ফাঁস হওয়া পানামা পেপারস কিনছে ডেনমার্ক

বিশ্বের প্রথম কোনও দেশ হিসেবে পানামা পেপারসে ফাঁস হওয়া তথ্য কিনছে ডেনমার্ক। করফাঁকি অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে এ উদ্যোগ নিয়েছে দেশটি। বুধবার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।
পানামা পেপারসের ফাঁস হওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ৫০০ থেকে ৬০০ জন ডেনিশ নাগরিকের ওপর তদন্তের পরিকল্পনার করা হচ্ছে।

ডেনমার্কে করমন্ত্রী কার্সটেন লরিটজেন বলেছেন, পানামা পেপারসের ফাঁস হওয়া তথ্য সংগ্রহের জন্য তিনি এরইমধ্যে ১০ লাখ পাউন্ড পরিশোধ করেছেন।

তিনি জানান, পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র গত গ্রীষ্মে ডেনমার্ক সরকারকে এ প্রস্তাব দেয়।

ওই সূত্রটি এরইমধ্যে ডেনমার্ক সরকারকে কিছু নমুনা নথি সরবরাহ করেছে। সরবরাহকৃত ওই নথিগুলো পর্যালোচনার পর দেশটি নিশ্চিত হয় যে, এ নথিগুলো সঠিক ছিল। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পরই এ সংক্রান্ত চুক্তিতে আবদ্ধ হতে গোপন দেশটির পার্লামেন্টে প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতায় আসে ডেনমার্ক।
৩ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে দুনিয়ার প্রভাবশালী রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান এবং রাঘববোয়ালদের আর্থিক কেলেঙ্কারির তথ্য ফাঁস করে সাড়া ফেলে আলোচিত ‘পানামা পেপারস’। তবে পানামা পেপারস-এর মূল উৎসস্থল, পানামার আইনি প্রতিষ্ঠান মোস্যাক ফনসেকার পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, তারা হ্যাকিংয়ের স্বীকার হয়েছে।

প্রথম দফায় ফাঁস হওয়া এক কোটি ১৫ লাখ নথিতে দেখা গেছে, বিভিন্ন দেশের সাবেক ও বর্তমান ৭২ জন রাষ্ট্রপ্রধান তাদের নিজ দেশের সম্পদ লুণ্ঠনের সঙ্গে জড়িত। এখন পর্যন্ত এটিই বিশ্বের সর্ববৃহৎ নথি ফাঁসের ঘটনা। এ নিয়ে এক ধরনের সুনামি বয়ে গেছে বিশ্বের বহু দেশে। বিশেষ করে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন রাজনীতিকরা। এ ঘটনার জেরে পদত্যাগ করেছেন আইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সিগমুন্ডুর গুনলাউগসন। এর আগে তার পদত্যাগের দাবিতে দেশটির পার্লামেন্টের বাইরে বিক্ষোভ করেছেন প্রায় ১০ হাজার বিক্ষোভকারী। আর ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনসহ নথিতে নাম থাকা অন্য বিশ্বনেতারা।

পানামা পেপারস কেলেংকারি

ফাঁস হওয়া নথি অনুযায়ী, কর ফাঁকি বা আর্থিক কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক সুদানি প্রেসিডেন্ট আহমাদ আলি আল-মারগানি, মিসরের সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারক ও তার ছেলে আলা মোবারক, মরোক্কর রাজার ব্যক্তিগত সচিব মনির মাজিদি, ঘানার সাবেক প্রেসিডেন্ট জন আগিয়েকুম কুফুরের ছেলে জন আড্ডো কুফুর, আইভরি কোস্টের সাবেক প্রেসিডেন্ট লরেন্ট জিবাগবো’র সহযোগী জিন-ক্লড এন’ডা আমেশি, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমার ভাইপো ক্লাইভ খুলুবুসে জুমা, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের ছেলে কোজো আনান, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ, আর্জেন্টাইন ফুটবলার মেসি ও তার বাবা, বলিউডের বিগ বি অমিতাভ বচ্চন ও তার পুত্রবধু ঐশ্বরিয়া বচ্চন প্রমুখ।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে পানামা পেপারস-এর সরবরাহকারী জার্মান সংবাদপত্র ‘জুডডয়েচে সাইটুং’ এ ইস্যুতে নিজেদের অবস্থান যথার্থ মনে করে বলে জানিয়েছেন সংবাদপত্রটির সহ-প্রধান সম্পাদক ভুলফগ্যাং ক্রাখ। সোমবার তিনি রয়টার্সকে বলেছেন, জনস্বার্থেই তারা মোস্যাক ফনসেকার নথিগুলো ফাঁস করেছেন। তবে এসব তথ্য কিভাবে বেরিয়ে এলো তা না জানার দাবি করে পত্রিকাটি।

‘জুডডয়েচে সাইটুং’ এর সাংবাদিকরা মোস্যাক ফনসেকার মাধ্যমে অফশোর লেনদেন সংক্রান্ত লাখ লাখ নথি পাওয়ার পর তা ওয়াশিংটনভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্শিয়াম অফ ইনভেস্টিগেটিভ জার্নারিস্টকে দেয়। এসব নথি প্রকাশ হলে বেরিয়ে আসে, বিশ্বের ধনী আর ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা কোন কৌশলে কর ফাঁকি দিয়ে কীভাবে গোপন সম্পদের পাহাড় গড়েছেন।

জার্মানির মিউনিখ থেকে টেলিফোনে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সঙ্গে কথা বলেন ভুলফগ্যাং ক্রাখ। তিনি বলেন, ‍আমরা জানি না কীভাবে এই সূত্রটি তথ্য নিয়ে এসেছিল। মোস্যাক ফনসেকা দাবি করছে, তারা হ্যাকিংয়ের শিকার হয়েছেন, আমি জানি না, এটা সত্য কিনা। আমি এটা নিশ্চিত করতে পারব না।

জুডডয়েচে সাইটুং-এর সহ-প্রধান সম্পাদক বলেন, এসব নথির বিশ্বাসযোগ্যতা এবং জনস্বার্থের দিকটি থেকে তথ্যগুলোর উৎস কম গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বলেন, আমরা জানি না ওই উৎস আইন মেনে নাকি বেআইনিভাবে এসব নথি হাতে পেয়েছে। আমরা বলতে পারব না। আমাদের হাতে আসা তথ্য বিশ্বাসযোগ্য কি না এটাই ছিল প্রথম প্রশ্ন। এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক। আর দ্বিতীয় প্রশ্নটি ছিল, এটা কতটা প্রাসঙ্গিক যে আমরা তা প্রকাশ করতে পারি!

ক্র্যাখ বলেন, জুডডয়েচে হাজার হাজার নথির তথ্য যাচাই করে দেখেছে। এতে পানামা পেপারস সঠিক নাও হতে পারে এমন সন্দেহ বাতিল হয়ে যায়। যদি প্রশ্ন হয়, এসব নথি কি আসলেই ঠিক? হ্যাঁ, এগুলো আসলেই ঠিক। ‍এসবের কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরা প্রতিবেদন তৈরি করেছি।

যদি উৎসটি এসব তথ্য মোস্যাক ফনসেকা থেকে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে এনে থাকে তাহলে এ বিষয়ে তার কী প্রতিক্রিয়া হবে- রয়টার্সের এ প্রশ্নে ক্রাখ একে ‘বায়বীয় প্রশ্ন’ হিসেবে উল্লেখ করেন। এ সময় তিনি এডওয়ার্ড স্নোডেনের তথ্য ফাঁসের বিষয়টি তুলে ধরেন। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান।

/এমপি/