দক্ষিণ কোরিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর বুসানে এসে তিনটি কৌতূহল তৈরি হলো। প্রথমত জাপান, কোরিয়ান ও চীনাদের আলাদাভাবে চেনার উপায় কী? বুসানের প্রথম ডায়েরিতেই লিখেছি– এই তিন দেশের মানুষকে দেখতে একই রকম লাগে! দেশ তিনটির অবস্থান কাছাকাছি হওয়াটাই কারণ কিনা জানি না। এরমধ্যে জাপানকে সূর্যোদয়ের দেশ হিসেবে জানে পৃথিবীবাসী। টোকিও থেকে বুসানের দূরত্ব ৯৫৯ কিলোমিটার। অথচ বুসানে আসার তিন দিন পরও সূয্যিমামার দেখা মিললো না। সকাল-সন্ধ্যা আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। আবহাওয়া স্বাভাবিকভাবেই ঠান্ডা। যদিও কাঁপুনি ধরিয়ে দেওয়ার মতো শীত নেই। খুব বেশি ভারি পোশাক না পরলেও সমস্যা হচ্ছে না। এককথায় সহনীয় আবহাওয়া।
আরেকটি কৌতূহল, দক্ষিণ কোরিয়া বিশ্বের সবচেয়ে কম জন্মহারের দেশ কেন? দেশটিতে ২০২২ সালে শিশু জন্মের হার ছিল শূন্য দশমিক ৭৮ শতাংশ। ২০২১ সালে ছিল শূন্য দশমিক ৮১ শতাংশ। অথচ ২০২২ সাল থেকে দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রত্যেক নারী সন্তানের মা হলেই ২০ লাখ কোরিয়ান ওন (১ হাজার ৫১০ ডলার) নগদ পাচ্ছেন। এছাড়া অন্তঃসত্ত্বা নারীদের জন্য গণপরিবহনে আলাদা আসন ব্যবস্থা ও চিকিৎসার খরচ মেটানোসহ বিভিন্ন সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির লক্ষ্যে দক্ষিণ কোরিয়া সরকার গত ১৬ বছরে ২১ কোটি ১০ ডলার (২৩ লাখ ২৭ হাজার ৫৩৬ কোটি টাকা) খরচ করেছে। তবুও দেশটিতে জন্মহার বাড়ছে না।
বুসান শহরের চিত্রটা আলাদা নয়। এখানে একাধিক সন্তানের মাকে আলাদাভাবে ৩৭৭ ডলার থেকে ৭ হাজার ৫৫২ ডলার পর্যন্ত বাড়তি সহায়তা দিচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার। কিন্তু বুসানে বসবাসরত অনেক নারী বিয়েতে নারাজ কিংবা বিয়ে করলেও সন্তান নিতে আগ্রহী নন।
ছোট্ট তো হো’কে তখন ফিডার দিয়ে দুধ দিচ্ছিলেন মা। অলিভার-তায় হি কিম দম্পতির কাছে এবার কৌতূহল মেটাতে প্রশ্নটা করলাম– আপনাদের দেশের নাগরিকদের বিয়েতে এত অনীহা কেন? আর এখানকার নারীদের মা হতে না চাওয়ার মূল কারণ কী? দু’জনেই একগাল হেসে দিলেন। তাদের শহর সিউলেই জন্মহার সবচেয়ে কম। সিউলে প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৬ জন সন্তান নিতে অনীহা প্রকাশ করে। গুগল ঘেঁটে কোরিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর সোশ্যাল স্টাডিজের একটি জরিপের তথ্য তুলে ধরলাম, দক্ষিণ কোরিয়ায় মাত্র ৪ শতাংশ তরুণী মনে করে বেঁচে থাকার জন্য বিয়ে ও সন্তান প্রয়োজন আছে।
সরকারি সহায়তা থাকার পরও চিত্রটা বদলাচ্ছে না কেন? এবার উত্তর দিলেন তায় হি কিম, ‘নগদ অর্থ সহায়তা দিয়ে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হবে বলে মনে হয় না। সরকারি অর্থে একটি শিশুর প্রথম দুই বছরের খরচ মেটানো হয়। এর সঙ্গে তাকে লালন-পালনের সম্পর্ক কোথায়? দুই বছর পর থেকে শিশুর বেড়ে ওঠার সঙ্গে খরচ বাড়তে থাকে।’
জন্মহার ও প্রযুক্তি বিষয়ক ১০-১৫ মিনিটের গুরুগম্ভীর আলোচনায় মোটেও বিরক্তি দেখালেন না কোরিয়ান দম্পতি। বরং সারাক্ষণই তাদের মুখে হাসি। চলচ্চিত্রের উৎসবে এসে অন্য বিষয়ে কৌতূহলী হওয়ার কারণ চলচ্চিত্রই! মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’র ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ারে কোরিয়ান এক তরুণের প্রশ্ন শুনে জন্মহারের বিষয়টি মনে পড়েছে। ছবিটির গল্পে বাংলাদেশের একজন অভিনেত্রী বিয়ের অনেক বছর পেরিয়ে যাওয়ায় সন্তান নিতে সামাজিক চাপে পড়ে। এ কারণে ওই তরুণের জানতে ইচ্ছে হলো, বাংলাদেশে জন্মহার কম নাকি বেশি? প্রশ্নটা শুনেই হেসে দিয়েছেন ফারুকী-তিশা দম্পতি।