প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণে সরকারি অনুদান নিশ্চিতসহ ১০ প্রস্তাবনা

কাহিনিচিত্রের সমপরিমাণ অর্থ ও সংখ্যা সাপেক্ষে প্রতি বছর প্রামাণ্যচিত্রে অনুদান নিশ্চিত করাসহ ১০ দফা প্রস্তাবনা উত্থাপন করেছে চলচ্চিত্র কর্মীরা। সোমবার (৪ জুলাই) শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে জাতীয় চলচ্চিত্র অনুদান প্রক্রিয়ায় অসঙ্গতির প্রতিবাদে চলচ্চিত্র কর্মী সমাবেশে এই দফাগুলো তুলে ধরা হয়। 

চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট ৩৪টি সংগঠন এই সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট প্রাক্তনী সংসদের সাধারণ সম্পাদক রাজন তালুকদার দশ দফা প্রস্তাবনা উত্থাপন করেন। প্রস্তাবনাগুলো হলো- 

১. জাতীয় চলচ্চিত্র অনুদানে স্বাধীন ধারার চলচ্চিত্রকে প্রাধান্য দিতে হবে এবং বাণিজ্যিক ধারার চলচ্চিত্রের জন্য পৃথক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। 

২. কাহিনিচিত্রের সমপরিমাণ অর্থ ও সংখ্যা সাপেক্ষে প্রতি বছর প্রামাণ্যচিত্রে অনুদান নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়াও, প্রামাণ্যচিত্রের জন্য পৃথক জুরি বোর্ড গঠন করতে হবে, যার সদস্যগণ প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা/প্রযোজক/শিক্ষক অথবা দীর্ঘসময় প্রামাণ্যচিত্রে কাজ করার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তি হতে হবে।

৩. প্রতিবছর ন্যূনতম ২০টি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে অনুদান প্রদান এবং স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের দৈর্ঘ্য ১৫-৪০ মিনিট সুনির্দিষ্ট করে দেওয়ার দাবি জানাই। 

৪. নির্মাতার ওপর অপ্রয়োজনীয় বাধ্যবাধকতা চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। যেহেতু এফডিসির বাইরেও কারিগরি সহায়তার সুযোগ আছে, তাই এফডিসির কারিগরি সরঞ্জাম ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা লোপ করতে হবে। এছাড়াও এফডিসি এবং অন্য কোনও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, যেমন- পরিচালক সমিতি ও প্রযোজক সমিতি প্রভৃতির ছাড়পত্র গ্রহণের বাধ্যবাধকতা লোপ করতে হবে।

৫. চলচ্চিত্র নির্মাণ প্রক্রিয়ায় নির্মাতাকে পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা দিতে হবে। এজন্য (ক) প্রথম কিস্তিতে প্রোডাকশন খরচের সম্পূর্ণ অর্থ (প্রদানকৃত অনুদানের ন্যূনতম ৬০ ভাগ) প্রদানের নিয়ম চালু করতে হবে। (খ) মেন্টর পদ্ধতি বিলোপ করতে হবে। (গ) চলচ্চিত্রের নির্মাণকালের সময়সীমা বৃদ্ধি করতে হবে। 

৬. নির্মিত চলচ্চিত্র প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির দায় প্রযোজককে না দিয়ে প্রদর্শনের ব্যাপারে সরকারকেই উদ্যোগী হতে হবে।

৭. অনুদান প্রদানের স্বতন্ত্র বোর্ড/দফতর গঠন করে বাছাই কমিটি, অনুদান কমিটি ও প্রিভিউ কমিটিতে যোগ্য ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত এবং এই প্রক্রিয়াগুলোর স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। অনুদান সংশ্লিষ্ট নিটিং/প্রিভিউ মন্ত্রণালয়ের বাইরে উক্ত বোর্ডে কিংবা তথ্য ভবনে করার উদ্যোগ নিতে হবে। 

৮. চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে অনুদান নীতিমালা সংশোধন করতে হবে এবং মন্ত্রণালয়কে সেটা মেনে চলতে হবে।

৯. চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে অনুদান প্রদানের চুক্তিপত্রে বিদ্যমান শর্তাবলি সংশোধন করতে হবে। 

১০. প্রাথমিক বাছাইয়ের পর বাছাইকৃত প্রস্তাবকদের সাথে সাক্ষাৎকার গ্রহণ রীতি চালু ও তার ফলাফল প্রকাশ করতে হবে।

এই দশ প্রস্তাবনার সঙ্গে সংহতি জানিয়েছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট প্রাক্তনী সংসদ, বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম ফোরাম, বাংলাদেশ প্রামাণ্যচিত্র পর্ষদ, বাংলাদেশ ফিল্ম ইনস্টিটিউট এলামনাই অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ফিল্ম ক্লাব, জহির রায়হান চলচ্চিত্র সংসদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সিনে সোসাইটি ও চলচ্চিত্র আন্দোলনসহ মোট ৩৪টি সংগঠন।

এই প্রস্তাবনাকে সমর্থন করে নির্মাতা নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, ‌‘আমি অনুদান নীতিমালার সাথে জড়িত ছিলাম। গত তিন বছর আগে আমরা নানা অসঙ্গতির জন্য সংশ্লিষ্ট সংগঠন থেকে পদত্যাগ করি। কিন্তু তারপর থেকে প্রামাণ্য চলচ্চিত্রে সরকারি অনুদান দেওয়া বন্ধ হয়েছে। প্রামাণ্য চলচ্চিত্র হচ্ছে যাপিত জীবনের সহজিয়া প্রকাশ। এটিকে বাদ দিয়ে আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য নয়। এটিকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে এবং এর জন্য একাধিক প্রামাণ্য চলচ্চিত্রকে অনুদান প্রদান করতে হবে- এটি আমার দাবি। আর বাণিজ্যিক ছবিকে বাঁচানোর চেষ্টা করবেন না। বাণিজ্য করে তারা বেঁচে থাকতে পারছে। তাদের পুঁজি দেওয়ার লোক আছে।’