৩০ বছর ধরে বস্তির শিশুদের শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছেন যিনি (ভিডিও)

noname
পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামবাদের একটি অভিজাত জেলার একটি পার্কের এক কিনারায় দরিদ্রদের পাঠদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। একজন বয়স্ক উদ্ধারকর্মী এই আউটডোর স্কুলটি পরিচালনা করছেন। তার এই প্রচেষ্টার ফলে নগরীর দরিদ্র জনগোষ্ঠী মাঝে আশার আলো সঞ্চিত হয়েছে। এই মহৎপ্রাণ মানুষটির নাম মুহাম্মাদ আইয়ুব। তিনি তার অফিস থেকে সাইকেলে করে এই অস্থায়ী স্কুলে শিশুদের পাঠদান করতে আসেন। বিগত ৩০ বছর ধরে তিনি এভাবেই আশপাশের বস্তির শিশুদের অবৈতনিক শিক্ষা প্রদান করছেন। তিনি স্থানীয়দের কাছে ‘মাস্টার’ নামে সুপরিচিত। শুক্রবার মুহাম্মাদ আইয়ুব ও তার স্কুল নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে পাকিস্তানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডন।

পাকিস্তানে সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিতের মতো তহবিল নেই। দেশটিতে ২ কোটি ৪০ লাখ শিশু স্কুলে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায় না। এই হতভাগ্য শিশুদের একটি সুন্দর ভবিষ্যত উপহার দেওয়ার আশা নিয়ে এগিয়ে চলা ধূসর শশ্রুমণ্ডিত আইয়ুব (৫৮) স্থানীয়দের কাছে একজন হিরো। খোলা আকাশের নিচে মুহাম্মাদ আইয়ুব-এর স্কুলটিতে কোনও দেয়াল, ছাদ বা চেয়ার নেই। সূর্যের আলোই একমাত্র আলোর উৎস।

ফরহাত আব্বাস নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমি অশিক্ষার অন্ধকার থেকে শিক্ষার আলোতে আসি। আমার নয় বছর বয়সে মাস্টার আইয়ুবের রূপ নিয়ে একজন ফেরেশতা আমাকে অশিক্ষার অন্ধকার থেকে উদ্ধার করেন। আমি তখন কাঠ কুড়াতাম।’ তিনি এখন ২০ বছরের তরুণ।

noname

ফরহাত আব্বাস এখন স্থানীয় একটি বিশ্ববিদ্যায়ে স্নাতক শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। পাশাপাশি তিনি আইয়ুবের সহকারী হিসেবে শিশুদের পাঠদান করছেন। এই স্কুলে লেখাপড়া করা কয়েক হাজার শিশুর জীবনের গল্পও একই রকম। এদের অনেকে পরে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে সরকারি চাকরি পেয়েছেন। অনেকে ব্যবসা করছেন। যা তাদের কাছে এক সময়ে দুঃসাধ্য ছিল।

১৯৮৬ সালে মাস্টার আইয়ুবের স্কুল শুরু হয়। তখন তিনি কৃষি প্রধান মান্দি বাহাউদ্দিন শহর থেকে নতুন রাজধানীতে স্থায়ীভাবে চলে আসেন। একদিন তিনি এক মার্কেটে একটি ছেলেকে গাড়ি ধুতে দেখে তার কাছে গিয়ে তাকে স্কুলে যেতে বললেন। শিশুটি তার সেই অস্থায়ী স্কুলে এলে তিনি তাকে একটি নেট বই, একটি বই, একটি পেন্সিল ও একটি রবার দেন। এই শিশুটিকে দিয়েই তিনি শিক্ষকতা শুরু করেন।

আইয়ুব বলেন, ‘পরের দিন শিশুটি তার সঙ্গে আরেকজন শিশুকে নিয়ে স্কুলে এলো। এভাবে এক সপ্তাহের মধ্যে স্কুলে ৫০ জন ছাত্র হয়ে গেল।’

noname

হিনা শাহবাজ (১৭) বলেন, তিনি তার বাবা-মার সঙ্গে দুই বছর আগে ইসলামাবাদ আসেন। তিনি আইয়ুবের ক্লাশে আসতে শুরু করেন। আইয়ুব স্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কয়েক বছরের মধ্য তাকে একটি নামি স্কুলে ভর্তি হওয়ার ব্যবস্থা করে দেন।

হিনা শাহবাজ (১৭) বলেন, ‘আমি বিজ্ঞান পছন্দ করি এবং আমি একজন প্রকৌশলী হতে চাই।’

/এমপি/