অস্কার জয়ের দৌড়ে এগিয়ে গেলো ‘এভরিথিং এভরিহোয়্যার অল অ্যাট ওয়ান্স’। স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড (এসএজি) অ্যাওয়ার্ডসের সর্বোচ্চ স্বীকৃতিসহ সামনের সারির প্রায় সব পুরস্কার জিতেছে ছবিটি। ফলে অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডসে সেরা চলচ্চিত্র বিভাগে এর এগিয়ে থাকার মোমেন্টাম এসে গেলো।
মাল্টিভার্স অ্যাডভেঞ্চার ধাঁচের ছবিটি এসএজি অ্যাওয়ার্ডসের ২৯তম আসরে সেরা অভিনয়শিল্পীর সম্মিলন পুরস্কার জিতেছে। এছাড়া এর তিন অভিনয়শিল্পী আলাদাভাবেও স্বীকৃতি পেয়েছেন। ‘টার’ ছবির নায়িকা কেট ব্ল্যানচেটকে হটিয়ে সেরা অভিনেত্রী হয়েছেন মালয়েশিয়ান তারকা মিশেল ইয়ো। এসএজি অ্যাওয়ার্ডসের ইতিহাসে এবারই প্রথম কোনও এশিয়ান তারকা সেরা অভিনেত্রী পুরস্কার জিতলেন। তিনি বলেন, ‘পুরস্কারটি শুধু আমার জন্য নয়, আমার মতো দেখতে প্রত্যেক মেয়ের জন্য।’
‘এভরিথিং এভরিহোয়্যার অল অ্যাট ওয়ান্স’ ছবিতে একটি লন্ড্রি মালিকের চরিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন মিশেল ইয়ো। পৃথিবী রক্ষায় নিজের বিভিন্ন সংস্করণ খুঁজে বেড়ান তিনি। সতীর্থদের উদ্দেশে তার বক্তব্য, ‘আমরা এখানে আছি, কারণ আমরা যে কাজটি করি সেটি ভালোবাসি। আমরা নিজেদের কাজ থামাবো না। আমাকে আপনাদের টেবিলে একটি আসন দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। কারণ আমাদের অনেকেরই এমন অবস্থান প্রয়োজন। আমরা নিজেদের দেখাতে চাই, আমরা শোনাতে চাই এবং আজ রাতে দেখা গেলো এটি সম্ভব।’
মিশেল ইয়োর সহশিল্পী ভিয়েতনামের তারকা কে হুই কোয়ান সেরা পার্শ্ব অভিনেতা হয়ে ইতিহাস গড়েছেন। এসএজি অ্যাওয়ার্ডসের এই বিভাগে এবারই প্রথম এশিয়ার কেউ পুরস্কার পেলেন। তার কথায়, ‘এটা আমার জন্য সত্যিই একটি আবেগঘন মুহূর্ত। আমার নাম শোনার পর দ্রুতই বুঝতে পেরেছি, এই মুহূর্ত আর কেবল আমার একার নয়। এটি তাদের প্রত্যেকের জন্য যারা পরিবর্তনের জন্য কথা বলেছে।’
‘এভরিথিং এভরিহোয়্যার অল অ্যাট ওয়ান্স’ ছবির আরেক তারকা জেমি লি কার্টিসের সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রী হওয়া ছিল বড় চমক। কারণ ‘ব্ল্যাক প্যান্থার: ওয়াকান্ডা ফরেভার’ ছবির জন্য অ্যাঞ্জেলা ব্যাসেটকে সম্ভাব্য বিজয়ী হিসেবে ধারণা করা হচ্ছিল। কিন্তু তাকে টপকে পুরস্কার পেয়েছেন ৬৪ বছর বয়সী জেমি লি কার্টিস। তিনি বলেন, ‘অভিনয় আমার পছন্দ। আমি যে কাজ করতে পারি তা আমি ভালোবাসি। যেকোনও চলচ্চিত্রের ক্রু ও অভিনয়শিল্পীদের অংশ হতে ভালো লাগে আমার। আমরা একে অপরের কাঁধে কাঁধ রেখে যে কাজটি করি সেটি ভালোবাসি। এটি সুন্দর একটি কাজ। কী দারুণ স্বপ্নের মতো!’
এসএজি অ্যাওয়ার্ডসে সেরা অভিনয়শিল্পীর সম্মিলন, সেরা অভিনেত্রী, সেরা পার্শ্ব অভিনেতা ও সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে একই ছবির জয়ের ঘটনা এটাই প্রথম। সামনের সারির বিভাগগুলোর মধ্যে এটি কেবল সেরা অভিনেতা পুরস্কার জিততে পারেনি। এটি বাগিয়ে নিয়েছেন ‘দ্য হোয়েল’ ছবির তারকা ব্রেন্ডন ফ্রেজার। অতিরিক্ত মেদসম্পন্ন অধ্যাপক চার্লি চরিত্রে দারুণ নৈপুণ্য দেখিয়েছেন ৫৪ বছর বয়সী এই তারকা। এলভিস প্রিসলির বায়োপিকে নাম ভূমিকায় অভিনয় করা অস্টিন বাটলারকে টপকে গেছেন তিনি।
‘দ্য মামি’ খ্যাত ব্রেন্ডন ফ্রেজার অনেক বছর ধরে স্পটলাইটে ছিলেন না। আগের জায়গা পুনরুদ্ধারের জন্য ছোট বাজেটের কিছু কাজ করেছেন। ড্যারেন অ্যারোনোফস্কি পরিচালিত ‘দ্য হোয়েল’ ছবিতে সফল প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে যেন পুনরুজ্জীবিত হলেন তিনি। তার কথায়, ‘আমার কাছে পুরস্কারটির মূল্য অনেক। তবে ১৯৯১ সাল থেকে আমার মানিব্যাগে রাখা প্রথম এসএজি কার্ডের চেয়ে বেশি নয়। মনে হচ্ছে পুরস্কারটা আমারই। আগে কেউ যদি বলতো, আমি এখানে দাঁড়াতে পারবো; আমিই তাকে বিশ্বাস করতাম না।’
এসএজি অ্যাওয়ার্ডস ও বাফটা ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডসকে ধরা হয় অস্কারের সূচক। কিন্তু এবার একটি পুরস্কারের সঙ্গে অন্যটির বিজয়ী তালিকায় খুব একটা মিল পাওয়া যাচ্ছে না। যেমন বাফটায় ‘দ্য ব্যানশিজ অব ইনিশেরিন’ এবং ‘অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট’ রাজত্ব করেছে। অথচ ‘এভরিথিং এভরিহোয়্যার অল অ্যাট ওয়ান্স’ মাত্র ১টি পুরস্কার পেয়েছে। এবার কোনও অভিনেতা-অভিনেত্রীই গোল্ডেন গ্লোবস, ক্রিটিকস চয়েস, এসএজি অ্যাওয়ার্ডস এবং বাফটার প্রতিটিতেই জিততে পারেননি। ফলে অস্কারে হাড্ডহাড্ডি লড়াই অপেক্ষা করছে!