সোমবার সোনারগাঁয়ে দাফন

দিতির মরদেহ এফডিসিতে নিতে আপত্তি পরিবারের!

টানা ৩২ বছরের চলচ্চিত্র জীবন ছিল নন্দিত অভিনেত্রী পারভীন সুলতানা দিতির। আজ রবিবার বিকাল ৪টা ৫ মিনিটে না ফেরার দেশে চলে যান জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী এ অভিনেত্রী। তার আগে টানা আট মাস তিনি যুদ্ধ করেছেন জীবনঘাতী ক্যানসারের সঙ্গে।

মাস তিনেক আগে হাসপাতালে দিতির পাশে পুত্র ও কন্যা।দিতির মুত্যুর খবরে শোকের ছায়া নেমেছে পুরো সাংস্কৃতিক অঙ্গনে। ফেসবুকের দেয়ালগুলো ভরে উঠেছে অগুনতি মানুষের শোকবাণীতে । তাৎক্ষণিকভাবে নগরীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ছুটে গেছেন অভিনেত্রী সূবর্ণা মুস্তাফা, বাঁধন, অভিনেতা রিয়াজ, নির্মাতা মুশফিকুর রহমান গুলজার, চয়নিকা চৌধুরীসহ অসংখ্য ভক্ত ও মিডিয়া কর্মী।

বাংলাদেশ পরিচালক সমিতির মহাসচিব মুশফিকুর রহমান গুলজার বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, পারিবারিক ভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে- আজ রবিবার এশার নামাজের পর গুলশান আজাদ মসজিদ প্রাঙ্গণে দিতির প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর মরদেহ রাখা হবে ইউনাইটেড হাসপাতালের হিমঘরে। কাল সোমবার সকাল সাতটা থেকে দশটা পর্যন্ত সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য গুলশানের বাসায় রাখা হবে মরদেহ। ...

 

 

দিতি।এদিকে বাংলা ট্রিবিউনের নারায়নগঞ্জ প্রতিনিধি দিতির বড় ভাই মনির হোসেনের বরাত দিয়ে জানান, সোমবার দুপুরে ঢাকা থেকে দিতির মরদেহ সোনারগাঁওয়ের দত্তপাড়ায় বাবার বাড়িতে নিয়ে আসা হবে। পরে বাদ জোহর স্থানীয় মসজিদের মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।

কিন্তু এমনটা তো কথা ছিল না। তবে কী ৩২ বছরের অভিনয় জীবন পেরিয়ে শেষ বিদায়ের আগে সম্মান প্রদর্শনের জন্য দিতির মরদেহ যাচ্ছে না তার দীর্ঘদিনের কর্মস্থল বিএফডিসিতে? এমন প্রশ্নের সঠিক কোনও জবাব দিতে পারেননি পরিচালক সমিতির মহাসচিব ও দিতির পারিবারিক বন্ধু মুশফিকুর রহমান গুলজার। তিনি শুধু এটুকু বলেন, ‘আসলে এ বিষয়ে কথা হচ্ছে। তবে এখনও কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি পরিবারের পক্ষ থেকে।’ ...

 

 

দিতি।এদিকে একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, দিতির পরিবারের প্রধান সিদ্ধান্ত আসে তার কন্যা লামিয়া চৌধুরীর কাছ থেকে। মৃত্যুর খবর পেয়ে চলচ্চিত্র অঙ্গনের অনেক সিনিয়র হাসপাতালে ছুটে যান। লামিয়ার কাছে আগ্রহ প্রকাশ করেন সোমবার সকালে বিএফডিসিতে দিতিকে শেষ বিদায় জানানোর। কিন্তু এ বিষয়ে তিনি বারবার অনাগ্রহ প্রকাশ করছেন এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত। আরও জানা যায়, পরিচালক ও শিল্পী সমিতির একাধিক নেতা লামিয়ার সিদ্ধান্ত বদলানোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চলচ্চিত্র অভিনেতা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, কোনও এক অজানা কারণে লামিয়া এফডিসি তথা চলচ্চিত্রাঙ্গনের প্রতি ক্ষুব্ধ। হতে পারে দিতি আপার এ বিষয়ে কোনও অভিমান ছিল, যা লামিয়াকে বলেছেন। কিংবা দিতি আপা হয়তো কখনও বলেছেন, মৃত্যুর পর তাকে যেন বিএফডিসিতে না নেওয়া হয়। যদিও এসব বিষয়ে লামিয়া কিছুই বলছে না। বরং সোমবার সকালে এফডিসির নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে গুলশানে নিজ বাসায় সর্বস্তরের শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছেন মিডিয়াকে।

সাধারণত সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিশেষ ব্যক্তিদের প্রয়াণের পর সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয়।তবে কি দিতির মরদেহ এফডিসির বদলে শহীদ মিনারে নেওয়া হতে পারে? এ বিষয়ে জানতে চাইলে জোটের নেতা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এ নিয়ে এখনও (রবিবার সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত) আলোচনা হয়নি।’  

প্রসঙ্গত, দিতির অসুস্থতার শুরু থেকেই তার শয্যা পাশে ছিলেন দুই সন্তান সাফায়েত চৌধুরী ও লামিয়া চৌধুরী। মূলত এ দুজনের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বলে জানা গেছে।

/এমএম/টিএন/