কাশ্মিরের সরকারি ভবনে চলছে তৃতীয় দিনের অভিযান, দুই জঙ্গি নিহত

তৃতীয় দিনের মতো জঙ্গিদের দখলে রয়েছে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের সেই সরকারি ভবন। একে জঙ্গিমুক্ত করতে চলছে অভিযান। সে দেশের সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া খবরটি নিশ্চিত করেছে। নিরাপত্তা বাহিনীর কমান্ডো অভিযানে এইরমধ্যে ২ জঙ্গি নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী।  ইন্ডিয়া টুডের খবরে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার এক জঙ্গি নিহত হওয়ার পর নিরাপত্তা বাহিনী সূত্রে বুধবার আরেক জঙ্গির নিহত হওয়ার খবর পেয়েছেন তারা।

noname

উল্লেখ্য, ফেব্রুয়ারিতে এক সরকারি ভবন নিজেদের দখলে নিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর ৫ সদস্য এবং এক বেসামরিক ভারতীয়কে হত্যা করেছিল জঙ্গিরা। গত সোমবার সেই সরকারি ভবন আবারও দখলে নেয় জঙ্গিরা। নজর এড়াতে প্রথমে বহুতল ভবনটিতে আগুন ধরিয়ে দেয় তারা। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, সোমবার সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ ভূস্বর্গের পাম্পোরের সেই সরকারি প্রতিষ্ঠান 'উদ্যোক্তা উন্নয়ন সংস্থা'য় হামলা চালায় বন্দুকধারীরা। প্রতিষ্ঠানটিতে ঢুকে পড়ে ৩ অস্ত্রধারী। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার খবরে বলা হয়, ভবনের ভেতরে অন্তত ২ জঙ্গি লুকিয়ে আছে বলে নিজস্ব সূত্রে জানতে পেরেছেন তারা। আর ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়, পাম্পোরে উদ্যোক্তা  উন্নয়ন সংস্থার সরকারি ভবনটিতে গোলাগুলির শব্দ শোনার পর ভবনটিকে ঘিরে ফেলে সামরিক ও আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যরা। তবে উর্ধ্বতন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে মঙ্গলবার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবরে বলা হয়, ‘জঙ্গিবিরোধী অভিযান বন্ধ রাখার পর তা আবারও শুরু করা হয়েছে। অন্ধকারে জঙ্গিরা যেন পালিয়ে যেতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে সার্চ লাইট ব্যবহার করা হয়েছে।’

এবার অভিযানের তৃতীয় দিন বুধবারে এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পাম্পোরে কমান্ডো অভিযান চালানো হচ্ছে। সেনাবাহিনীর এলিট কমান্ডোবাহিনী ভবনটিকে জঙ্গিমুক্ত করতে অভিযান পরিচালনা করছে।

noname

উর্ধ্বতন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে গতকাল মঙ্গলবার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবরে বলা হয়েছিল, ‘জঙ্গিবিরোধী অভিযান বন্ধ রাখার পর তা আবারও শুরু করা হয়েছে। অন্ধকারে জঙ্গিরা যেন পালিয়ে যেতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে সার্চ লাইট ব্যবহার করা হয়েছে।’ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস গতকাল জানিয়েছিল, ‘ডোর টু ডোর সার্চ অপারেশন’ চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনী। সতর্কতার সঙ্গে এই অপারেশন চালানো হচ্ছে যেন ভবনের কোনও কক্ষে কেউ আটকা পড়ে থাকলে তার কোনও ক্ষতি না হয়। একজন উর্ধ্বতন নিরাপত্তা কর্মকর্তার বরাত দিয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বলছে, ‘৬০টি কক্ষে অভিযান চালাতে খানিকটা সময় লাগারই কথা। বোমা কিংবা বিধ্বংসী কোনও বিস্ফোরক থাকার আশঙ্কা রয়েছে ওই ভবনের কক্ষগুলোতে। আমরা খুবই সতর্কতার সঙ্গে অভিযান পরিচালনা করেতে চাইছি যেন আমাদের দিকে কোনও ধরনের হতাহতের ঘটনা না ঘটে। সুতরাং, অভিযানে নিয়োজিত বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে কাজ করছে।’ এরআগে দ্য হিন্দুর খবরে বলা হয়, মঙ্গলবার সকালেও সেখানে থেমে থেমে গুলির শব্দ শোনা গেছে। নিরাপত্তা বাহিনী দ্বিতীয় দিনের মতো তাদের অভিযান অব্যাহত রেখেছে। তবে সেখানে ঠিক কতোজন জঙ্গি রয়েছেন,বুধবারে এসেও তা নিশ্চিত করে বলতে পারেনি কোনও সংবাদমাধ্যম।

noname

বুধবার টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, অভিযানের তৃতীয় দিনে ভারতের নিরাপত্তাবাহিনী মর্টার ও রকেট লঞ্চার দিয়ে হামলা চালিয়েছে। দুই জঙ্গির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে।

