শাকিব বনাম প্রযোজক: সমঝোতার চেষ্টা, ফলাফল শূন্য

ঢালিউড তারকা শাকিব খানের বিরুদ্ধে অপেশাদার আচরণ, শ্লীলতাহানির মতো গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী প্রযোজক রহমত উল্ল্যাহ। তার প্রযোজিত নির্মাণাধীন ‘অপারেশন অগ্নিপথ’-এর শুটিং চলাকালীন শাকিবের কর্মকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন বলেও অভিযোগ। বুধবার (১৫ মার্চ) বিকালে এসব অভিযোগের ফিরিস্তি লিখিত আকারে জমা দেন চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিসহ সিনেমা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠনে।

এরপরই আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে ঢালিউড পাড়ায়। বিষয়টি নিয়ে বিলম্ব না করেই অভিযোগকারী প্রযোজকের সঙ্গে দেখা করেছেন শাকিব খান। বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) বিকালে তারা একটি রেস্তোরাঁয় বৈঠক করেছেন। অভিযোগের বিষয়ে সমাধান নিয়েও আলোচনা করেছেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রযোজক খোরশেদ আলম খসরু। তিনি খবরটি বাংলা ট্রিবিউনকে নিশ্চিত করেছেন। খসরু বলেন, ‘সমাধান হয়নি কিছু। তবে সমাধানের লক্ষ্যে আমরা আজ (১৬ মার্চ) বিকালে বসেছি। চেষ্টা করছি সমাধানের। এই চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’

খসরুর দেওয়া তথ্য অনুসারে, অভিযোগকারীর সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন শাকিব খান। নিজের জায়গায় এখনও অনড় রয়েছেন সেই প্রযোজক। 

ওদিকে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক চিত্রনায়িকা নিপুণ আক্তার বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, তারা স্বাভাবিক নিয়মে শিল্পী তথা শাকিব খানকে অগ্রাধিকার দেবেন। তবে আপাতত বিষয়টি নিয়ে কিছুই ভাবছে না সংগঠন। কেননা সমিতির সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন রয়েছেন দেশের বাইরে। দিন চারেক পর তিনি দেশে ফিরবেন। এরপরই এ বিষয়ে সাংগঠনিক বৈঠক হবে। 

এর আগে বুধবার (১৫ মার্চ) বিকালে শাকিব খানের বিরুদ্ধে রহমত উল্ল্যাহ যে অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন, তাতে বলা হয়েছে, “২০১৭ সালে পূর্বচুক্তি মোতাবেক অভিনেতা শাকিব খান ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ নামক সিনেমার কাজে অস্ট্রেলিয়ায় আসেন। আমি সেই চলচ্চিত্রের অন্যতম প্রযোজক। তার মতো একজন বিখ্যাত অভিনেতাকে নিজের চলচ্চিত্রে অভিনয় করাতে পারব জেনে পুলকিত ছিলাম। চলচ্চিত্রটি মুক্তি পেলে ব্যবসাসফল হবে সেই বিশ্বাস ছিল। ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ মুক্তি পেলে সেটি হতো অস্ট্রেলিয়ায় অভিনীত প্রথম বাংলাদেশি চলচ্চিত্র। আমার এবং এটার সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের আশা ছিল সিনেমাটির হাত ধরে অস্ট্রেলিয়া এবং বাংলাদেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক সম্পর্কে নতুন একটি অধ্যায় রচিত হবে। শাকিব খান একজন বিখ্যাত অভিনেতা। তার অভিনীত চলচ্চিত্রের দর্শক চাহিদা অনেক। তাই আমাদের প্রত্যাশা ছিল তিনি আমাদের সাথে পেশাগত আচরণ করবেন। অথচ, আজ পর্যন্ত এই সিনেমার কাজ তিনি শেষ করেন নাই।”

‘অপারেশন অগ্নিপথ’ ছবির শুটিং চলাকালীন শাকিব খান দ্বারা যেসব ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন, তার একটি তালিকা উল্লেখ করেছেন এই প্রযোজক। তা হলো-

১. আমাদের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি নেয়া সত্ত্বেও কোনও রকমের পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই শুটিং বাতিল করে দিতেন।

২. তার খাদ্যাভ্যাসজনিত চাহিদা ছিলো এমন যে, হঠাৎ করে তিনি অদ্ভুত রকমের খাবার খেতে চাইতেন; আর তাতেই পুরো শুটিং ইউনিট নিয়োজিত হতো তার পছন্দের খাবার খুঁজে বের করার জন্যে। এতে করে শুটিংয়ের কাজে যেমন ব্যাঘাত হতো, তেমনি চলচ্চিত্রের নির্মাণ বায় নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বেড়ে গিয়েছিল।

৩. তিনি শুটিং করতে আসতেন নিজের ইচ্ছা মতো সময়ে। অনেক সময় এমন হতো যে অত্যন্ত ব্যয়বহুল সেট বানিয়ে আমরা তার জন্যে অপেক্ষা করতাম। তিনি হয়ত শেষ বেলায় দুই এক ঘণ্টা অভিনয় করার জন্য আসতেন। এভাবে শুটিং না করেও সকলের বেতন দিয়ে আমরা শুধু অপেক্ষা করতাম তিনি আসবেন বলে।

শাকিবের বিরুদ্ধে জমা দেওয়া অভিযোগের কপিএছাড়া আরও দুটি পয়েন্টে শাকিবের বিরুদ্ধে আপত্তিকর কর্মকাণ্ড ও শ্লীলতাহানির মতো বিস্ফোরক অভিযোগ তোলা হয়েছে। যেখানে প্রযোজক তুলে ধরেন হোটেল কক্ষে শাকিব খানের আপত্তিকর জীবনাচরণ এবং শুটিং ইউনিটের সহকর্মীর শ্লীলতাহানির মতো বিব্রতকর ও বিস্ময়কর ঘটনা। যার সূত্র ধরে মামলাও হয়েছে অস্ট্রেলিয়ায় (মামলা নম্বর: NSW Police reference no: E 62494959)।

রহমত উল্ল্যাহর দাবি, পরবর্তীতে তিনি শাকিব খানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ‘২০১৮ সালে তিনি (শাকিব খান) আবার অস্ট্রেলিয়ায় আসলে ধর্ষণের অভিযোগে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। সামাজিক চাপে এবং আরও নিগ্রহের ভয়ে নির্যাতিতা প্রকাশ্যে মুখ খুলতে রাজি না হওয়ায় শাকিব সেই যাত্রায় ছাড়া পেয়ে যান।’

উল্লেখ্য, ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ ছবির পরিচালনা করছিলেন আশিকুর রহমান। এতে শাকিবের নায়িকা হিসেবে যুক্ত হয়েছিলেন সিবা আলী খান। তাদের পক্ষ থেকে অবশ্য কোনও অভিযোগের খবর প্রকাশ্যে আসেনি।