব আরোপ করা। আকর্ষণীয় ও সম্মানজনক করে দেখানো। নষ্ট ও নৈতিকতাহীন চরিত্রকে প্রশংসা করা এবং সহানুভূতির চোখে দেখা। জঘন্য পথে অর্জিত কোনও কিছুর সাফল্য সহজভাবে গ্রহণ করা এবং সমর্থন করা। প্রকৃত অর্থে দৈহিক মিলন, ধর্ষণ বা গভীর ভালোবাসার দৃশ্য যা অশ্লীলতা দুষ্ট বলে মনে হবে তা প্রকাশ করা। নোংরা ও অশ্লীল ব্যাখ্যা করা যেতে পারে এমন শব্দ, উক্তি, সংলাপ, গান বা বক্তব্য তুলে ধরা এবং জাতীয় প্রতিষ্ঠান, ঐতিহ্য রীতিনীতি এবং সংস্কৃতি যে কোনও দিকের অশোভন প্রকাশ করলে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রদত্ত অনুমতি বাতিল করা হয়েছে মর্মে গণ্য হবে।

বর্বরতা বিষয়ে নীতিমালায় বলা হয়েছে:
জীবজন্তুর প্রতি নির্দয়তা ঢালাওভাবে প্রকাশ করা, অতিমাত্রায় ভয়ভীতি, নির্যাতন বা নিষ্ঠুরতা প্রকাশ করা যা দর্শকদের মনের ওপর খারাপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। কোনও চরম প্রকৃতির পথে কোনো কিছু সমাধান দেখানো, যদি না তা সমাজের কল্যাণের জন্য করা হয় এবং সর্তকতা অবলম্বনের লক্ষ্যে সরকারের পূর্বানুমতি ব্যতীত শিশু-কিশোর, বৃদ্ধ বা অসুস্থ নর-নারীর স্নায়ুর ওপর ক্ষতিকারক চাপ সৃষ্টি মত দৃশ্যে ও শব্দগ্রহণ করা হলে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রদত্ত অনুমতি বাতিল করা হয়েছে মর্মে গণ্য হবে।

অপরাধ সম্পর্কে নীতিমালায় বলা হয়েছে:
অপরাধমূলক কাজকে ক্ষমা করা, অপরাধীর অপরাধ করার কৌশল ও কার্যপ্রণালি এমনভাবে ‘দেখানো’ যা নতুন অপরাধের কৌশল সৃষ্টিতে সহায়ক হবে। অপরাধীকে সম্মানজনক চরিত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা এবং দর্শকদের থেকে সহানুভূতি আদায়। অপরাধ দমন, অপরাধীর শাস্তি অথবা তাদের বিচার করার দায়িত্বে নিয়োজিত সরকারি কর্মকর্তাকে বিদ্বেষপূর্ণভাবে উপহাস করা বা মর্যাদাহানি ঘটানো। অপরাধমূলক কার্যকলাপকে লাভজনক করে দেখানো অথবা সাধারণ জীবন প্রবাহের নিত্যনৈমিত্তিক সহজ ব্যাপার হিসেবে প্রদর্শন। যুব সম্প্রদায় এবং তরুণদের কাছে অপরাধকে সাধারণ জীবনের সহজ ঘটনা হিসেবে পরিচিত করানো এবং এমন করে দেখানো যেনো এমন অপরাধকে পরিত্যাগ করার প্রয়োজন সমাজে নেই। নারী ও শিশু পাচার, নেশা, মদ, ওষুধের যেকোনও ধরনের চোরাকারবারের পক্ষে সমর্থন দেওয়া হলে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রদত্ত অনুমতি বাতিল করা হয়েছে মর্মে গণ্য হবে।

নকল গান ও সুর বিষয়ে নীতিমালায় বলা হয়েছে:
অপরিহার্যতা ব্যতীত কোনও পুরনো বা নির্মাণাধীন বিদেশি অথবা বাংলাদেশি গান ও সুর থেকে যেকোনও ধরনের নকল করা হলে; দেশীয় চলচ্চিত্রে বিদেশি অভিনয়শিল্পী, কলাকুশলী, সংগীতজ্ঞ, সংগীতশিল্পী ও বিজ্ঞাপনে বিদেশি শিল্পী সংক্রান্ত বিষয়ে কোনও জটিলতা দেখা দিলে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত প্রদান করবে এবং নীতিমালায় প্রয়োজনবোধে কোনোরূপ পরিবর্তন, পরিমার্জন, সংযোজন ইত্যাদি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় করতে পারবে।

এ নীতিমালা অবিলম্বে কার্যকর হবে বলেও নীতিমালায় উল্লেখ রয়েছে।