মঞ্চে ফিরছে জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত উৎসব, চলছে মহড়া

‘এই জীবনে ব্যথা যত এইখানে সব হবে গত’- কবিগুরুর এমন অমিয়বাণী সামনে রেখে ফের মঞ্চে ফিরছে ঐতিহ্যবাহী জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত উৎসব। আয়োজনে বাংলাদেশ রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থা। 

১৯৮৮ সাল থেকে রবীন্দ্রসংগীত ও নবীন শিল্পীদের বিকাশে কাজ করে আসছে সংস্থাটি। করোনার কারণে প্রায় তিন বছর পর ফের সরাসরি মঞ্চে ফিরছে এই উৎসব।

আগামী ২৫ ও ২৬ নভেম্বর দুই দিনব্যাপী এই উৎসবের আয়োজন হচ্ছে রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে। উৎসবের উদ্বোধন করবেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, এমপি। এমনটাই জানান রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থার সভাপতি তপন মাহমুদ।

উৎসবকে সামনে রেখে চলছে সংস্থার সদস্যদের নিয়ে মহড়া কার্যক্রম। যার নেতৃত্বে আছেন সভাপতি তপন মাহমুদ, নির্বাহী সভাপতি আমিনা আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক পীযূষ বড়ুয়া।

তপন মাহমুদএবারে আয়োজন ও প্রস্তুতি প্রসঙ্গে তপন মাহমুদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শেষবার এই উৎসব করেছি ২০১৯ সালে, মানে সরাসরি মঞ্চে। ২০ সালে পারিনি লকডাউনের কারণে। ২১ সালে করেছি সীমিত পরিসরে অনলাইনে। ফলে এবারের উৎসবটি আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আবারও মঞ্চে ফেরার সুযোগ হলো আমাদের। কিন্তু এবার আমরা নতুন সমস্যার মুখোমুখি হলাম। সহজে মিলনায়তন পাচ্ছিলাম না। আমাদের নিয়মিত ভেন্যু পাবলিক লাইব্রেরির অডিটোরিয়াম সংস্কার হচ্ছে। বন্ধ সেটি। পরে অনেক কষ্টে মাতৃভাষা ইন্সটিটিউট মিলনায়তন পেলাম। এজন্যই এবারের আয়োজনে খানিক বিলম্ব হচ্ছে।’

বিশিষ্ট এই রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী জানান, ১৯৮৮ সাল থেকেই এই সংস্থার মূল উদ্দেশ্য নবীন শিল্পীদের প্রমোট করা। সেই ধারা অব্যাহত থাকছে এবারের উৎসবেও। তার ভাষায়, ‘আমাদের সময়ে শুধু বিটিভি ছিল। বা বেতার। ফলে আমরা সেখানে গাইলে পুরো বাংলাদেশ কাভার হতো। এখন অসংখ্য চ্যানেল, কিন্তু শিল্পীরা আগের সেই এক্সপোজার পান না। অথচ আমরা চাই নতুনরা গাইবার সুযোগ পাক, প্রচার পাক। সেই কাজটির জন্য এমন একটি উৎসবের আসলে খুব দরকার। এমন আয়োজন হলে নতুন শিল্পীরা অনেক সাহস পান। তাই এবারও আমরা নতুন সদস্যদের তুলে ধরবো মঞ্চে। সঙ্গে আমরা পুরনোরা তো থাকবোই।’ 

মহড়ায় পীযূষ বড়ুয়া ও তপন মাহমুদ

শুধু গান নয়, বরাবরের মতো এবারের উৎসবেও বাংলাদেশ রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থার পক্ষ থেকে দেওয়া হবে গুণীজন সম্মাননা। এবার এটি পাচ্ছেন বরেণ্য বাচিকশিল্পী আশরাফুল আলম এবং বরেণ্য কণ্ঠশিল্পী রফিকুল আলম। দুজনেই স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক ছিলেন।

জানা গেছে, ২৫ নভেম্বর সকাল ১০টায় উৎসবের উদ্বোধন ও সম্মাননা প্রদান শেষে ১১টা থেকে হবে সংগীত পরিবেশনা। মাঝে বিরতি নিয়ে বিকাল ৫টা থেকে হবে আবৃত্তি ও সংগীতানুষ্ঠান। পরদিন (২৬ নভেম্বর) বিকাল ৫টা থেকে হবে আবৃত্তি ও সংগীতানুষ্ঠান।

৩৩তম এই উৎসবটি উৎসর্গ করা হয়েছে করোনাকালে যে শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, কবি ও সংস্কৃতজন মারা গেছেন তাদের স্মৃতির প্রতি।

তপন মাহমুদ বলেন, ‘এই মহামারি শুধু আমাদের মঞ্চটাই কেড়ে নিয়েছে তা নয়। নিয়েছে আরও অনেক তাজা প্রাণ। যারা থাকলে আমাদের শিল্প-সংস্কৃতি আরও সমৃদ্ধ হতে পারতো। তাই সেই মানুষগুলোকে উৎসর্গ করা হলো এই আয়োজন। আর এবারের স্লোগানের উদ্দেশ্য হলো, আমরা বলতে চাই- আমাদের যত ব্যথা ও বাধা ছিলো জীবনে, তার সব অতিক্রম করবো এই উৎসবের ভেতর দিয়ে।’মহড়ার একাংশ

ছবি: সাজ্জাদ হোসেন