পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন, পেয়েছেন ভালো ফলাফলও। কিন্তু ভালো চাকরির পেছনে ছোটেননি। নাটকের প্রতি সীমাহীন ভালোবাসার কারণে ঘুরেছেন মঞ্চপাড়ায়। সে কারণে দিন-মাস-বছর কাটিয়েছেন আধপেটে, অনাহারে, অসামান্য অভাব-অনটনে। কিন্তু মঞ্চের ভালোবাসা ছেড়ে যাননি।
নাটকের প্রতি এই পাগলাটে মানুষটার নাম মাসুম আজিজ (৭০)। যিনি সোমবার (১৭ অক্টোবর) উড়ালপঙ্খী হয়ে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। তার মৃত্যুতে ফিরে ফিরে আসছে রেখে যাওয়া কর্মজীবনের নানা অধ্যায়।
অভিনয় জগতে অসামান্য অবদান রাখায় এ বছরই রাষ্ট্রীয় সম্মাননা একুশে পদক পেয়েছিলেন মাসুম আজিজ। যখন তাকে সম্মাননার ব্যাপারে জানানো হয়, তখন আপ্লুত মনে কেঁদে ফেলেন। রীতিমতো হাউমাউ করে কান্না। মুহূর্তেই তার চোখে ভেসে ওঠে অমানবিক পরিশ্রমের দিনগুলোর কথা।
পদকপ্রাপ্তির পর এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মাসুম আজিজ। সেখানে তার কথাগুলো ছিলো বাস্তবতা ও আবেগের অনবদ্য মিশেল। যা শুনলে ভাবনায় মগ্ন হতে পারে মন কিংবা আনমনে ভিজে আসতে পারে চোখ।
তিনি বলেছেন, ‘আমি ছিয়াত্তরে ঢাকায় আসি। একটা পায়জামা, একটা শার্ট আর একটা অক্ষয় চটি পায়ে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, অত্যন্ত ভালো ফলাফল নিয়েই এসেছিলাম। কিন্তু ওই যে থিয়েটার করবো, এই জেদ থেকে পথ খুঁজছিলাম। অনেক ভালো ভালো অফার থাকবার পরেও আমি ঢাকার বাইরে যাইনি, যেজন্য আমার কোনও চাকরি হয়নি। অনেক ভালো চাকরি হবার পরেও সেগুলো আমি ফিরিয়ে দিয়েছি, বলেছি আমি ঢাকার বাইরে যাবো না।’
নাট্যদল ‘পদাতিক’-এর সদস্য ছিলেন মাসুম আজিজ। এই দলে তিনি ১৯৭৯ সালে যোগ দেন। মৃত্যুর আগ অবধি দল ছাড়েননি অভিনেতা। মঞ্চের পেছনে ছুটতে গিয়ে পিছিয়ে যান জীবিকার দৌড়ে। ফলে চরম অভাবে দিন পার করতে হয়েছিলো অভিনেতাকে।
কথাগুলো বলে কেঁদে ফেলেন এই অভিনেতা।
নব্বই দশক ও এর পরবর্তী সময়ে এসে সচ্ছল দিনের দেখা পান গুণী এই অভিনেতা। সে কথা জানিয়ে বলেছিলেন, ‘আমরা নাটক যখন ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে তৈরি করতে শুরু করলাম, তখন থেকে নাটক করে পয়সা কামাই করি এবং বেশ ভালো পয়সাই কামাই করেছি। ছেলে-মেয়ে বড় করেছি, মানুষ করেছি। কিন্তু ওইদিন ওই খবরটা (একুশে পদকপ্রাপ্তির খবর) শোনার পর অতীতটা মনে পড়ে গেলো। এত কষ্ট করেছি, হয়ত তার একটা স্বীকৃতি। সেজন্য বলি, জয় হোক মঞ্চের, এটি বাংলাদেশের সকল মঞ্চের, নাট্যদলের পুরস্কার।’
উল্লেখ্য, মাসুম আজিজ শুধু অভিনেতা নন, নাট্যকার ও নির্মাতাও ছিলেন। নাটকের পাশাপাশি তিনি সিনেমায়ও অভিনয় করেছেন। ‘ঘানি’, ‘গহীনে শব্দ’, ‘গেরিলা’, ‘এইতো প্রেম’, ‘গাড়িওয়ালা’ ইত্যাদি সিনেমা রয়েছে তার ঝুলিতে। এর মধ্যে ‘ঘানি’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব চরিত্রের অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি।