শারদোৎসবে এবার অভূতপূর্ব নিরাপত্তা পশ্চিমবঙ্গে

কলকাতায় মানুষের ঢলএমনটা আগে কখনও হয়নি। কলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গের বাকি অংশের উৎসবের ভিড়ের ‘আপডেট’ পুলিশ দিচ্ছে সেনাবাহিনী, জঙ্গি হামলা দমনে বিশেষভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এনএসজি কমান্ডো বাহিনী, সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও বিভিন্ন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে। যাতে গড়বড় কিছু দেখলে এক সঙ্গে ঝাঁপাতে পারে সবাই। উৎসবের ভিড়ে নাশকতার আশঙ্কায় পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর তরফে এমন সংহত প্রচেষ্টার সাক্ষী আগে কখনও হয়নি এই রাজ্য।

বৃহস্পতিবার রাজ্যের সচিবালয় ‘নবান্ন’-তে রাজ্য পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল সুরজিৎ করপুরকায়স্থ দাবি করেছেন, ‘উৎসবের সময়ে রাজ্যে জঙ্গি হামলা হতে পারে, এমন নির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্য নেই। তবু নিরাপত্তা আটোসাঁটো করা হয়েছে।’ অর্থাৎ গোয়েন্দা-তথ্য বা ইনটেলিজেন্স ইনপুট থাকুক বা না থাকুক, পুলিশের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে এবং সেই জন্যই যতটা সম্ভব নিরাপত্তাকে নিশ্ছিদ্র করার ব্যবস্থা।

সুরজিৎবাবু বলেন, ‘অযথা আতঙ্কগ্রস্ত হবেন না। গুজবে কান দেবেন না। সমস্যা থাকলে পুলিশের কাছে অভিযোগ করুন।’ নবান্নে যখন ডিজি এ কথা বলছেন, তখন তার পাশে ছিলেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার।    

আজ, শুক্রবার মহাষষ্ঠী। পশ্চিমবঙ্গের সব চেয়ে বড় সামাজিক উৎসব, দুর্গাপুজোর বোধন বা সূচ‌না। ষষ্ঠীতে অবশ্য বহু বেসরকারি অফিস খোলা। তবে উৎসবের বাকি চার দিন- সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী ও দশমীতে জরুরি পরিষেবার জায়গা ছাড়া বাকি সব ছুটি। রাস্তায় রাস্তায় ভিড় শুরু হয়ে গিয়েছে এক সপ্তাহ আগে থেকেই। গত দুদিন কলকাতার রাস্তা ও পুজোর মণ্ডপে মণ্ডপে মানুষের ভিড় এবং যানজট দেখে বোঝার উপায় ছিল না যে, ছুটি এখনও পড়েনি।

পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, কলকাতায় বারোয়ারি পুজোর সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার হাজার। জেলাগুলির নথিবদ্ধ পুজোর সংখ্যা প্রায় ২২ হাজার। পুজোর ভিড় অবশ্য কলকাতাতেই সব চেয়ে বেশি হয়। জেলাগুলি ও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মানুষের সমাগম হয় মহানগরে।

শুরু হয়ে দুর্গাপূজা

উৎসবের সময়ে যানবাহন যতটা সম্ভব মসৃণভাবে চালাতে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখতে প্রায় গোটা পুলিশ বাহিনী রাস্তায় নামে এই ক’টা দিন। এটাই দস্তুর। তবে গত এক-দেড় দশক ধরে মাথায় রাখতে হচ্ছে সন্ত্রাসী হামলার কথাও। এই ভিড়ে একটা কিছু ঘটাতে পারলে ক্ষয়ক্ষতি অনেক বেশি হতে পারে, শুধু আতঙ্কেই পদপিষ্ট হতে পারেন বহু মানুষ। তাই, শুধু ভিড় আর ট্রাফিক সামলানোর মধ্যেই এখন পুলিশের দায়িত্ব শেষ হচ্ছে না।

তবে রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের একটি সূত্রের খবর, এ বার পুলিশের বাড়তি সতর্কতার কারণ তিনটি। এক, নব্য জেএমবি-র নেতৃস্থানীয় কারও কারও সহায়তায় এই রাজ্যে ইতোমধ্যেই জাল ছড়িয়েছে আইএস (ইসলামিক স্টেট)। যাদের হামলা করতে বেশি পরিকল্পনার দরকার নেই। লোন উলফ অ্যাটাক বা একজন তার কাছের এক শত্রুকে নিধন করলেও তাদের সার্থকতা। দুই, সপ্তাহ দুয়েক আগেই কলকাতা পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে খাগড়াগড় বিস্ফোরণ মামলায় অভিযুক্ত পাঁচ জেএমবি জঙ্গি এবং বাংলাদেশের মোস্ট ওয়ান্টেড আনোয়ার হোসেন ফারুক ওরফে জামাই ফারুক। তাই, জেএমবি বদলা নিতে পারে, এই আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তিন, বাংলাদেশের শোলাকিয়ায় ঈদের দিনও সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। আগে ভাবা হত, উৎসবের সময়ে জঙ্গি হামলা হবে না, কিন্তু এখন সেই ধারণা ভেঙে গিয়েছে। আইএসের দাপট শুরু হওয়ার পর আরও বেশি করে।

এর আগে ২০০৮ সালে শারদোৎসবে বিশেষ সতর্কতা নিয়েছিল কলকাতা পুলিশ। তখন জানা গিয়েছিল, দেশীয় জঙ্গি সংগঠন ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন (আইএম)-এর নজর রয়েছে কলকাতার ওপর। সে বার সাধারণ মানুষদের সংগঠিত করে, তাদের কাছ থেকে তথ্য পেয়ে বিভিন্ন তল্লাটে সন্দেহজনক গতিবিধি ও কার্যকলাপের ওপর নজর রেখেছিল পুলিশ।

তবে সেনাবাহিনী ও কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীকে পুজোর ভিড় বিষয়ে তথ্য কলকাতা ও রাজ্য পুলিশ দিচ্ছে, সেটা এ বারই প্রথম। সতর্কতার মাত্রাটা বোঝা যায় এখানেই।

/এএ/