সাইক্লোন-টাইফুন ও হারিকেন কী?
সাইক্লোন, টাইফুন, হারিকেন-শুনতে তিনটি পৃথক ঝড়ের নাম মনে হলেও আসলে এগুলো অঞ্চলভেদে ঘূর্ণিঝড়েরই ভিন্ন ভিন্ন নাম। সাধারণভাবে ঘূর্ণিঝড়কে সাইক্লোন বা ট্রপিক্যাল সাইক্লোন বলা হয়। সাইক্লোন শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ কাইক্লোস থেকে, যার অর্থ বৃত্ত বা চাকা।
ভারত মহাসাগরে উৎপন্ন ঝড়গুলোকে সাইক্লোন বলা হয়। আটলান্টিক মহাসাগর এলাকা তথা যুক্তরাষ্ট্রের আশেপাশে ঘূর্ণিঝড়ে বাতাসের গতিবেগ যখন ঘন্টায় ৭৪ মাইল এর বেশি হয়, তখন জনগণকে এর ভয়াবহতা বুঝাতে হারিকেন শব্দটি ব্যবহার করা হয়। মায়াদেবতা হুরাকান- যাকে বলা হত ঝড়ের দেবতা, তার নাম থেকেই হারিকেন শব্দটি এসেছে। তেমনিভাবে, প্রশান্ত মহাসাগর এলাকা তথা চীন, জাপানের আশেপাশে হারিকেন- এর পরিবর্তে টাইফুন শব্দটি ব্যবহৃত হয়।
নামকরণ নিয়ে দ্বন্দ্ব ও ঐকমত্য
১৯ শতকের মাঝামাঝি সময়ে দেখা গেল যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়াবিদরা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়ের নাম দিতে শুরু করেন মেয়েদের নামে। এ নিয়ে নারীবাদীদের তুমুল সমালোচনা শুরু হলে পরে আবহাওয়াবিদরা বর্ণমালার ক্রমিক অনুযায়ী ঝড়ের নাম দেওয়া শুরু করেন। ১৯ শতকের শেষের দিকে দক্ষিণ গোলার্ধের আবহাওয়াবিদরা পুরুষের নাম দেয়া শুরু করে।
২০০০ সালে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার সভায় আরব সাগর এবং বঙ্গোপসাগরের সাইক্লোনের নামকরণ নিয়ে একটি ঐকমত্য হয়। সদস্য দেশগুলোর দাবির মুখে ২০০৪ সাল থেকে আমাদের এ অঞ্চলে ঝড়ের নাম দেওয়া শুরু হয়। এক্ষেত্রে পূর্বনির্ধারিত একটি নামের তালিকা থেকে একেকটি ঝড়ের নাম দেওয়া হয়। কোনও ঝড়ের গতিবেগ যদি ঘণ্টায় ৩৯ মাইল হয়, তাহলে তাকে একটি নাম দেওয়া হয়। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের আবহাওয়া অফিসগুলো এই নামকরণের দায়িত্ব পালন করে থাকে। ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেয়ার কারণও বেশ সহজ। এগুলোর এমন নাম দেয়া হয় যেন বিজ্ঞানী থেকে সাধারণ মানুষ সহজে মনে রাখতে পারে।
আটলান্টিক মহাসাগর এলাকায় বাতাসের গতিবেগ ঘন্টায় ৬২ কি.মি.-এ উন্নীত হলে অর্থাৎ নিম্নচাপ যখন ঝড়ে পরিণত হয়, তখন এটিকে চিহ্নিত করার জন্য একটি নাম দেয়া হয়। হারিকেন অবস্থাতেও এগুলো এ নামেই পরিচিত হয়। ইংরেজি বর্ণমালা অনুসারে ২১ টি নাম (৫ টি অক্ষর বাদ দিয়ে) এক বছরের জন্য বাছাই করা হয় যেগুলো সাধারণত পর্যায়ক্রমিকভাবে ছেলে ও মেয়েদের নাম দিয়ে রাখা হয়। যেমন-২০০৬ সালের প্রথম হারিকেনটির নাম আলবার্টো, দ্বিতীয়টি বেরিল ইত্যাদি। এক বছরে ২১ টির বেশি হারিকেন উৎপন্ন হলে (২০০৫ সালে যেমন হয়েছিল), গ্রিক বর্ণমালা অনুযায়ী নামকরণ করা হয়- হারিকেন আলফা, বিটা ইত্যাদি। এরকম ছয় বছরের জন্য নাম আগেই নির্ধারণ করে রাখা হয় এবং ছয় বছর পর পর একই নামগুলো আবার ফিরে আসে। তবে ক্যাটরিনা নাম আর কখনো ফিরে আসবে না, কারণ ধ্বংসাত্মক হারিকেনের নামগুলো তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয় এবং নতুন নাম নির্ধারণ করা হয়। ঘূর্ণিঝড়ে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েই এমনটা করা হয়। যে নামটি বাদ দেওয়া হচ্ছে তার প্রথম অক্ষর অনুযায়ীই নতুন নাম নির্ধারণ করা হয়। তা যদি পুরুষদের নাম হয় তবে নতুন নামও পুরুষদের নামে আর তা যদি নারীদের নামে হয় তবে নতুন নামটি নারীর নামে হবে। সূত্র: ইন্ডিয়া টুডে, উইকিপিডিয়া
/এফইউ/বিএ/