ফারিণের বিদেশ-ভাগ্য, তেহরানে বাংলাদেশের ‘ফাতিমা’

তাসনিয়া ফারিণের বিদেশ-ভাগ্য বেশ প্রশস্তই বলা যায়। দেশে সফল ক্যারিয়ার গড়েও প্রথম মুক্তি পাওয়া ছবিটি ভারতের। গত ফেব্রুয়ারিতে মুক্তি পাওয়া ‘আরও এক পৃথিবী’ ছবিটির শুটিং হলো আবার লন্ডনে। এরপর বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হন একই শহরের প্রবাসী পাত্রের সঙ্গে।

অভিনেত্রীর বিদেশ-ভাগ্যের উদাহরণ এখানেই শেষ হতে পারতো। কিন্তু হলো না। কারণ, টলিউডের সিনেমায় অভিষেক হলেও ফারিণের শুটিং করা প্রথম ছবিটির নাম ‘ফাতিমা’। যার শুটিং শুরু হয় ২০১৭ সালে। ধ্রুব হাসানের নির্মাণে ছবিটির দীর্ঘ শুটিং-ভ্রমণ শেষ হয় ২০২৩ সালে জুনে। ৭ বছরের ভ্রমণে ‘ফাতিমা’র বিভিন্ন চরিত্রে আরও যুক্ত হন ইয়াশ রোহান, পান্থ কানাই, মানস বন্দ্যোপাধ্যায়, আয়শা মনিকাসহ অনেকেই। এতে অতিথি শিল্পী হিসেবে যুক্ত হন এ বি এম সুমন, তারিক আনাম খান, শাহেদ আলী সুজন, শতাব্দী ওয়াদুদ ও শাকিল আহমেদ।

‘ফাতিমা’র একটি দৃশ্যে তাসনিয়া ফারিণশিল্পীদের তালিকায় এটুকু অনুমেয়, ছবিটির কাজ শেষ হতে দীর্ঘসূত্রতার কারণ। তারচেয়ে বড় কারণ, সিনেমাটি নিয়ে নির্মাতা ধ্রুব হাসানের ধীরস্থির গবেষণা। যার ফল হিসেবে গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের অরল্যান্ডো এবং ইন্ডি গেদারিং ইন্টারন্যাশনাল চলচ্চিত্র উৎসবে নির্বাচিত হয় ছবিটি। তবে আরও বড় প্রাপ্তির আশায় উৎসব দু’টিতে ছবিটির প্রিমিয়ার করেননি নির্মাতা।

অবশেষে যুক্তরাষ্ট্র পেরিয়ে ফারিণের ‘ফাতিমা’ এবার যাচ্ছে ইরানের তেহরানে ফজর আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের ৪২তম আসরে। সেখানে ছবিটির ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হতে যাচ্ছে। নিশ্চিত করেন নির্মাতা ধ্রুব হাসান। জানান, উৎসবের ইস্টার্ন ভিস্তা বিভাগে প্রতিযোগিতা করবে বাংলাদেশের ‘ফাতিমা’।

আগামী ১ থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি তেহরান শহরে শুরু হচ্ছে এই উৎসব।

‘ফাতিমা’র আরেকটি দৃশ্যনির্মাতার ভাষ্যে, ‘চলচ্চিত্রটির নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন তাসনিয়া ফারিণ। এতে প্রথমবার অভিনয় করেছেন স্বনামধন্য গায়ক পান্থ কানাই। তবে ছবিটির মূল শক্তি এর গল্প। ছবিটি নিয়ে উৎসবগুলোতে যাওয়ার মূল কারণ অভিজ্ঞতা অর্জন করা। এই অভিজ্ঞতা ধরে আমি সামনে আরও নতুন নতুন গল্প নিয়ে কাজ করতে চাই। আর পুরস্কার পেলে তো সেটা বাড়তি প্রাপ্তি।’

এর মধ্যে ‘ফাতিমা’ মুক্তির ছাড়পত্র পেয়েছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড থেকে। তেহরান থেকে ফিরেই এটি মুক্তির সিদ্ধান্ত জানাবে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান আউটকাস্ট ফিল্মস।

এদিকে ছবিটি প্রসঙ্গে মন্তব্য চেয়েও পাওয়া যায়নি তাসনিয়া ফারিণকে। তবে এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত আলাপ করেছেন নির্মাতা ধ্রুব হাসান। জানিয়েছেন, কেন ছবিটি নির্মাণে সাত বছর সময় খরচ করেছেন তিনি বা তারা। নির্মাতার ভাষায়, ‘‘এক কথায় বলতে গেলে বলা যায় অর্থনৈতিক কারণে আটকে ছিলাম। প্রথমে এর নাম দিয়েছিলাম ‘দাহকাল’। দুর্ভাগ্যবশত শুটিংয়ের মাঝপথে লগ্নিকারক হুট করে ব্যক্তিগত কারণে হাত গুটিয়ে নেন। ফলে ছবিটার শুটিং একরকম আটকে যায়। এরপর অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে নতুন ভাবনা নিয়ে শুরু করি। জন্ম হয় ‘ফাতিমা’র।’’
 
‘ফাতিমা’য় ইয়াশ রোহান ও তাসনিয়া ফারিণযে ফাতিমা কোনও এক ছোট শহর থেকে ঢাকা আসে কিন্তু সে যেন সারাক্ষণই এই দেশ ও শহর থেকে পালাতে চায়; আসলে পালাতে চায় জীবন থেকে। কিন্তু ভাগ্যের ফেরে সে যে চরিত্রটিতে প্রথমবারের মতো অভিনয় করার সুযোগ পায়, সেই বীরাঙ্গনা সুবর্ণা যেন তাকে অভিনয় থেকে টেনে নেয় বাস্তবতায়। ফাতিমা ও সুবর্ণা যেন দুই সময়ের একটি অবিচ্ছেদ্য মুদ্রা হয়ে ওঠে; যার দুটো মুখ থাকলেও আদতে এক! 

নির্মাতার ভাষায়, ‘নতুন করে গোটা গল্প সাজানোর পর নিজের সব সম্পদ এবং বন্ধুদের কাছ থেকে লোন করে শেষ পর্যন্ত ছবিটিকে মর্গ থেকে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হই। তাই এত বছর লেগে গেলো।’

তুহিন তমিজুলের সিনেমাটোগ্রাফিতে ‘ফাতিমা’র গানের সুর ও সংগীত পরিচালনা করেছেন পাভেল আরীন। শারমিন সুলতানা সুমী লেখার পাশাপাশি কণ্ঠও দিয়েছেন গানটিতে। এ ছবিতে শোনা যাবে মাশা ইসলামেরও একটি গান।

‘ফাতিমা’র আরেকটি দৃশ্যছবিটি প্রযোজনা করেছেন নির্মাতা ধ্রুব হাসান নিজেই। সঙ্গে নির্বাহী প্রযোজক হিসেবে আদনান হাবিব, সহ-প্রযোজক হিসেবে ছিলেন শামসুর রাহমান আলভী ও আরমান কাদেরী।

বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্মাতা-প্রযোজকের টানা সাত বছরের যুদ্ধ শেষে ‘ফাতিমা’র এই বৈশ্বিক উৎসব মুখরতায় বাড়তি মাত্রা যোগ করতে পারে তেহরানের ফজর উৎসব। কারণ, ছবির মুখ্যনেত্রী ফারিণের বিদেশ-ভাগ্য ভালো যাচ্ছে বলে কথা!‘ফাতিমা’র শুটিং মুহূর্ত