স্মরণে তারেক মাসুদ

‘তারেক মাসুদ নিজের মতো করে চলচ্চিত্র নির্মাণের দুঃসাহস করেছেন’

তারেক মাসুদ নিজের মতো করে চলচ্চিত্র নির্মাণ করার দুঃসাহস করেছেন, যা অন্য কেউ করেননি বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম। 

শুক্রবার (১২আগস্ট) বিকালে রাজধানীর কাটাবন পাঠক সমাবেশ কেন্দ্রে চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদের ১১তম প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে ম্যুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটি আয়োজিত ‘তারেক মাসুদ স্মরণ ও চলচ্চিত্রযাত্রা’ গ্রন্থের পাঠ-পর্যালোচনা অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। 

মোহাম্মদ আজম বলেন, ‘তারেক মাসুদ এমন বিষয় নিয়ে কাজ করেছেন, যেগুলো আমাদের রাজনীতি, রাজনৈতিক সংস্কৃতি কিংবা সাংস্কৃতিক রাজনীতির সবচেয়ে জটিল এবং দুরূহ ইস্যু। ফলে তাকে আমাদের স্মরণ করতেই হয় এবং স্মরণ করাটা লাভজনক। লাভজনক হবে তখনই, যখন আমরা তারেক মাসুদকে জীবিত করে রাখতে পারবো।’ 

‘চলচ্চিত্রযাত্রা’ বইয়ের পাঠ পর্যালোচনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘এই বইয়ে তার আত্মজৈবনিক বিষয়গুলো রয়েছে। কিন্তু বইয়ে দেখা যায়, তিনি আত্মজীবনী লিখতে চাননি তা প্রতীয়মান। তিনি আত্মজীবনী লিখলেও তা একটি শৈল্পিক লেখা হয়ে উঠেছে। তার লেখায় এক ধরনের কলাম লেখার ভঙ্গি আছে এবং অনেক লেখাই অন্যরা তাকে দিয়ে লেখিয়ে নিয়েছেন। বইটি পড়লে সেটি টের পাওয়া যায়। তিনি সুলতানকে নিয়ে বলতে গিয়ে বলেছেন, সুলতানকে নিয়ে সিনেমা তৈরি করা মানে তাকে নিয়ে সিনেমা নয়। কাউকে নিয়ে সিনেমা তৈরি করতে গেলে শুধু তাকে নিয়ে সিনেমা তৈরি করা যায় না। এতে অনেক পারিপার্শ্বিক বিষয় থাকতে হয়। তিনি তা সুলতানের কাছ থেকে শিখেছেন। তিনি বলেছেন, পরিচালকরা সিনেমা বানান একই সাথে সিনেমাও পরিচালকদের বানান।’

চলচ্চিত্রকার প্রসূন রহমান বলেন, ‘তারেক মাসুদ ছিলেন ওয়েল ডকুমেন্টেড চলচ্চিত্রকার। আমরা তাকে স্মরণ করি তার কাজের মাধ্যমে। তাকে আমরা বছরে দুবার স্মরণ করার চেষ্টা করি। প্রয়াণ দিবসে ও জন্মদিনে। তিনি কোনও শোক বা স্মরণ সভায় যেতে পছন্দ করতেন না। আমরা তাকে তার কাজের মাধ্যমে স্মরণ করতে চাই, শোকের মাধ্যমে নয়। তিনি নিজেই মনে করতেন, জীবন উদযাপনের বিষয়।’ 

গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের সহকারী অধ্যাপক মনিরা শরমিন বলেন, ‘‘তারেক মাসুদ যা করেন, যা বানান তা অনন্য। তার ‘মাটির ময়না’ হলো সেই সিনেমা, যা আমাদের বিশ্ব দরবারে নিয়ে গেছে। এর আগেও হয়েছে কিন্তু এইরকমভাবে কানের একটি পুরস্কার নিয়ে আসা হয়নি। সিনেমাটি আসলে অনন্য। বাংলাদেশ নামে একটি দেশ আছে অনেক দেশ এই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে প্রথম জানে। তারেক মাসুদ যেকোনো আধুনিক জিনিস সবার আগে গ্রহণ করতে পারতেন। তিনি ব্যতিক্রম ধারা তৈরি করে ‘নর সুন্দর’ তৈরি করলেন এবং সেটি দেখেই কিন্তু ‘মেহেরজান’ বানানো হয়। এরপর চরকি ‘জাগো বাহে’ নিয়ে আসে, ‘বাঙ্কার বয়’ পুরস্কারও জিতলো। এগুলোর মাদার ফিল্ম বানিয়েছে তারেক মাসুদ।’’ 

এরপর ম্যুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি বেলায়াত হোসেন মামুন ছাড়াও বক্তব্য রাখেন কথা প্রকাশের প্রকাশক জসিম উদ্দিন।

ম্যুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক চলচ্চিত্র নির্মাতা অদ্রি হৃদয়েশের সঞ্চালনায় এই আয়োজনের সভাপতিত্ব করেন নির্মাতা ও লেখক বেলায়াত হোসেন মামুন।

২০১১ সালের ১৩ আগস্ট মানিকগঞ্জের জোকায় এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ, চিত্রগ্রাহক ও সাংবাদিক মিশুক মুনীরসহ আরও তিনজন চলচ্চিত্রকর্মী নিহত হন। সেদিন তারা ‘কাগজের ফুল’ ছবির লোকেশন দেখতে গিয়েছিলেন। ফিরলেন লাশ হয়ে। 

ছবি: সাজ্জাদ হোসেন