ভাঙল অর্ধশতাব্দীর অচলায়তন

694339-myanmar

অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময়ের অচলায়তন ভাঙল মিয়ানমার। ১৯৬২ সালের পর এবারই প্রথম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিয়েছেন মিয়ানমারের বেসামরিক সরকারের একজন প্রতিনিধি। বুধবার জাতিসংঘের ৭১তম সাধারণ অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন বিশ্বজুড়ে গণতান্ত্রিকতার সংগ্রামের কারণে পরিচিত হয়ে ওঠা নেত্রী, মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অং সান সু চি।

উল্লেখ্য, স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৪৮ সালেই জাতিসংঘে যোগ দেয় মিয়ানমার। ১৯৬১ সাল পর্যন্ত সেখানে ৪ দফায় নির্বাচন হয়। নির্বাচিত সরকারের প্রতিনিধিরাই তখন যোগ দিতেন জাতিসংঘ অধিবেশনে। ১৯৬২ সাল থেকে মিয়ানমারে চলা সামরিক শাসনের অবসান হয় ২০১১ সালে। পরবর্তী এই ৫ বছর ধরে চলেছে রাজনৈতিক সংস্কার। আর তা হয়েছে সামরিকতার ছায়াতলেই। ১৯৬১ সালের ৫৪ বছর পর তাই এবার প্রথম বেসামরিক প্রতিনিধি হিসেবে অধিবেশনে যোগ দেওয়ার ইতিহাস রচনা করলেন সু চি।   

অধিবেশনের বিতর্কে সু চি বলেন, ‘জাতিসংঘের শক্তি হলো সংগঠনটির বৈশ্বিক অবস্থান এবং ন্যায্যতা। যার প্রতিফলন দেখা যায় তার নীতিমালায় এবং আন্তর্জাতিক আইনের মূলমন্ত্রে। ত্রুটি এবং সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও জাতিসংঘ এখনও আমাদের আরও শান্তিপূর্ণ এবং সমৃদ্ধ বিশ্বের আশা বাঁচিয়ে রেখেছে।’  

মিয়ানমারের জাতিসংঘের যোগদানের সময়কালের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা লাভের পরপরই জাতিসংঘে যোগদান করে মিয়ানমার। যুদ্ধের থেকে বেরিয়ে এসে দেশ গড়ায় বিশ্বের মানুষের মনে নতুন আশা জন্ম নিয়েছিল। সেই সঙ্গে সাম্য, সমৃদ্ধি এবং ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনের লক্ষ্যে কাজ শুরু হয়।’ 

সু চি আরও বলেন, ‘মিয়ানমারের জন্য আবারও একবার সেই আশা জাগ্রত হয়েছে।’ তার দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি) নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জনমত লাভ করায় দেশটিতে নতুন করে রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে উঠার স্বপ্ন বোনা শুরু হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘ওই স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা জাতিসংঘের গঠনের সময়কালে তৈরি হওয়া স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষারই প্রতিধ্বনি।’   

রোহিঙ্গা প্রশ্নের দিকে ইঙ্গিত করে মিয়ানমারের নেতা বলেন, ‘আমরা সকল পক্ষের শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি টেকসই সমাধানের জন্য কাজ করছি। আমাদের সরকার উন্নয়নের লক্ষ্যে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।’ তিনি জানান, সাবেক জাতিসংঘ মহাসচিব কফি আনানকে প্রধান করে এসব কাজ তদারকির জন্য একটি কমিশন গঠন করা হয়েছে।

জঙ্গিবাদ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে সু চি সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থাকে জঙ্গিবাদের উত্থানের প্রধান কারণ বলে উল্লেখ করেন। জঙ্গিবাদ রুখতে জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে সঠিক দিক-নির্দেশনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। বিশেষত তরুণদের ভ্রান্ত মত দ্বারা বেশি প্রভাবিত হন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

সূত্র: ইউএন সেন্টার।

/এসএ/বিএ/