ক্ষুব্ধ শিল্পী-প্রযোজক

‘গান মেলা’ নিয়ে শিল্পকলার আপত্তি!

‘গান মেলা’র আয়োজন নিয়ে আপত্তি প্রকাশ করেছে জাতীয় শিল্পকলা একাডেমি। গত বছর একাডেমি প্রাঙ্গনে সফলভাবে শেষ হয় এমআইবি (মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ)-এর আয়োজনে দেশের প্রথম ‘গান মেলা’। প্রথম আসরেই সংগীত সংশ্লিষ্ট মানুষের প্রাণের মেলায় পরিণত হয়েছিল এটি। বছর পেরিয়ে এই এপ্রিলে আবারও অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা সেটি। সে হিসেবে চলছিল জোর প্রস্তুতি। যদিও সেই প্রস্তুতিতে খানিন ‘অপ্রস্তুত’ হয়ে পড়লেন আয়োজকরা।

গান মেলা- ২০১৬এদিকে সময় ঘনিয়ে এলেও শিল্পকলা একাডেমি আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও অনুমোদন দেওয়া না দেওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট করেনি। বরং দিন যত ঘনাচ্ছে নানা জটিলতা সৃষ্টি করছে একাডেমি কর্তারা। এমনটাই অভিযোগ করছেন ‘গান মেলা’ উদোক্তারা। এমআইবি গান প্রযোজকদের সংগঠন হলেও এই মেলার সঙ্গে যুক্ত আছেন দেশের অধিকাংশ জনপ্রিয় এবং তরুণ সংগীত শিল্পী। ফলে গান মেলা’র ভেন্যু নিয়ে শিল্পকলার এমন আচরণে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে সংগীতের সর্বত্র।

এমআইবির সভাপতি একেএম আরিফুর রহমান বলেন, ‘আমরা চেয়েছি, এ মাঠেই প্রতিবছর মেলার আয়োজন করতে। কিন্তু তারা (শিল্পকলা একাডেমি) আমাদের অনুমতি দিচ্ছে না! এতে খুবই অবাক হলাম আমরা। শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী ভাই আমাদের বলেছেন, তাদের অস্তিত্ব বিলীন করে নাকি আমাদের মেলার জায়গা দিতে পারবেন না। এটা কী ধরনের কথা, সেটাই আমাদের বোধগম্য হচ্ছে না।’

এ বিষয়ে দেশের অন্যতম কণ্ঠ তারকা কুমার বিশ্বজিৎও বিস্ময় প্রকাশ করেছেন শিল্পকলার এমন সিদ্ধান্তে। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় না এমন সিদ্ধান্তের পেছনে শুধু শিল্পকলার অনাগ্রহই কাজ করেছে। এখানে অন্য অনেক ফ্যাক্টর কাজ করতে পারে। যাইহোক, বিষয়টি বাংলা সংগীতের জন্য মোটেই সুখকর সংবাদ নয়। এটা শিল্পকলার কাছ থেকে অনাকাঙ্খিত।’

গান মেলা-২০১৫ এর সংবাদ সম্মেলনে প্রযোজক-শিল্পী-সুরকার-গীতিকারদের ফটো সেশন।এদিকে সিএমভির কর্ণধার ও এমআইবি’র মহাসচিব এসকে শাহেদ আলী জানান, গত বছর শিল্পকলার সমর্থন নিয়ে সুন্দর-সুষ্ঠুভাবে মেলা পরিচালনা করেছেন তারা। যেখানে শিল্পকলার অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার মতো প্রসঙ্গই আসতে পারে না। শাহেদ আলীর প্রশ্ন, শিল্পকলা তো শুধু নাটকের জন্য নয়, গান কী তাহলে শিল্পকলার অংশ নয়? বাংলা গানের প্রচার ও প্রসার কী শিল্পকলা চায় না? সংগীতাঙ্গনে এখন এসব প্রশ্নই ঘুরে বেড়াচ্ছে।
এ ব্যাপারে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘শুধু আমি অনুমতি দিলেই তো হবে না। গানের মেলা আয়োজনের জন্য সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অনুমতিটাই আসল। সেখানে অনুমতি চাওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় যদি অনুমতি দেয় তাহলে মেলা হবে, অনুমতি না দিলে আমাদের পক্ষ থেকে কিছুই করার নেই।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিল্পকলা একাডেমির একজন কর্মকর্তা জানান, গতবছর ‘গান মেলা’ তাদের নাট্যচর্চায় ব্যাঘাত ও শব্দ দূষণ করেছে। এই ইস্যু ধরেই এবার মেলা করার অনুমতি পাচ্ছে না সংশ্লিষ্টরা।

অন্যদিকে, শেষ পর্যন্ত শিল্পকলায় ভেন্যুর অনুমোদন না পেলেও ‘গান মেলা’ এবার আরও বড় পরিসরে হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। গতবারের মতো এবারের মেলাও ১০ দিনের হবে। এবারের মেলা ঘিরেও থাকছে নতুন নতুন চমক। এবারও শতাধিক অডিও-ভিডিও অ্যালবাম প্রকাশ পেতে যাচ্ছে মেলায়। পাশাপাশি থাকবে প্রতিদিন উন্মুক্ত মঞ্চে বাংলাদেশের গান নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা এবং জমকালো কনসার্ট।

গান মেলা- ২০১৫ আসরে সর্বস্তরের সংগীত শিল্পীদের মহামিলন।/এস/এমএম/