প্রয়াণ দিনে স্মরণ

সিনেমা জগতের যে অপ্রিয় সত্য বলে গেছেন মান্না

সিনেমা বাণিজ্যে যেটাকে বলে ‘ম্যাস পিপল’; সেই গণমানুষের নায়ক ছিলেন তিনি। তার অভিনীত সিনেমায় উঠে এসেছে সমাজ ও দেশের নানা অসঙ্গতি আর বঞ্চিতদের গল্প। তিনি হয়ে উঠেছিলেন সাধারণ মানুষের স্বপ্নের নায়ক। নাম তার মান্না।

ঢাকার বাণিজ্যিক সিনেমা ঈর্ষণীয় সাফল্য পেয়েছিলেন তিনি। মানুষের কাছে তিনি কতটা প্রিয় ছিলেন, সেটার বিরল নজির দেখা গিয়েছিল ২০০৮ সালের আজকের (১৭ ফেব্রুয়ারি) দিনে। সে দিন তিনি মারা গিয়েছিলেন। আর তার মৃত্যুর খবর শুনে বিএফডিসির আঙিনা থেকে শুরু করে সামনের রাস্তা; গোটা এলাকা যেন জনসমুদ্রে রূপ নিয়েছিল। সকলের চোখের কোণে ছিল জল, বুকে হাহাকার।

ক্যালেন্ডার ঘুরতে ঘুরতে সেই বিষাদময় দিনের ১৬ বছর হয়ে গেলো। আজ (১৭ ফেব্রুয়ারি) মান্নার প্রয়াণ দিবস। দিনটিতে বরাবরের মতোই দর্শকরা তাকে স্মরণ করছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রিয় নায়ককে নিয়ে অনেকেই পোস্ট দিচ্ছেন।

মান্না স্রেফ একজন নায়ক ছিলেন না, বলা হয় ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম বিচক্ষণ মানুষ ছিলেন তিনি। সিনেমা জগতটাকে তিনি যেভাবে উপলব্ধি করেছেন, তা অকপটে বলেও গেছেন। তার সেসব কথা এত বছর পেরিয়ে এখনও সবার কানে বাজে, ঘুরে বেড়ায় অন্তর্জালে।

সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে একটি অপ্রিয় সত্য কথা বলে গেছেন মান্না। যেটা এখনও শোবিজের মানুষকে গভীরভাবে ছুঁয়ে যায়। কথাটি ছিল এরকম, ‘পৃথিবীর কোনও জগৎ যদি থাকে, চলচ্চিত্র জগৎ; এর মতো স্বার্থপর কোনো জগৎ আর নেই। এখানে আমরা সবাই বাণিজ্যিক। হৃদয়, প্রেম, ভালোবাসা, বন্ধুত্ব, চাওয়া-পাওয়া সব মেকি। সিনেমা পরিবারের কেউ যদি বুকে হাত দিয়ে বলে, আমরা সবাই এক পরিবার; না, মিথ্যে। সবাই আলাদা।’

বিভিন্ন রূপে মান্নামান্নার বলে যাওয়া কথাটি কতটা সত্য, তা গত কয়েক বছরের অবস্থা পর্যালোচনা করলেই বোঝা যায়। কেবল একটি সংগঠনের চেয়ার দখল নিয়ে যে কাদা ছোড়াছুড়ির সাক্ষী হয়েছে ঢালিউড, তাতে গোটা দেশের কাছেই ইন্ডাস্ট্রির ভেতরকার চিত্র স্পষ্ট হয়ে গেছে।

উল্লেখ্য, মান্নার আসল নাম সৈয়দ মোহাম্মদ আসলাম তালুকদার। ১৯৬৪ সালের ১৪ এপ্রিল টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি। উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছেন ঢাকা কলেজ থেকে।

১৯৮৪ সালে বিএফডিসি আয়োজিত ‘নতুন মুখের সন্ধানে’ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সিনেমায় আসেন মান্না। তার প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘পাগলী’। এরপর দুই যুগের ক্যারিয়ারে তিন শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন তিনি। যার মধ্যে সফল সিনেমার সংখ্যাই বেশি।

মান্না অভিনীত উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সিনেমা হলো- ‘দাঙ্গা’, ‘কাসেম মালার প্রেম’, ‘আম্মাজান’, ‘শান্ত কেন মাস্তান’, ‘কষ্ট’, ‘বীর সৈনিক’, ‘অবুঝ শিশু’, ‘কাবুলিওয়ালা’, ‘বাদশা ভাই’, ‘শিমুল পারুল’, ‘লুটতরাজ’, ‘তেজী’, ‘কে আমার বাবা’, ‘লাল বাদশা’ ইত্যাদি।

পারিবারিক জীবনে যেমন ছিলেন মান্নাঅভিনেতা হিসেবে একবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, তিনবার মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার, পাঁচবার বাচসাস পুরস্কারসহ বিভিন্ন সম্মাননা পেয়েছেন মান্না।