উদ্যোক্তা উন্নয়ন সংস্থা নামের এই প্রতিষ্ঠানটিতেই গত ফেব্রুয়ারি মাসে হামলা চালিয়েছিল ৩ অস্ত্রধারী। ৪৮ ঘণ্টা লড়াইয়ে সেই তিন জঙ্গিকে হত্যার মধ্য দিয়ে একে জঙ্গিমুক্ত করা হয়েছিল। ওই ঘটনায ৫ জন নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট, একজন বেসামরিক নাগরিকও নিহত হয়েছিলেন।

উল্লেখ্য, পাঠানকোটের সেনাঘাঁটিতে জঙ্গি হামলা এবং পরবর্তীতে হিজবুল নেতা বুরহান ওয়ানিকে কথিত এনকাউন্টারে হত্যার পর থেকেই ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা বাড়তে থাকে। পাঠানকোটের জঙ্গি হামলায় ‘পাকিস্তানি মদদপুষ্ট’ জঙ্গি সংগঠন জয়েশ-ই-মোহাম্মদ হামলা চালিয়েছে উল্লেখ করে ইসলামাবাদকে দায়ী করে ভারত। বিপরীতে পাকিস্তান কাশ্মিরের মানবাধিকার হরণের প্রসঙ্গ নিয়ে সরব হয়ে ওঠে। এক পর্যায়ে সাম্প্রতিক উরি সেনাঘাঁটিতে জঙ্গি হামলার পর আবারও জয়েশ-ই-মোহাম্মদের সংশ্লিষ্টতার প্রসঙ্গ তুলে পাকিস্তানকে দায়ী করতে শুরু করে ভারত।

noname

পারস্পরিক দোষারোপ এবং এ নিয়ে আন্তর্জাতিক তৎপরতার এক পর্যায়ে বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) (২৮ সেপ্টেম্বর) রাতে নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে ভারতের সেনারা সন্ত্রাসী ঘাঁটিগুলোতে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালানোর দাবি করে। ওই অভিযানে ৯ পাকিস্তানি সেনা ও ৩৫ থেকে ৪০ জঙ্গি নিহত হয়েছে বলে দাবি করা হয়। ঘটনার পর থেকে দুই সেনা সদস্য নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করে পাকিস্তান দাবি করে আসছে এটি সার্জিক্যাল স্ট্রাইক ছিল না, সীমান্ত সংঘর্ষ বা আন্তঃসীমান্ত গোলাগুলির ঘটনা ছিল। ঘটনাকে ভারতের দিক থেকে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ প্রমাণ করে তাদের সামরিক শক্তি জানান দেওয়ার চেষ্টা করা হলেও পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে ঘটনার পরপরই বলা হয়, ‘সন্দেহমূলক জঙ্গি ঘাঁটিগুলো লক্ষ্য করে সুনির্দিষ্ট হামলা চালানোর দাবিটি একটি ভ্রম। মিথ্যে প্রভাব তৈরির জন্য ভারতীয়রা ইচ্ছে করে এমনটা করছে। আন্তঃ সীমান্ত গোলাগুলিকে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে হামলা উল্লেখ করে ধোঁকা দিচ্ছে ভারত।’

noname

এই প্রেক্ষাপটে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ এখন যতোটা না জঙ্গিবিরোধী অভিযানের সাফল্য-ব্যর্থতার প্রশ্ন, তার থেকেও বেশি করে ভারত ও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্ষমতা-আত্মমর্যাদা আর দম্ভের প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে রাজনীতি বিশ্লেষকরা আগেই আশঙ্কা জানিয়েছিলেন, ভারত কথিত এই সার্জিক্যাল স্ট্রাইক পাকিস্তানের জঙ্গিদের আরও বেশি প্রতিশোধপরায়ণ করে তুলবে। সেই আশঙ্কাকে সত্যি প্রমাণ করে গত কয়েকদিনে সেনাঘাঁটিসহ বিভিন্ন স্থানে জঙ্গি হামলার শিকার হয় ভারত।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়া টুডে, দ্য হিন্দু, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, এএফপি, রয়টার্স, আলজাজিরা।

/বিএ/