সোনি কুরেশী নামের ওই তরুণীর মৃতদেহ পরিবারের লোকজন খুব তাড়াতাড়ি কবর দিয়ে দেয়।
এই ভিডিও প্রকাশ হওয়ার পর পুলিশ কবর থেকে মৃতদেহ তুলে ময়নাতদন্ত করিয়েছে।
১৮ আগস্ট ২০১৬ তারিখে ওই ভিডিও রেকর্ড করেন কুরেশী। আর ১৯ অগাস্ট তাকে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
ভিডিওতে কুরেশী বলেন, ‘আমার বাবা, ভাই আমাকে মেরে ফেলতে চায়। সেজন্যই আমাকে গ্রামে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমি সাবালিকা, আমি আমার প্রেমিককে বিয়ে করতে চাই। তাই আমাকে মেরে ফেলতে চায় ওরা। আমার যদি কিছু হয়ে যায়, তাহলে ওরাই দায়ী থাকবে।’
হাথরাস জেলার পুলিশ সুপারিন্টেনডেন্ট অজয় পাল শর্মা বিবিসিকে জানান, ‘ওই ভিডিওতে তরুণী যাদের নাম বলেছেন মারা যাওয়ার আগে, তাদের নামে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তবে সবাই পালিয়েছে, আমরা তাদের গ্রেফতার করার চেষ্টা করছি।’
পুলিশ বলছে ওই তরুণী পরিবারের সঙ্গে মুম্বাইতে থাকতেন। তাকে যখন এক আত্মীয় ট্রেনে করে উত্তর প্রদেশে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তখনই তার সন্দেহ হয় যে তাকে মেরে ফেলা হতে পারে।
ওই তরুণীর সঙ্গে ইমরান নামের এক যুবকের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার পথে ট্রেনের শৌচালয়ে দাঁড়িয়ে তিনি ওই ভিডিও রেকর্ড করেছিলেন।
পুলিশ বলছে, তার প্রেমিক ইমরান নিজেই ওই ভিডিওটা রেকর্ড করেছিলেন। তরুণীর প্রেমিক ইমরানের সঙ্গেও কথা বলেছে পুলিশ। তারও সন্দেহ হয়েছিল যে, সোনির সঙ্গে ভয়ানক কিছু করা হতে পারে। কিন্তু ইমরানও ভাবতে পারেননি যে, পরের দিনই মেরে ফেলা হবে তার বান্ধবীকে।
এক স্থানীয় সাংবাদিক সুরজ মৌর্য সোনি কুরেশীর গ্রামে গিয়েছিলেন সরেজমিনে খবর সংগ্রহ করতে। তিনি বিবিসিকে জানিয়েছেন নওরঙাবাদ গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ এই বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাননি।
গ্রামের লোকরা তাকে শুধু এটা জানিয়েছেন যে, ওই তরুণী পেট ব্যথায় মারা গেছেন – পরিবার থেকে গ্রামবাসীদের এটাই জানানো হয়েছিল। কবর দেওয়ার সময়েও গ্রামের লোকেরা হাজির ছিলেন।
ভারতে মাঝেমধ্যেই অনার কিলিং-এর অনেক ঘটনা সামনে আসে। পরিবারের সম্মান রক্ষার নাম করে তরুণ-তরুণীদের পরিবারের লোকেরাই হত্যা করে।
ভিন্ন ধর্ম বা জাতের ছেলেমেয়েরা প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লে অথবা বাড়ি থেকে পালিয়ে বিয়ে করলে উত্তর ও পশ্চিম ভারতের গ্রামাঞ্চলে এভাবে নিজ পরিবারের সদস্যদের হাতেই খুনের শিকার হন অনেকে।
অনেক পরিবারই মনে করে, পরিবারের অমতে এভাবে বিয়ে করলে বা কোনও সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লে পরিবারের বদনাম হয়। তাই সম্মান বজায় রাখতে এ ধরনের হত্যাকাণ্ডে তারা দ্বিধা করে না। সেসব পরিবারগুলো এতে গর্ববোধ করে, এমনকি জেলে যেতেও পিছপা হয় না। সূত্র: বিবিসি বাংলা।
/এমপি/