রবীন্দ্রসংগীতের ব্যাখ্যা ও পরিবেশনায় মনোমুগ্ধকর সন্ধ্যা

নতুন প্রজন্মের কাছে শুদ্ধ রবীন্দ্রসংগীতের চর্চা ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে শুরু হয়েছে ৪ দিনব্যাপী বিশেষ আয়োজন। বাংলাদেশ রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থার আয়োজনে শুক্রবার (৩ ফেব্রুয়ারি) বিকালে ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব) মিলনায়তনে ‘কর্মশালা ও সংগীতে নবীনবরণ’ শীর্ষক এ অনুষ্ঠানের সূচনা হয়।
 
প্রথম দিনের কার্যক্রমে ছিল রবীন্দ্রসংগীতের ওপর কর্মশালা ও নবীন শিল্পীদের পরিবেশনা। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে শুরু হয়ে রাত ৮টা পর্যন্ত চলে অনুষ্ঠান। সঞ্চালনায় ছিলেন সীমা সরকার।
 
অনুষ্ঠানে আগত রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী ও অনুরাগীদের উদ্দেশে উপদেশ ও শিক্ষামূলক কিছু কথা বলেন বরেণ্য রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী তপন মাহমুদ। তিনি এই সংস্থার সভাপতি। কর্মশালা শুরুর আগে তিনি বলেন, ‘আমি এখানে কোনও শিক্ষকতা করতে আসিনি। গানের মাঝে অনেকের ছোটখাটো কিছু ভুল হয়ে যায়। আমারও হয়। সেই ভুলগুলো যাতে কমানো যায়, তার জন্যই এই কর্মশালা।’
 
সংস্থার নেতৃবৃন্দকর্মশালার অংশ হিসেবে ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে’, ‘বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল’ ইত্যাদি গানে শিল্পীদের করা কিছু ভুল নিয়ে আলোচনা করেন তপন মাহমুদ। সেই সঙ্গে বিভিন্ন গানে রবীন্দ্রনাথ কী বোঝাতে চেয়েছেন, তা তুলে ধরেন। রবীন্দ্রসংগীত গাওয়ার আগে যেন তা ভালোভাবে শিখে এবং এর অর্থ অনুধাবন করেন, শিল্পীদের এ আহ্বান জানান তপন মাহমুদ।
 
বাংলাদেশ রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থার নির্বাহী সভাপতি আমিনা আহমেদের বক্তব্য ছিল এমন, ‘এখন ৩ ও ৪ ফেব্রুয়ারি, এরপর কয়েক দিন গ্যাপ দিয়ে ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি এই অনুষ্ঠান চলবে। এরমধ্যে আমরা অনেককে খুশি করতে পারবো আশা করছি। আগামী মার্চে আমাদের বড় উৎসব হবে। সেখানে দলীয় পরিবেশনা থাকবে, অনেক আনন্দ হবে। আজকের আয়োজনে যারা এসেছেন, পরবর্তী দিনগুলোতে আপনারা পরিবার, আত্মীয় বা বন্ধুদের নিয়ে আসবেন।’

গান পরিবেশন করছেন আমিনা আহমেদঅনুষ্ঠানটিতে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থার সাধারণ সম্পাদক পীযুষ বড়ুয়া, সহ-সভাপতি কাজল মুখার্জিসহ সংগঠনটির অন্য সদস্যরা। 

সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে শুরু হয় সংগীত পরিবেশনা। প্রথমে মঞ্চে ওঠেন অভিজিৎ দে। তিনি গেয়ে শোনান ‘মহাসিংহাসনে বসে’ শিরোনামের রবীন্দ্রসংগীতটি। এরপর একে একে গান শুনিয়েছেন প্রমিলা রায় (বিশ্ব সাথে যোগে যেথায়), পূরবী আলামিন (হৃদয় নন্দনও বনে), পরেশ চন্দ্র ভৌমিক (বাংলার মাটি, বাংলার জল), সাথী মুখার্জি (আপনারে দিয়ে রচিলিরে), সোমা ঘোষ (তোর আপনজনে ছাড়বে তোরে), ডা. শাওলী (আজি প্রণমি তোমারে), আমিনা আহমেদ (শুধু যাওয়া আসা, শুধু স্রোতে ভাসা), খায়রুজ্জামান কাইয়ুম (আমারে না ঘিরেছে), সাজিদা সোনিয়া ইতি (আমি বহু বাসনায়) ও মিলন দে (প্রাণ ভরিয়ে দিশা হরিয়ে)।  

সঞ্চালনায় সীমা সরকারশনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টা থেকে ফের একই স্থানে রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করবেন সংস্থার সদস্যরা। দর্শক-শ্রোতাদের জন্য অনুষ্ঠানটি থাকছে উন্মুক্ত।

বাংলাদেশে রবীন্দ্রসংগীত প্রচার ও প্রসারে বিগত ৩৫ বছর ধরে ‘বাংলাদেশ রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থা’ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে আসছে। সর্বজন শ্রদ্ধেয় শিল্পী কলিম শরাফী, যিনি ছিলেন সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, তার হাত ধরে শুরু হয়েছিল এই পথচলা, যা অব্যাহত রয়েছে আজও।উপস্থিত শিল্পী ও শ্রোতাদের একাংশ

ছবি: সাজ্জাদ হোসেন