মসজিদ মন্দিরে যেতে বলো না আমায়... এমন কথার মৌলিক গান গেয়ে অসাম্প্রদায়িক মানুষ হিসেবে নিজেকে ভিন্নমাত্রায় নিয়েছেন জনপ্রিয় বাউল শফি মণ্ডল। পাশাপাশি সুফিবাদ প্রচারে লালন ফকিরের গান গেয়ে জনপ্রিয়তা পাওয়া এই শিল্পী এবার নিজ গ্রামে সাধকদের ভাব-সাধনার জন্য ‘সুধা সিন্ধু ভাবাশ্রম’ নামের একটি ঠিকানা গড়ে তুলছেন। শহুরে কোলাহল ফেলে যেখানে ফিরতে চান তিনি নিজেও।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার নিজ গ্রাম হোসেনাবাদে গড়ছেন এই ভাবাশ্রম। জীবনের শেষ সময়গুলো সেখানেই কাটাতে চান তিনি।
আশ্রম তৈরির বিষয়ে জানতে চাইলে শফি মণ্ডল বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ভাবাশ্রম নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। শেষ হতে বছর খানেক সময় লাগবে।
বলা দরকার, নতুন গান তৈরি ও পরিবেশনার সুবাদে শফি মণ্ডলের বর্তমান বসবাস রাজধানীর মোহাম্মদপুরের একটি ফ্ল্যাটে।
শিল্পী হিসেবে ভক্ত ও দর্শকদের কাছে নিজেকে সামনে আরও কীভাবে মেলে ধরতে চান জানতে চাইলে এই শিল্পী গড়ার কারিগর বলেন, ‘মনে তারুণ্য থাকলেও শরীরে সেই তারুণ্য তো নেই এখন। গান গাইলে ত্রুটি হতে পারে। তবে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত আমি গাইতে চাই।’
শফি মণ্ডলের ভক্তরা জানান, তিনি হিন্দু বা মুসলিম ধর্মে না, মানব ধর্মে বিশ্বাসী একজন মানুষ। অসাম্প্রদায়িক চেতনার এই মানুষটির গানে হাতেখড়ি হয়েছিল ছোটবেলায় মামাতো ভাই সাবদার হোসেনের কাছে। এরপর ১৯৭৯ সালে উচ্চাঙ্গসংগীতের তালিম নেন ভারতের শ্রী সাধন মুখার্জির কাছে। গুরু সাধন মুখার্জির পরামর্শে বেছে নেন সুফিবাদ সংগীতের পথ। ‘ষষ্ঠ কান্ত কবি উৎসব-২০২২’ পুরস্কারও পেয়েছেন শফি মণ্ডল।
নন্দিত এই বাউলশিল্পী প্রভুপ্রেমে খেলাফত নিয়েছেন। ‘এসো হে প্রভু নিরঞ্জন’- এই বাণীর প্রতিপাদ্যে প্রয়াত গুরু সুলতান ফকিরের আদেশে খেলাফত নিয়েছেন শফি মণ্ডল। ইহজাগতিক লোভ, লালসা, মায়া-মমতা ও মোহ ত্যাগ করে জীবিত থেকেই গ্রহণ করেছেন মরণের স্বাদ। সস্ত্রীক খেলাফত গ্রহণ উপলক্ষে এই শিল্পীর আখড়াবাড়িতে সাধুসঙ্গ অনুষ্ঠানে আগমন ঘটেছিল হাজারো সাধু, গুরু, বাউল ও লালন অনুসারীর।