কানে পাম গাছের অভাব নেই। পাম গাছই এই শহরের নিদর্শন। সেজন্য কান চলচ্চিত্র উৎসবের সর্বোচ্চ পুরস্কার স্বর্ণপাম দেখতে পাম গাছের পাতার মতো।
মুজা গ্রাম থেকে পালে দে ফেস্টিভাল ভবনের দিকে যাওয়ার সময় মনে হলো, কানে যত পাম গাছ আছে সেসব থেকে উৎপাদন করে প্রচুর পাম তেল পাওয়া যেতে পারে! ইউক্রেন-রাশিয়া সংকটে ফ্রান্সেও তেলের দাম বেড়েছে কয়েক গুণ।
প্রবাসী রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী সেজান চৌধুরী জানালেন, আগে ২৫ লিটার তেল কিনতেন ৫২ ইউরোতে। ইউক্রেন যুদ্ধের পর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪৪ ইউরো। তাও দোকানে তেল পাওয়া যাচ্ছে না! এ কারণে কান শহরের রেস্তোরাঁগুলোতে অনেক মেন্যু বিক্রি বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। ভেজিটেবল তেল ও অলিভ তেল দিয়ে কোনোরকম কাজ সেরে নিচ্ছেন সবাই। স্বাভাবিকভাবে খাবারের দাম বেড়ে গেছে। তবুও রেস্তোরাঁয় উপচেপড়া ভিড়। এছাড়া উপায়ও নেই। সাগরপাড়ের শহর কানের প্রায় সব হোটেল ও গেস্টহাউস প্রায় ১৫ দিন ধরে কানায় কানায় পূর্ণ। তাদের খাবার-দাবার জোটে এসব রেস্তোরাঁতেই।
আমার অবশ্য খাবার নিয়ে বাড়তি দুশ্চিন্তা নেই। সকাল আর রাত মুজা গ্রামে সেজান চৌধুরী বিশেষ ব্যবস্থা রেখেছেন। তার সহধর্মিণী সাবরিনা পারভীন ডিনারে নিজ হাতে রান্না করে খাওয়ান। দুপুরে বাংলাদেশের দুই সংবাদকর্মী নিপু বড়ুয়া ও গোলাম রাব্বানী অনেকটা জোর করেই বিল দিতে দেন না।
সাগরপাড়ে ঐতিহ্যবাহী লে শুকে’র কাছে পালে দো লা ক্যাস্তরে ঢুকতেই দেওয়া হলো রেড ওয়াইন। অতিথিদের বরণ করে নিতে ফটকের ভেতরে দু’পাশে বাহারি সাজে দাঁড়িয়ে ছিলেন বৃদ্ধারা। সেখানে পা রাখলেই কানে ভেসে আসে ব্যান্ড পার্টির বাজানো বাদ্যযন্ত্রের সুর। ভেতরে ঢুকে বাঁ-দিকে আমন্ত্রণপত্র জমা দিলে হাতে আসে সাজানো অলিভ তেলের বোতল। এটুকু তেলও এই আকালে অনেক মূল্যবান!
টেবিলে সাজানো আছে পিঙ্ক ওয়াইন, পানি, বাগেল, বাটার ও সুস্বাদু ডেজার্ট। মূল প্রতিযোগিতার বিচারকদের নিয়ে মেয়র আসতেই বুফেতে উন্মুক্ত হয়ে গেলো খাবার। মেন্যুতে আছে বরাবরের মতো স্যামন ফিশ, সেদ্ধ আলু, একটুকরো গাজর, একটুকরো শসা, আধেক ডিম এবং নতুন সংযোজন বরবটি।
মেয়রের মধ্যাহ্নভোজের বড় আকর্ষণ কান উৎসবের মূল প্রতিযোগিতা শাখার বিচারকরা। তারা আসতেই সংবাদকর্মীদের মধ্যে ভিডিও ধারণ করা নিয়ে হইচই পড়ে গেলো। বলিউড অভিনেত্রী দীপিকা পাড়ুকোন আমাদের বাংলাদেশ থেকে সংবাদকর্মীদের মধ্যমণি।