যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের অরল্যান্ডোর সমকামী পালস নাইটক্লাবে দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্দুক হামলার পর রবিবার (১২ জুন) রাতে এক মার্কিন ধর্মযাজক ওই হামলার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। সেই সঙ্গে সমাকামীদের প্রতি বিদ্বেষ প্রকাশ করেছেন। উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ায় একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। তার বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন ধর্মীয় নেতা থেকে শুরু করে গণমাধ্যম এবং মানবাধিকার কর্মীরা।
ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের রাজধানী স্যাক্রামেন্টোর ভেরিটি ব্যাপ্টিস্ট চার্চের ওই যাজকের নাম রজার জিমেনেজ। তিনি বলেন, ‘খ্রিস্টানদের ওই ৫০ জন সমকামীর জন্য শোকপালন করা উচিত নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘যদি আপনারা আমাকে জিজ্ঞেস করেন, আমি ওই ৫০ জনের মৃত্যুতে ব্যথিত কিনা? আমি এর উত্তরে বলবো, একদমই না। আমি মনে করি, খুব ভালো কাজ হয়েছে। এ থেকে সমাজ উপকৃত হয়েছে। আমার ধারণা, অরল্যান্ডো আজ আরও নিরাপদ।’
রজার জিমেনেজ বলেন, ‘এটাই দুঃখ যে, তাদের বেশিরভাগই মরেনি। আমি কিছুটা দুঃখিত, কারণ তিনি (হত্যাকারী) তার কাজ সম্পন্ন করে যেতে পারেননি।’
খ্রিস্টীয় রক্ষণশীল নেতা এবং ন্যাশনাল হিস্প্যানিক ক্রিশ্চিয়ান লিডারশিপ কনফারেন্স-এর প্রেসিডেন্ট স্যামুয়েল রদ্রিগেজ বলেন, ‘আমি তার পুরো বক্তব্যের নিন্দা জানাই।’ স্থানীয় স্যাক্রামেন্টো বি পত্রিকার কলামিস্ট মার্কোস ব্রেটনকে তিনি এসব কথা বলেন।
মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ক্যাম্পেইন-এর মুখপাত্র জয় ব্রাউন মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেন, ‘ওই ধর্মযাজকের ধর্মোপদেশে খ্রিস্টীয় কিছুই ছিল না।’ তিনি আরও বলেন, ‘তিনি ঘৃণার ধর্মপ্রচার করেছেন। তার ওই বক্তব্য হামলায় বেঁচে যাওয়া মানুষগুলো, নিহতদের পরিবার এবং বন্ধুদের জন্য অস্বস্তিকর।’
ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রজার জিমেনেজের ভেরিটি ব্যাপ্টিস্ট চার্চে সমকামীদের ঢুকতে দেওয়া হয় না। ওই চার্চের মতে, ‘সমকামিতা একটি পাপ। ঈশ্বরের নিকট তা কদর্য, ঈশ্বরের নিকট তার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।’
জিমেনেজ মঙ্গলবার স্যাক্রামেন্টো বি পত্রিকাকে বলেন, ‘ওই অনুষ্ঠানের পর থেকে আমরা বেশকিছু হুমকি পেয়েছি। তবে এখানে অনেক মানুষই আছেন, যারা আমার সঙ্গে সহমত পোষণ করেন।’
মঙ্গলবার মার্কোস ব্রেটন স্যাক্রামেন্টো বি-তে লেখেন, ‘ভেরিটি চার্চ ব্যাপ্টিস্ট বিশ্বাসের সঙ্গে যুক্ত কোনও শাখা নয়। তার মানে জিমেনেজ একটি বৃহৎ ধর্মীয় সম্প্রদায়ের প্রতি কোনও দায়বদ্ধতা ছাড়াই, যা খুশি তা-ই বলতে পারেন।’
ভেরিটি ব্যাপ্টিস্ট চার্চ সম্পর্কে ন্যাশনাল ব্যাপ্টিস্ট কনভেনশন-এর গণমাধ্যম বিষয়ের পরিচালক জারলেন ইয়ং-নেলসন বলেন, ‘এটা হলো এমন একটি দোকান খুলে বসার মতো, যাকে যা খুশি বলা যায়।’
রজার জিমেনেজের ওই বক্তব্যের ভিডিও তার চার্চের ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করা হয়েছিল। কিন্তু ইউটিউবের নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় মঙ্গলবার ইউটিউব কর্তৃপক্ষ তাদের সার্ভার থেকে ভিডিওটি সরিয়ে দেন। আর এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, ওই ভিডিওর ঘৃণাপূর্ণ বক্তব্যকে।
উল্লেখ্য, ফ্লোরিডার ওই নাইটক্লাবে চালানো সন্ত্রাসী হামলায় ৪৯ জন নিহত হন। ওই ঘটনায় ৫০ জন নিহত হয়েছে বলে শুরুতে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে সংবাদ প্রকাশ করা হলেও পরে তা পরিবর্তন করে ৪৯ বলা হয়। আরও ৫৩ জন আহত হন ওই ঘটনায়। শনিবার (১১ জুন) দিবাগত রাত ২টার দিকে ফ্লোরিডার অরল্যান্ডো শহরের পালস নাইটক্লাবে ঢুকে গুলি চালান ওমর মতিন নামক এক ব্যক্তি। এরপর তিনি নাইটক্লাবে অবস্থান করা লোকজনকে জিম্মি করেন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানায়, ওমর মতিনের কাছে একটি এআর-১৫ রাইফেল, একটি পিস্তল এবং দুটি সন্দেহজনক যন্ত্র ছিল। স্থানীয় সময় আনুমানিক ভোর ৫টার দিকে এসডব্লিউএটি-এর বিশেষ কমান্ডোরা জিম্মিদের মুক্ত করার জন্য অভিযান চালান। ওই অভিযানে ওমর মতিন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।
ওই হামলার পর ওমর মতিনকে জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) নিজেদের যোদ্ধা বলে দাবি করে। তবে মার্কিন তদন্তকারী কর্মকর্তারা এখনও আইএস-এর সঙ্গে মতিনের সম্পর্কের বিষয়ে নিশ্চিত নন বলে জানা গেছে।
সূত্র: ওয়াশিংটন পোস্ট।
আরও পড়ুন:
‘আইএস ছাড়া অন্যান্য জঙ্গি গোষ্ঠীর প্রতিও অনুগত ছিলেন মতিন’
সিরিয়ায় রমজানের প্রথম সপ্তাহে সহিংসতায় নিহত দুই শতাধিক
যেভাবে জঙ্গিতে পরিণত হন ওমর মতিন
/এসএ/এপিএইচ/