প্রদর্শকদের ‘পাঠান’ অভিমান, দিলেন হল বন্ধের আলটিমেটাম!

হাজার সিনেমা হল; এই কথাটি ঢালিউডের জন্য এখন রূপকথার গল্পের মতো। যা এ প্রজন্ম কেবল শুনেই এসেছে। এখন হাজার তো দূরের কথা, দেশজুড়ে তন্নতন্ন করে খুঁজলেও একশ সিনেমা হল পাওয়া যাবে না! অবিশ্বাস্য কিংবা দুঃখজনক হলেও, এটাই সত্যি। 

প্রদর্শক নেতাদের তথ্য মতে, চার বছর আগেও দেশে সিনেমা হলের সংখ্যা ছিল ২৪০টি। এখন নিয়মিত চালু হলের সংখ্যা মাত্র ৪০টি। তারা জানান, দেশের সিনেমা হলগুলো ক্রমশ গোডাউন হয়ে যাচ্ছে।

এমন পরিস্থিতিতে খবর মিললো, বাংলাদেশেও মুক্তি পাচ্ছে শাহরুখের ব্লকবাস্টার ‘পাঠান’, সঙ্গে খুলে যাচ্ছে হিন্দি ছবি প্রদর্শনের বেড়াজাল। ফেব্রুয়ারিজুড়ে এমন আভাসে রোজার আগেই হল মালিকদের মধ্যে ঈদ উৎসবের আমেজ দেখা গিয়েছিল! কারণ, মন্ত্রণালয় থেকে সবুজ সংকেত পেয়েছিলেন তারা।

২৪ ফেব্রুয়ারি ও ৩ মার্চ দু’দফায় মুক্তির কথা শোনা গেলেও শেষ পর্যন্ত অনুমতি পায়নি ‘পাঠান’ প্রদর্শকরা।

তাই ‘পাঠান’-অভিমান বুকে চেপে যক্ষের ধনের মতো টিকিয়ে রাখা চলমান হলগুলো বন্ধের হুমকি দিয়েছেন চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির নেতারা। তাদের দাবি, বিদেশি তথা হিন্দি সিনেমা আমদানি করতে হবে। নতুবা অচিরেই তারা হল বন্ধ করে দেবেন। কারণ দেশের ছবি চালিয়ে লোকসানের চোরাবালি থেকে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছেন না তারা।
 
শনিবার (৪ মার্চ) ইস্কাটনে এক সংবাদ সম্মেলনে হল বন্ধের ঘোষণাস্বরূপ হুমকি দিয়েছে চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতি। ‘সিনেমা হল বাঁচলে, চলচ্চিত্র বাঁচবে’ শীর্ষক এই সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির প্রধান উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাস বলেছেন, ‘এমতাবস্থায় সিনেমা হল চালু রাখার আর কোনও বাস্তব যুক্তি খুঁজে পাচ্ছি না বিধায় বন্ধ করে দেওয়াই শ্রেয় বলে মনে করি।’

এর আগে ‘পাঠান’ মুক্তি দেওয়ার জন্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন নির্মাতা-প্রযোজক-পরিবেশক অনন্য মামুন। বিষয়টি নিয়ে সিনেমা সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর মতামত জানতে চায় মন্ত্রণালয়। সমিতিগুলোও জানায় সবুজ সংকেত।
 
কিন্তু এরপরও মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত অনুমোদনের কোনও খবর আসছে না। এই নীরবতাকে ‘না’ সূচক সিদ্ধান্ত মনে করছেন প্রদর্শক সমিতির নেতারা। সেজন্যই তারা সংবাদ সম্মেলনে হাজির হন।
 
সমিতির উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাস বলেন, “তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ আমাদের প্রতিনিধিদের সচিবালয়ে ডেকে বলেছিলেন, ‘পরিচালক ও শিল্পী সমিতির অনাপত্তি থাকলে সরকার বছরে অন্তত ১০টি উপমহাদেশীয় চলচ্চিত্র আমদানির অনুমতি দেবে।’ এরপর চিত্রনায়ক আলমগীরের নেতৃত্বে ‘সম্মিলিত চলচ্চিত্র পরিষদ’র ব্যানারে প্রযোজক, পরিচালক এবং শিল্পী সমিতির নেতৃবৃন্দ বছরে ১০টি ভারতীয় হিন্দি ছবি আমদানির ক্ষেত্রে অনাপত্তি জানিয়ে লিখিত প্রস্তাবনা তথ্যমন্ত্রীর কাছে জমা দেন। সকল বাধা অপসারিত হওয়ার পরও আমদানির অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্তহীনতা ‘না’ সূচক মনোভাবের পরিচায়ক।”

সিনেমা হল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন উজ্জ্বল বলেন, ‘‘মন্ত্রণালয় থেকে মৌখিকভাবে সবুজ সংকেত পাওয়ার পরও হিন্দি ছবি আনার লিখিত ছাড়পত্র পাওয়া যায়নি। ‘হাওয়া’, ‘পরাণ’ ছাড়া গত বছর সেভাবে তেমন কোনও সিনেমা প্রেক্ষাগৃহে ব্যবসা করেনি। এভাবে চলতে থাকলে দেখবেন একের পর এক সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যাবে।’’

ঠিক কবে নাগাদ হল বন্ধ করবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে নেতারা জানান, টেকনিক্যাল কারণে হল বন্ধ করে দেয়ার নির্দিষ্ট কোনও তারিখ এখনও চূড়ান্ত করা হয়নি। তবে যে কোনও দিন সব সিঙ্গেল স্ক্রিন বন্ধ করে দেওয়া হবে। এমনটাই ভাবছে প্রদর্শক সমিতি ও হল মালিকরা।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সহ-সভাপতি মিয়া আলাউদ্দিন, সহ-সাধারণ সম্পাদক মো. খুরশিদ আলম, সংস্কৃতি সমাজ কল্যাণ ও আইন বিষয়ক সম্পাদক আর এম ইউনুস রুবেল প্রমুখ। তাদের সম্মিলিত দাবি, বছরে ১০টি ভারতীয় ছবি আমদানির চূড়ান্ত অনুমতি না দিলে হলগুলো একে একে বন্ধ করে দেওয়া হবে। তবে নির্দিষ্ট কোনও তারিখ তারা উল্লেখ করেননি।
 
২০১৫ সালে শাকিব খান, পরীমণি, জায়েদ খান, রুবেলদের কাফনের কাপড় পরে আন্দোলনবলা প্রয়োজন, ভারতীয় সিনেমা আমদানির পক্ষে সিংহভাগ মানুষ মত দিলেও অনেকে এর বিরোধিতা করছেন। নির্মাতা-চিত্রনাট্যকার দেলোয়ার জাহান ঝন্টু, অভিনেতা-প্রযোজক ডিপজল ও খিজির হায়াত খানসহ অনেকেই হিন্দি ছবি মুক্তির বিপক্ষে জোরালো প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৫ সালেও হিন্দি সিনেমা আমদানির বিপক্ষে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন ঢালিউডের তারকারা। সে সময় কাফনের কাপড় পরে রাজপথে নেমে মিছিল পর্যন্ত করেছিলেন শাকিব খান, মিশা সওদাগর, ওমর সানী, পরীমণিসহ প্রথম সারির নির্মাতা-শিল্পীরা।