এই ঈদ উৎসবে কিংবা তারও খানিক আগে চাঁদরাতে, মুক্তি পাচ্ছে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর নতুন সিনেমা ‘মনোগামী’। নুসরাত ইমরোজ তিশার প্রযোজনায় যার প্রধান দুই চরিত্রে অভিনয় করেছেন চঞ্চল চৌধুরী ও জেফার রহমান। বিস্ময়কর তথ্য এই যে নায়িকা হিসেবে গায়িকা জেফারকে নাকি কাস্ট করেছে ফারুকীর দুই বছর বয়সী কন্যা ইলহাম!
চরকি অরিজিনাল এই সিনেমার ভেতরের গল্পে যাওয়ার আগে মূলত চমক হয়ে আছেন সময়ের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী জেফার। ভিন্ন ধারার গান ও অন্যরকম ফ্যাশন স্টেটমেন্টের জন্য সবসময় সবার নজর কেড়েছেন তিনি। এই সিনেমার মাধ্যমে প্রথমবারের মতো অভিনয়ে যুক্ত হলেন জেফার। ফলে জেফারের অভিনয় দেখার আগ্রহ তৈরি হয়েছে অনেকের মাঝে। এর বাইরে ফারুকী-চঞ্চলের অনেক সফল কাজের পর ফের তাদের নতুন রসায়ন দেখার আগ্রহটাও তৈরি হয়েছে দর্শক মনে।
এরইমধ্যে সিনেমার পোস্টার, টিজার ও গান প্রকাশ হয়েছে প্রচারণার অংশ হিসেবে, যেগুলো দর্শক বেশ পছন্দ করছেন।
বলা দরকার, ভিন্নধর্মী শপথ গ্রহণের মাধ্যমে গত বছর ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকি ঘোষণা দেয় ‘মিনিস্ট্রি অব লাভ’ নামের একটি প্রজেক্ট। যেখানে ১২ নির্মাতা ১২টি ভালোবাসার গল্প নিয়ে ১২টি সিনেমা বানাবেন। এরইমধ্যে এই প্রজেক্টের ২টি সিনেমা ‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’ ও ‘কাছের মানুষ দূরে থুইয়া’ মুক্তি পেয়েছে। সিনেমা দুটিই হয়েছে দর্শকনন্দিত ও প্রশংসিত।
এই মন্ত্রণালয়ের তৃতীয় সিনেমা হিসেবে চাঁদরাতে মুক্তি পাচ্ছে ‘মনোগামী’। ছবিটির ভেতরে ও বাইরে রয়েছে অনেক চমকপ্রদ ঘটনা। বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) রাজধানীর এক অভিজাত ভেন্যুতে সাংবাদিক ডেকে যেগুলো এক এক করে শেয়ার করেছেন নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, প্রযোজক নুসরাত ইমরোজ তিশা, অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী, চরকি কর্তা রেদওয়ান রনি এবং নবাগতা নায়িকা জেফার রহমান।
মোস্তফা সরয়ার ফারুকী দীর্ঘদিন ধরে মনোগামী’র জন্য এই চরিত্রের জন্য মুখ খুঁজছিলেন। নতুন মুখের কাউকে প্রয়োজন। ইলহাম তখন জেফারের ‘ঝুমকা’ গানটি নিয়মিত শুনে। এই গান না শুনলে সে নাকি খাবার খায় না। ফারুকী একদিন খেয়াল করে দেখলেন, ‘লামিয়া’ চরিত্রের যেমন কাস্টিং তিনি খুঁজছিলেন, জেফার তার সঙ্গে মানিয়ে যায় একদম। তারপর যেই ভাবনা সেই কাজ। প্রস্তাব গেছে জেফারে কাছে। রাজিও হয়েছেন অভিনয়ে।
জেফারকে যারা চেনেন বা পছন্দ করেন, তারা তার কণ্ঠ বা রূপের চেয়েও বেশি নজরে রাখেন তার চুল! যখন ‘মনোগামী’-তে অভিনয়ের প্রস্তাব পান জেফার, তখন বেশ অবাকই হয়েছিলেন বলে জানান তিনি। জেফার বলেন, ‘ফারুকী ভাইয়ের সিনেমা ও চঞ্চল ভাইয়ের বিপরীতে অভিনয় করতে হবে শুনে আমি প্রথমে বিশ্বাস করতে পারিনি।’
