কয়েক দশকের রমরমা অবস্থা পেরিয়ে একবিংশ শতকের শূন্য দশকে খাদের কিনারে পড়ে ঢালিউড। ‘অশ্লীলতার’ উত্থানে মূল সিনেমার ভরাডুবি হয়। সিনেমা ছেড়ে দূরে সরে যান অনেক তারকা, নির্মাতা। যার ফলে তলাহীন ঝুড়িতে পরিণত হয় ইন্ডাস্ট্রি।
সেই মুমূর্ষু হাল থেকে কিছুটা উত্তরণ ঘটেছে। আর এই উত্তরণের কৃতিত্ব টেলিভিশন জগত থেকে আসা নির্মাতা ও অভিনয়শিল্পীদের দিলেন অভিনেত্রী বন্যা মির্জা। তার মতে, ছোট পর্দার নির্মাতা-শিল্পীরা সিনেমায় এসেছে বলেই ইন্ডাস্ট্রি এখনও বেঁচে আছে।
অনেক আগে থেকেই ‘টিভি বনাম সিনেমা’ লড়াই চলমান। উভয় পক্ষই নিজেদের সেরা, কাণ্ডারি মনে করে। সাম্প্রতিক সময়ে সেই চর্চা আরও বেড়েছে। টিভি থেকে আসা আফরান নিশোর প্রথম সিনেমা ‘সুড়ঙ্গ’ যেই সাফল্য পেয়েছে, সেটা সিনেমার অনেকের ‘সহ্য হচ্ছে না’ বলেও মনে করেন কেউ কেউ। এই বিষয়ে সিনেমার ইতিহাস মনে করালেন অভিনেত্রী বন্যা মির্জা। তার ভাষ্য, ‘বাংলাদেশের বড় পর্দা ছোট হয়ে যেত বহু আগে, যদি ছোট পর্দা থেকে নির্মাতা আর অভিনেতারা এসে কাজ না করতেন। অভিনয় মানের কোনও মিনিমাম প্রতিযোগিতা থাকতো না তাহলে। কয়েকজন মানুষকে নিয়ে কোনও কারখানা চলে না। আর চলে না বলেই ভিন্ন দেশ থেকে লোকজন ধার করতে হয়।’
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে আফরান নিশো জানান, তার কাছে সুপারস্টার হলো গোলাম মুস্তাফা, হুমায়ুন ফরীদির মতো অভিনেতারা। যেটা নিয়ে বাণিজ্যিক সিনেমার তারকা-ভক্তদের মধ্যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। এ প্রসঙ্গে বন্যার সাফ বক্তব্য, ‘গোলাম মুস্তাফা সুপারস্টার তো ছিলেন বটেই, এমনকি খলিলও ছিলেন। নায়কদের মধ্যে কেবল না, তখন সুপারস্টার ছিলেন খলনায়ক, কৌতুকাভিনেতা, প্লেব্যাক সিঙ্গার, এমনকি চিত্রগ্রাহকের মধ্যেও। বুঝতে অসুবিধা হলে বেবি ইসলামদের মতো মানুষের নাম মনে করুন। জিজ্ঞাসা করুন পুরানদের। ঢাকার কালচারের অভিজাত ছিলেন এরা সকলেই। এবং অভিজাতরাও সিনেমায় যেতেন এদেরই কারণে।’
কাটপিস যুগ পেরিয়ে সিনেমায় সুদিন ফেরানোর মূল অবদান টিভি থেকে আসা নির্মাতা-শিল্পীদের দিলেন বন্যা। তার ব্যাখ্যা, ‘সো কলড কাটপিস (শব্দটা খুব খারাপ যদিও) দিয়ে যখন সিনেমা কোনও মতে চলে, হল সব যখন বন্ধ হতে শুরু করেছে, তখন সেই কারখানা যতটুকু দাঁড়ালো তা ছোট পর্দার নির্মাতা আর অভিনেতাদের হাত ধরে। কেউ এটা অস্বীকার করলে কিছুমাত্র যাবে আসবে না। সময়টার দিকে ঘুরে দাঁড়ালে এটাই বোঝা যাবে। ঠিক তেমনি করেই যারা ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্ম নির্মাণ করেন, তাদেরও অবদান আছে। সিনেমা কারখানা কারও একক মালিকানাধীন নয়।’
বলা দরকার, গুণী অভিনেত্রী বন্যা মির্জা তিন দশক ধরে টানা কাজ করেছেন মঞ্চ, টিভি, বিজ্ঞাপন, সিনেমা ও গণমাধ্যমে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে তিনি উন্নত জীবনের খোঁজে পাড়ি জমিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে খুঁজে নিয়েছেন ভিন্নতর পেশা।