‘সিরিয়া ইস্যুতে যে কোনও সময় যুদ্ধে জড়াতে পারে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া’

nonameসিরিয়ার বিদ্যমান সংঘাত পৃথিবীকে আরেকটি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এই প্রক্সি যুদ্ধ অব্যাহত থাকলে যে কোনও সময় যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া পরস্পরের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে। বুধবার তুরস্কের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন দেশটির উপ প্রধানমন্ত্রী নুমান কুরতুলমুস। তার মতে, রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র পরস্পরের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে শেষ পর্যন্ত তা দুনিয়াজুড়ে ছড়িয়ে পড়বে।

তুরস্কের উপ প্রধানমন্ত্রী বলেন, সিরিয়ার এই সংঘাত বৃহৎ পরিসরে আঞ্চলিক বা বিশ্বযুদ্ধের সূচনা করতে পারে।

উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও তুরস্কসহ পশ্চিমা দেশগুলো সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে একজন অত্যাচারী স্বৈরশাসক আখ্যায়িত করে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে আগ্রহী। পক্ষান্তরে প্রেসিডেন্ট আসাদের হয়ে সিরিয়ায় আসাদবিরোধী বিদ্রোহীদের ওপর বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে রাশিয়া। গত ৪৮ ঘণ্টায় সিরিয়ার বিদ্রোহী অধ্যুষিত আলেপ্পোতে রাশিয়ার বিমান হামলায় নিহত হন অন্তত ৫৫ জন। নিহতদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক।

এই সিরিয়া ইস্যুকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার পরস্পরবিরোধী অবস্থান আরও প্রকট হয়ে উঠছে। রাশিয়া যে কোনও মূল্যে আসাদকে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে চায়। আর যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান এর বিপরীত মেরুতে হওয়ায় বিষয়টি জটিল রূপ ধারণ করেছে।

২০১১ সালে শুরু হওয়া সিরিয়ার দীর্ঘ গৃহযুদ্ধে দেশটির সর্বোচ্চ সংখ্যক শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে সিরিয়ার প্রতিবেশী দেশ তুরস্ক। এ মুহূর্তে সিরিয়ার মাটিতে আইএসবিরোধী অভিযান পরিচালনা করছে দেশটি। একইসঙ্গে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে একজন রক্তপিপাসু শাসক মনে করে আঙ্কারা। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ানের ভাষায়, বিবিরোধীদের ওপর আসাদের বর্বরতা তাকে রক্তখেকো শাসকদের পর্যায়ে নিয়ে গেছে।'

noname

এদিকে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আসাদকে উৎখাতের বিষয়ে একমত হলেও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের উষ্ণতা হ্রাস পেয়েছে তুরস্কের। ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের পর ন্যাটোভুক্ত দেশটি এখন ঝুঁকছে রাশিয়ার দিকে। আর এ রাশিয়ার ওপর ভর করেই এখনও টিকে আছেন আসাদ। অর্থাৎ, এরইমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক সমীকরণের বাইরে এক জটিল বৈশ্বিক সমীকরণে ঘুরপাক খাচ্ছে সিরিয়ার চলমান সংঘাত, সহিংসতা।

সোমবার সাগরের তলদেশ দিয়ে গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণের বড় ধরনের একটি প্রকল্পের বিষয়ে তুরস্কের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে রাশিয়া। তুরস্ক সফররত রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান এ চুক্তি সই করেন। পুতিনের এই সফরে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সম্পূর্ণ স্বাভাবিক করার পাশাপাশি সিরিয়া ইস্যুতে একসঙ্গে কাজ করারও ইঙ্গিত দিয়েছে দুই দেশ।

ইস্তানবুলের অটোম্যান আমলের একটি প্রাসাদে সফররত রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে  বৈঠক করেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান। বৈঠকের পর এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন দুই নেতা।

পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে সিরিয়ায় তুরস্কের সামরিক অভিযান নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন এরদোয়ান। তারা উভয়েই সিরিয়ার আলেপ্পো শহরে ত্রাণ সরবরাহের গুরুত্বের বিষয়ে একমত হয়েছেন। তবে সিরিয়ার চলমান সংকটে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার মতোই পরস্পরবিরোধী অবস্থানে রয়েছে তুরস্ক। সূত্র: আনাদোলু এজেন্সি, রয়টার্স, দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া।

/এমপি/