গল্পে গল্পে তিনি বলেন, ‘ফারুকী ভাই যখন আমাকে বলেন আমার চুলের স্টাইলটা পরিবর্তন করতে হবে তখন আমি আরও টেনশনে পড়ে যাই। ১৪ বছর ধরে আমার চুলের এই স্টাইল একই রকম। ফারুকী ভাই বলেন, তাকে বিশ্বাস করতে। আমি শুধু উনার কথা মতো সব করেছি।’
‘মনোগামী’-এর মধ্য দিয়ে সিনেমায় অভিষেক হতে যাচ্ছে চঞ্চলপুত্র শুদ্ধের। রিয়েল লাইফের বাবার সঙ্গে রিলের সামনে বাবা হিসেবে পেয়ে শুদ্ধ বেশ খুশি। শুদ্ধ বলে, ‘আমি বাবার শুটে অনেকবার গিয়েছি। এবার নিজে শুটে গিয়ে খুব নার্ভাস লেগেছিল। শুটের আগের দিন সারা রাত ঘুমাতে পারিনি। ফারুকী আংকেলের এই সিনেমায় কাজ করাটা আমার জন্য অন্যরকম অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে। আর বাবার সাথে কাজ করেও খুব আনন্দ লাগছিল।’
মনোগামী-সিনেমায় চঞ্চল চৌধুরীর সঙ্গে অভিনয় করেছে তারই পুত্র শুদ্ধ। আর শুদ্ধকে সিনেমাতেও চঞ্চলের পুত্র হিসেবেই হাজির করা হয়েছে। সেই সঙ্গে সিনেমায় অন্যতম মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন সামিনা হোসেন প্রেমা। কন্যা রাইও তারই কন্যা হিসেবেই উপস্থিত হবে।
মেট্রোতে সিনেমার শুট
মেট্রোরেল নানান কারণে জনসাধারণের কেন্দ্রবিন্দুতে। ‘মনোগামী’র শুটিংয়ের একটা অংশ করা হয়েছে এই মেট্রোরেলেই। সেই অভিজ্ঞতা বেশ রোমাঞ্চকর ছিল বলেই টিমের সদস্যরা সবাই জানান।
এবার ‘মনোগামী’ নির্মাণের হেতু সম্পর্কে জানালেন ফারুকী। বললেন, ‘‘আমার প্রিয় একটা কাজ হচ্ছে মানুষের মনের ভেতর ছিপ ফেলে দেখা, কি কি ধরা পড়ে সেখানে। ছোট-বড়, তুচ্ছ-গুরুত্বপূর্ণ সবই আমাকে নাড়া দেয়। ‘মনোগামী’তে অনেক দিন পরে মেল-ফিমেল রিলেশনশিপের কিছু দিক নিয়ে এরকম ছিপ ফেলার সুযোগ পেয়েছি।’’
সিনেমার প্রধান চরিত্রের অভিনেতাদের নিয়ে ফারুকী বলেন, ‘চঞ্চল চৌধুরীর সাথে আমার কাজের অভিজ্ঞতা তো বহু পুরনো। এখানেও একই রকম অপ্রতিরোধ্য তিনি। এই ধরনের চরিত্র কম করার ফলে একটা দারুণ ফ্রেশনেস উনি নিয়ে এসেছেন তার অভিনয়ে। জেফারকে আমরা মিউজিশিয়ান হিসাবে চিনি। এখানে তাকে অচেনাই লাগবে। কিন্তু এই চরিত্রে তাকে পাওয়ার ফলে আমার গল্পটা প্রাণবন্ত হয়েছে।’
কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে জেফার বলেন, ‘একজন সংগীতশিল্পী হিসেবে আগেও পর্দায় হাজির হয়েছি। কিন্তু সিনেমায় কাজের অভিজ্ঞতা একদম ভিন্ন। বিষয়টি আমার জন্য অনেক আনন্দের, একই সাথে চ্যালেঞ্জিং। মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর সিনেমায় অভিনয় করতে পারা এবং সহ-অভিনেতা হিসেবে চঞ্চল চৌধুরীকে পাওয়া আমার জন্য কিছুটা চাপের ছিল। কিন্তু ওনারা এত উদার ছিলেন ও সহযোগিতা করেছেন, কাজটা আমার জন্য ব্যাপক রোমাঞ্চকর হয়েছে।’