আশঙ্কার একদিনের মাথায় লক্ষ্যবস্তু হলো কাশ্মিরের সেনাঘাঁটি

ভারতীয় সেনা সদস্যসম্ভাব্য জঙ্গি হামলার ব্যাপারে সতর্কতা জারি করা হয়েছিল আগেই। তারপরও লক্ষ্যবস্তু হলো কাশ্মিরের সেনাক্যাম্প। ৫ অক্টোবর বুধবার মন্ত্রিপরিষদ কমিটির নিরাপত্তাবিষয়ক এক বৈঠকে সম্ভাব্য হামলার ব্যাপারে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল। বৈঠক-সূত্রকে উদ্ধৃত করে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছিল, শ’খানেক জঙ্গি নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে ভারতে প্রবেশ ও হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে ধারণা করছিলেন গোয়েন্দারা। সেই আশঙ্কার একদিনের মাথায় বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) সকালে হামলা হলো কাশ্মিরের সেনাঘাঁটিতে।
উল্লেখ্য, পাঠানকোটের সেনাঘাঁটিতে জঙ্গি হামলা এবং পরবর্তীতে হিজবুল নেতা বুরহান ওয়ানিকে কথিত এনকাউন্টারে হত্যার পর থেকেই ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা বাড়তে থাকে। সাম্প্রতিক উরি সেনাঘাঁটিতে জঙ্গি হামলার পর আবারও জয়েশ ই মোহাম্মদের সংশ্লিষ্টতার প্রসঙ্গ তুলে পাকিস্তানকে দায়ী করতে শুরু করে ভারত। পারস্পরিক দোষারোপ এবং এ নিয়ে আন্তর্জাতিক তৎপরতার এক পর্যায়ে ২৮ সেপ্টেম্বর (বুধবার) রাতে নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে ভারতের সেনারা সন্ত্রাসী ঘাঁটিগুলোতে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালানোর দাবি করে। ওই অভিযানে ৯ পাকিস্তানি সেনা ও ৩৫ থেকে ৪০ জঙ্গি নিহত হয়েছে বলে দাবি করা হয়। ঘটনার পর থেকে দুই সেনা সদস্য নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করে পাকিস্তান দাবি করে আসছে এটি সার্জিক্যাল স্ট্রাইক ছিল না, সীমান্ত সংঘর্ষ বা আন্তঃসীমান্ত গোলাগুলির ঘটনা ছিল।  আর এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে নতুন করে হওয়া তুমুল উত্তেজনার মধ্যেই কাশ্মিরের সেনাঘাঁটিতে দুইবার জঙ্গি হামলা হলো।
এনডিটিভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, সর্বশেষ বৃহস্পতিবারের জঙ্গি হামলার আগেরদিন বুধবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সভাপতিত্বে নিরাপত্তাবিষযক মন্ত্রিপরিষদ কমিটির একটি বৈঠক হয়। সেসময় জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সামনে একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। বৈঠকটিকে সামনে রেখেই গোয়েন্দা প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছিল।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, এই মুহূর্তে নিয়ন্ত্রণরেখায় হাজির হয়েছে অন্তত একশো জঙ্গি। ইতিমধ্যে কাশ্মিরে ঢুকে পড়েও থাকতে পারে বেশ কয়েক জন। পাকিস্তানি সেনারা নিয়ন্ত্রণরেখায় সেইসব জঙ্গিকে সুরক্ষা দিচ্ছে বলেও প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়।  প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করতে গিয়ে অজিত দোভাল আশঙ্কা প্রকাশ করেন— আগামী ছ’মাসে কাশ্মীরে উরি-বারামুলার ধাঁচে জঙ্গি হামলা আরও হতে পারে।
অজিতের সেই আশঙ্কাকে সত্য প্রমাণ করে বৃহস্পতিবার সকালে বারামুল্লা জেলার হাণ্ডওয়ারা এলাকার রাষ্ট্রীয় রাইফেলস (আরআর)-এর লাঙ্গাতে সেনাঘাঁটিতে হামলা চালানো হয়। ভারতীয় সেনাবাহিনী জানিয়েছে, জঙ্গিরা গুলি করতে করতে রাষ্ট্রীয় রাইফেলস-এর ওই ঘাঁটিতে প্রবেশের চেষ্টা চালায়। সেখানে উপস্থিত জওয়ানরা পাল্টা গুলি করতে তারা সেখান থেকে পালানোর চেষ্টা করে। পরে সেনা সদস্য এবং পুলিশের বিশেষ বাহিনী অভিযান চালিয়ে তাদের এনকাউন্টারে হত্যা করে। এর আগে গত রবিবার বারামুল্লার অপর এক আরআর-এর সেনাঘাঁটিতে প্রবেশের চেষ্টা চালায় জঙ্গিরা। গত পাঁচ দিনে বারামুল্লার সেনাঘাঁটিতে জঙ্গি হামলার এটি দ্বিতীয় চেষ্টা।

/এফইউ/বিএ/