অভিনেতা তো বটেই, সময়ের আলোচিত নায়ক শরিফুল রাজ একজনও পিতাও। সেজন্য, সিনেমার ঘন গল্পের মাঝেও নিজের অজান্তে চলে আসে পুত্র রাজ্য!
রাজ্যর গল্পে যাওয়ার আগে রাজের চলমান রেকর্ড নিয়ে আলাপ করা যাক। বাংলা সিনেমার মাল্টিপ্লেক্স ইতিহাসে এবারই প্রথম কোনও নায়কের একসঙ্গে তিনটি ছবি চলছে পাশাপাশি পর্দায়। ছবি তিনটি হলো ‘পরাণ’, ‘হাওয়া’ ও ‘দামাল’। পাশাপাশি ওটিটি প্ল্যাটফর্মে চলছে একই নায়কের সিনেমা ‘গুণিন’। সে হিসেবে বলা যায়, বাংলা সিনেমায় নতুন ইতিহাসের পতাকা বহন করছেন নায়ক রাজ।
তারচেয়েও বড় কথা, প্রথম দুটি ছবি সুপার হিট। ঢালিউড শেষ কবে একসঙ্গে এমন জোড়া সফলতা পেয়েছে, সেটি এখন আর মনে করতে পারছেন না তেমন কোনও বিশ্লেষক। তবে তারা এটুকু অনুমান করতে পারছেন, সুপার হিটের হিসাবে রাজের ক্যারিয়ারে দ্রুতই যুক্ত হচ্ছে আরও একটি ছবি; ‘দামাল’। মুক্তির প্রথম দিনে (২৮ অক্টোবর), অন্তত সেই আভাস মিলছে দেশের ২২টি প্রেক্ষাগৃহ থেকে।
রাজের নীরবতা ভাঙিয়ে প্রশ্ন ছিল বাংলা ট্রিবিউন-এর; এমন দিনে ঘরে কেন? ‘দামাল’ দলের সঙ্গে কোনও অভিমান! হাই তুলতে তুলতে রাজ বললেন, ‘দলের ক্যাপ্টেন যদি অভিমান করে, তাহলে চলে! তাছাড়া আমাদের আসল ক্যাপ্টেন (রায়হান রাফী), স্ট্রাইকার (সিয়াম আহমেদ) তো মাঠেই আছেন। আমি আসলে গতকাল গভীর রাত পর্যন্ত শুটে ছিলাম। সকালে একটু চোখ বুজলাম। মাত্র (বিকাল ৪টা) ঘুম ভাঙলো। এখন আবার রিচার্জ হলাম। সন্ধ্যায় বের হবো টিমের সঙ্গে। স্টার সিনেপ্লেক্স দিয়ে শুরু করবো।’
শুধু প্রশংসা নিয়ে ক্ষান্ত নন রাজ। ঢালিউড প্রযোজকদের অন্যতম ভরসার জায়গাটাও এখন এই নায়ক। যে প্রযোজকরা প্রায় নিয়মিত মার খেয়ে আসছে এক দশক ধরে। যে ইন্ডাস্ট্রির পরিচিতি ছিল ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ হিসেবে। কারণ লাভ তো পরের কথা লগ্নিটাই ফেরত পাওয়া যায় না এখানে! সেই বাজারে শরিফুল রাজ এখন ভরসার নাম। নায়ক নিজেও বিষয়টি নিয়ে বেশ সচেতন।
পর পর দুটি ছবি হিট আর দেশের সব মাল্টিপ্লেক্সসহ বেশিরভাগ সিঙ্গেল স্ক্রিন এখন তারই দখলে! সেই হিসাবে অনেকেই বলতে চাইছেন, রাজের হাত ধরে ঢালিউডের পুরনো যৌবন ফিরছে। এমন মন্তব্য সরাসরি মানতে নারাজ রাজ। বরং তিনি টেনে আনছেন এই সময়টাকে।
তবু এটা তো আলাদা করে একটু ক্রেডিট নেওয়াই যায়, কারণ দেশ ও বিদেশের প্রেক্ষাগৃহে এখন অনেকটাই চলছে একনায়কতন্ত্র! শব্দটি নেতিবাচক হলেও ঢালিউডের জন্য সেটা এখন পুরোটাই ইতিবাচক। জবাবে হাসলেন রাজ। জবাবে গেলেন একটু গভীরে। বললেন, ‘একটা মনের কথা বলি। আমার না এই তন্ত্র-মন্ত্র খুব বেশি ভাবায় না। কারণ, প্রথমত কাজটা আমি করি একেবারে নিজের পছন্দের জায়গা থেকে। আমার করা প্রতিটি কাজ বা চরিত্র ওউন করার চেষ্টা করেছি। আরও চেষ্টা করি, প্রযোজক যেন লগ্নিটা ফেরত পায়। তাকে যেন মুখটা দেখাতে পারি। তবে এসবের বাইরে এই যে সফলতার গল্পগুলো বলছে সবাই, সেগুলো আমি একটু একটু করে জমা রাখছি আমার ছেলের সঙ্গে শেয়ার করার জন্য। এই সুসময়ের গল্পটা ছেলের কাছে প্রাউডলি করতে চাই। বিশ্বাস করবেন না, আমি যখন এই বিষয়টি অনুভব করি, সব কষ্ট-শ্রম-বেদনা ভুলে যাই। একটা সুন্দর সময়ে আমাদের রাজ্য এসেছে। এই সুন্দরটাকে ও বড় হওয়া পর্যন্ত ধরে রাখতে চাই। এই সুন্দরের গল্পগুলো ওর সঙ্গে শেয়ার করতে চাই। আর কিছু না।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজ্যর জন্য হলেও রোমান, রমিজ, ইব্রাহিম ও মুন্নার জয়রথ অব্যাহত থাকুক। বাঁচুক ঢালিউড। এমন স্বপ্ন দেখেন রাজও। তবে তার আগে নায়কের ছোট্ট ইচ্ছা, পরী-রাজ্যকে নিয়ে ‘দামাল’ ছবিটি দ্রুতই হলে বসে দেখা।
চলতি বছরের ১০ আগস্ট পরীমণি-শরিফুল রাজের কোলজুড়ে আসে শাহীম মুহাম্মদ রাজ্য।