খোন্দকার নূরুল আলম আর নেই

খোন্দকার নূরুল আলমখ্যাতিমান সুরস্রষ্টা ও কণ্ঠশিল্পী খোন্দকার নূরুল আলম আর নেই। শুক্রবার (২২ জানুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন (ইন্নালিল্লাহ…রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিলো প্রায় ৮০ বছর। স্বনামধন্য এ শিল্পীর মৃত্যুতে দেশীয় সংগীতাঙ্গনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।


পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) অসুস্থবোধ করলে খোন্দকার নূরুল আলমকে রাজধানীর ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টায় তিনি না ফেরার দেশে চলে যান।

খোন্দকার নূরুল আলম ‘শুভদা’সহ বিভিন্ন ছবিতে গান তৈরি করে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন একাধিকবার। পেয়েছেন একুশে পদকও। ‘চোখ যে মনের কথা বলে’, ‘এতো সুখ সইবো কেমন করে’, ‘তুমি এমনই জাল পেতেছো সংসারে’, ‘আমি চাঁদকে বলেছি আজ রাতে’, ‘কাঠ পুড়লে কয়লা হয়’, ‘এক বরষার বৃষ্টিতে ভিজে’ প্রভৃতি কালজয়ী সুর তৈরি করেছেন এ সুরস্রষ্টা।

১৯৩৬ সালের ১৭ আগস্ট ভারতের আসাম রাজ্যের গোয়ালপাড়া জেলার ধুবড়ী মহকুমায় জন্মগ্রহণ করেন খোন্দকার নূরুল আলম। বাবা নেসারউদ্দিন খোন্দকার ও মা ফাতেমা খাতুনের দ্বিতীয় সন্তান তিনি। মাকে হারান ১৯৪৮ সালে, ১২ বছর বয়সে। একই বছর পুরো পরিবার তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) চলে আসে।

খোন্দকার নূরুল আলম ১৯৫৪ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন নোয়াখালী জিলা স্কুল থেকে, ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন ঢাকার জগন্নাথ কলেজ থেকে। স্থান পেয়েছিলেন ম্যাট্রিক ও ইন্টারমিডিয়েটে মেধাতালিকায়। ইন্টারমিডিয়েট পাস করার পর সংগীতই হয়ে উঠেছিলো তার ধ্যানজ্ঞান। এরই মধ্যে ১৯৫৭ সালে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন বিভাগে।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষে ১৯৫৯ সালে রেডিও’র সঙ্গে যুক্ত হন খোন্দকার নূরুল আলম। ১৯৬০ সালে তিনি ‘হিজ মাস্টারস ভয়েস’ গ্রামোফোন কোম্পানির সঙ্গে সুরকার হিসেবে যোগদান করেন। বিটিভির জন্মলগ্ন থেকেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি।

‘ইস্ ধরতি পার’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সংগীত পরিচালক হিসেবে যুক্ত হন খোন্দকার নূরুল আলম। ১৯৬৮ সালে ‘অন্তরঙ্গ’ ও ‘যে আগুনে পুড়ি’ বাংলা ছবিতে সংগীত পরিচালনা করেন তিনি। সে সময় ‘যে আগুনে পুড়ি’র ‘চোখ যে মনের কথা বলে’ গানটি তুমুল জনপ্রিয়তা পায়।

এরপর আর থেমে থাকেননি, স্বাধীনতার পর ‘ওরা ১১ জন’ ছবির সংগীত পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন খোন্দকার নূরুল আলম। অসংখ্য কালজয়ী ছবিতে রয়েছে তার সুর করা ও গাওয়া গান। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- ‘সংগ্রাম’, ‘জলছবি’, ‘দেবদাস’, ‘চন্দ্রনাথ’, ‘শুভদা’, ‘বিরাজ বৌ’, ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা’, ‘শঙ্খনীল কারাগার’ প্রভৃতি।

 সংগীতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ একুশে পদক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, বাচসাস পুরস্কার, চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতি পুরস্কার, শহীদ আলতাফ মাহমুদ স্মৃতি পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হন খোন্দকার নূরুল আলম।

রাজধানীর ধানমন্ডির ১৫ নম্বরে পৈতৃক বাড়িতে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে ছিলো তার নিবাস। ১৯৭৬ সালে চট্টগ্রামের মেয়ে কিশ্ওয়ার সুলতানার সঙ্গে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। তাদের এক কন্যা ও এক পুত্রসন্তান।

/এমএম/