গলা থেকে উত্তরীয় নামিয়ে আলতো করে ভাঁজ করলেন সৌমিত্র। এরপর দৃষ্টি নিমগ্ন উত্তরীয়র গায়ে। বাঁকা ভ্রুর স্থিতি অনেকক্ষণ। কিছু একটা তিনি খুঁজছেন! কী সেটা? খানিক বাদে বোঝা যায় তিনি আসলে পড়ছেন, উত্তরীয়তে কী লেখা আছে!
পার্থক্য বোধহয় এখানেই। বয়সের কোঠা ৮০ উতরে তিনি এখন এদেশ-সেদেশ করেন। এবার এসেছেন ঢাকায়।
কাজী সব্যসাচী স্মৃতি পুরস্কার গ্রহণের জন্য বুধবার শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের মঞ্চে বসা এ গুণী। অন্যদের মতো তার গলায় উত্তরীয় পরিয়ে দিয়েছেন আয়োজকরা।
আর সেখানেই এ দৃশ্যের অবতারণা!
মঞ্চের বক্তারা সবাই কমবেশি প্রশংসায় বাক্য সাজিয়েছিলেন। কৃতী আবৃত্তিকার ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের পুত্র কাজী সব্যসাচী ও সৌমিত্রের জন্য এ প্রশংসাবাণ বেশি ছিল। বাংলাদেশ থেকে একই পদক পাওয়া কাজী আরিফ এদিন উপস্থিত না থাকতে পারলেও বিশেষভাবে তার কথা বলা হয়। তবে সবার প্রশংসার ভিড়ে সৌমিত্র চট্টপাধ্যায় বোধহয় বেশি খুশি হয়েছিলেন কবি-লেখক সৈয়দ শাসমুল হকের বক্তব্যে। আর এ কারণেই তার বক্তব্য শেষে হাত বাড়িয়ে দিলেন সৌমিত্র।
আর যা শুনে মুগ্ধ হয়েছেন সৌমিত্র, সেটা হলো- ‘এখানে অনেকে সৌমিত্রকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন তাদের বক্তব্যে। কেউ বলেছেন অভিনেতা, আবৃত্তিকার। কিন্তু কেউ আরও একটি পরিচয় উল্লেখ করেননি। সৌমিত্র একজন কবি। খুব বড় মাপের কবি।’ বলেছিলেন সৈয়দ শামসুল হক।
এরপর অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রেখেছেন অনুষ্ঠানের সভাপতি ও নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর রফিকুল ইসলাম, অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি প্রফেসর ড. আনিসুজ্জামান, নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দ্র মজুমদার, খিলখিল কাজীসহ অনেকে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে কাজী পরিবারের সদস্যরা অতিথিদের ফুল ও উত্তরীয় দিয়ে বরণ করে নেন। বিশেষভাবে স্মরণ করা হয় কাজী সব্যসাচীকে। মূলত এই শিল্পী ১৯৭৯ সালের ২ মার্চ মারা যান। তাকে স্মরণ করেই দেওয়া হলো এ পুরস্কার। এতে আরও ছিল নগদ অর্থ।
অনুষ্ঠানে মূল আকর্ষণ ছিল সৌমিত্র চট্টপাধ্যায়ের কথা। যে কথা, কথায় কথায় রূপ নেই কবিতায়; আবৃত্তিতে। যার কথায় মুগ্ধতা ছড়ায় পুরো প্রেক্ষাগৃহে।
বর্তমানের কবি আমি ভাই, ভবিষ্যতের নই ‘নবী’,
কবি ও অকবি যাহা বলো মোরে মুখ বুঁজে তাই সই সবি!
কেহ বলে, ‘তুমি ভবিষ্যতে যে
ঠাঁই পাবে কবি ভবীর সাথে হে!
যেমন বেরোয় রবির হাতে সে চিরকেলে-বাণী কই কবি?’
দুষিছে সবাই, আমি তবু গাই শুধু প্রভাতের ভৈরবী!
/এম/এমএম/